
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় বইয়ের মার্কেট নীলক্ষেতে অগ্নিকান্ডের দুই বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ডের পর তাৎক্ষণিকভাবে মার্কেটের নিরাপত্তা নিয়ে মার্কেট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালন করলেও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে এখনো বাস্তবায়ন হয়নি ফায়ার সার্ভিসের দেয়া অনেক সুপারিশমালা।
২০১৭ সালে প্রথমবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এই বইয়ের মার্কেটে। চার বছর পার না হতেই ফের ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আরেক দফা অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে এই মার্কেটের প্রায় পচিশটিরও বেশি দোকান পুড়ে যায়। আগুন লাগার পর দ্রুতই ছড়িয়ে যায় তবে এতে কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ক্ষতিগ্রস্থ হন ব্যবসায়ীরা। পুড়ে যায় হাজার হাজার বই। আগুন লাগার পর অনেক বই বিক্রেতা দোকান থেকে তাদের কিছু বই বের করে নিয়ে আসতে পারলেও অধিকাংশই পারেননি।আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এরপর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে ২০টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। তারমধ্যে একটি ছিল প্রতিটি গলিতে ফায়ার এক্সটিংগুইসার রাখা। মার্কেটটিতে গিয়ে দেখা গেছে, এই নির্দেশনা মেনে সেটি করা হয়েছে। তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশই বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে মার্কেটটি এখনো সম্পূর্ণভাবে ব্যবসায় করার জন্য এবং ক্রেতাদের চলাফেরার জন্য নিরাপদ মনে করেননা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নীলক্ষেতের ইসলামিয়া মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন বলেন, আমরা নির্দেশনার বেশিরভাগই বাস্তবায়ন করেছি। তিন মাস পরপর ফায়ার সার্ভিসের টিম এসে সবকিছু দেখে যাচ্ছে। আমাদের কর্মচারীদেরও আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনায় প্রতিটি গলিতে বের হওয়ার জন্য ‘পথ নির্দেশনা’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সেটি দেখা যাচ্ছে না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নীলক্ষেত থেকে বের হওয়ার ২৬টি পথ রয়েছে। সেখানে আলাদা করে নির্দেশনা দিতে হবে বলে মনে হয় না। মার্কেটের নিচে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড পানির ট্যাংক’ ও ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবস্থা’র নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এই মার্কেটে এগুলো করা অনেক সময়সাপেক্ষ বিষয়। কিছু বাস্তবতার কারণে আসলে এগুলো করা সম্ভব হয়নি।’ মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে কথা হয় ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলছেন, আগের তুলনায় এখন তারা অনেক বেশি সচেতন। কোনও ধরনের দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে তারা সতর্ক আছেন।
২০২২ সালে এই অগ্নিকাণ্ডে পর বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলোকে সহায়তার আশ্বাস দিলেও ব্যবসায়ীরা তা পাননি বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে হতাশাও প্রকাশ করেন কেউ কেউ। জানা যায় প্রাথমিক অবস্থায় ব্যবসায়ীদের কয়েকজনকে আংশিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ীরায় পাননি কোন প্রকার আর্থিক সহযোগীতা।
দেশের সবচেয়ে বড় বইয়ের বাজার হিসেবে পরিচিত নীলক্ষেত বই মার্কেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সহ ঢাকার ভিবিন্ন স্থান থেকে ছাত্র ছাত্রীরা তাদের প্রয়োজনীয় বই কিনে থাকে। তাছাড়া দেশের ভিবিন্ন প্রান্ত থেকে বই পোকাড়া তাদের পছন্দের বইটি সংগ্রহ করতে এসে থাকেন নীলক্ষেত বইয়ের মার্কেটে। এই মার্কেটটিতে সব সময়ই শিক্ষার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
