এমপি আনারের লাশের খোঁজে রুদ্ধশ্বাস অভিযান

লেখক: Dhaka Bangladesh
প্রকাশ: ১ বছর আগে

এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার খুনে জড়িত ভাড়াটে কসাই জিহাদকে নিয়ে কলকাতার সঞ্জীভা গার্ডেন্সের সেই ফ্লাটে গেলেন ঢাকার গোয়েন্দারা।

এ সময় ঢাকায় গ্রেফতারকৃত তিনজনের সঙ্গে ভিডিও কলে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয় জিহাদকে। ভিডিওকলে চারজনই এ সময় খুনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে কথা বলেন গোয়েন্দাদের সামনে। ভিডিও কলে ফ্ল্যাটের হত্যাকাণ্ডের স্থান, মাংস থেকে হাড় আলাদা করার জায়গা ও বেরিয়ে যাওয়ার স্থানসহ প্রত্যেকটি স্থানের বর্ণনা দেন আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া।

প্রায় একই কথা জানান কসাই জিহাদও। ভিডিও কলে তাদের কথোপকথনের সময় উপস্থিত ছিলেন ভারতে অবস্থানরত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তিন সদস্যের দল ও কলকাতা পুলিশের কর্মকতারা। গতকালও অভিযান চালানো হয়েছে লাশের সন্ধানে। ময়লার ভাগাড়, ডোবা এবং খাল- কোথাও মেলেনি লাশের খি ত অংশ।

কলকাতায় গিয়ে তদন্ত করার পাশাপাশি অভিযুক্ত জিহাদকে গতকাল চার ঘণ্টা জেরার পর ঢাকার গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশিদ জানান, পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছিল এমপি আনোয়ারুল আজীমকে। যেভাবে খুন করে তার দেহ লোপাট করা হয়েছে, তা ‘অভাবনীয়’।

তিনি বলেছেন, একটি সভ্য সমাজে এত নিষ্ঠুর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। ঢাকার তদন্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার জিহাদ হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে দেহাংশ ফেলা পর্যন্ত সবকিছু জানে। এজন্য তার সঙ্গে ভিডিও কলে কথোপকথন হয়েছে ঢাকায় গ্রেফতার তিন আসামির। উভয়েই নতুন চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য দিয়েছেন। সেগুলো যাচাইবাছাই চলছে। এ ছাড়া জিহাদকে টানা চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

সূত্র জানান, ভারতীয় পুলিশের উপস্থিতিতে কসাই জিহাদকে নিয়ে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেন্সের ওই ফ্ল্যাটে যান ডিবির প্রতিনিধি দল। আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহ কীভাবে খণ্ড খণ্ড করা হয় তার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন কসাই জিহাদ। এ সময় ডিবির প্রতিনিধি দল কসাই জিহাদকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জিহাদকে ওই ফ্ল্যাটে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখালে তিনি সবকিছু স্বীকার করেন।

অপহরণ মামলার তদন্ত ও লাশ উদ্ধারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত দল রবিবার সকালে কলকাতায় যান। প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন ওয়ারী বিভাগের ডিসি মো. আবদুল আহাদ ও এডিসি শাহীদুর রহমান। জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এমপি আনারের হত্যা রহস্যের জট খুলতে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হওয়া এই খুনের অন্যতম আসামি জিহাদ হাওলাদারকে নিয়ে টিআই প্যারেড করানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে জিহাদকে নিয়ে পুরো খুনের ঘটনাটি মহড়া করে দেখায় জিহাদ।

এ সময় সঞ্জীভা গার্ডেন্স থেকে ঢাকায় রিমান্ডে থাকা কিলার শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ আমানকে ভিডিও কলে যুক্ত করা হয়। কীভাবে খুন করা হয়েছে, লাশ কোথায় টুকরো টুকরো করা হয়েছে তা ভিডিও কলে বিস্তারিত দেখান শিমুল ভূঁইয়া। খুনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আমরা পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তদন্তে কী পেয়েছি, তারা কী পেয়েছে, সেই তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। এ ছাড়া কসাই জিহাদ হাওলাদারের সঙ্গেও কথা বলেছি।’ ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এমন একটি ঘটনা আমি মেনে নিতে পারছি না। একটি সভ্য সমাজে এত নিষ্ঠুর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। আমাদের প্রাণবন্ত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা করে তার লাশ টুকরো করে ঠান্ডা মাথায় গুম করা হয়।

এমপি আনারের দেহাংশ উদ্ধার ব্যাপারে ডিবিপ্রধান বলেন, লাশ উদ্ধারের চেষ্টায় ভারতীয় পুলিশ যথেষ্ট কাজ করছে। আমরা তাদের পাশে রয়েছি। তাদের যে আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা, তাতে আমাদের আশা, অল্প সময়ের মধ্যেই লাশ উদ্ধার করতে পারব। হারুন অর রশিদ আরও বলেন, যে আলিশান বাড়িতে হত্যা করা হয়েছিল, আমার মনে হয় এখনো সেখানে ঘাতকদের অট্টহাসি আর এমপির কান্না শুনতে পাচ্ছি। এখানে ঘাতকরা অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনামাফিক কাজ করেছে এবং এই অপরাধকে ভিন্ন ধারায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের দুই দেশের পুলিশ কাজ করছে। আমরা অবশ্যই সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করব এবং তাদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাব। এই খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া একমাত্র নারী সিলিস্তি রহমানের ভূমিকা নিয়ে ডিবিপ্রধান জানান, আমরা ভারতীয় অংশে তদন্ত করে দেশে ফিরে তারপর সিলিস্তি রহমানের সঙ্গে কথা বলব। যে ফ্লাটে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, সেখানে তিনি ছিলেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে তার কী ভূমিকা ছিল, সেটি কথা বলেই জানা যাবে। হত্যায় কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল সে প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, এগুলো নিয়ে কাজ চলছে। আমরা পরে জানিয়ে দেব।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন...

  • এমপি আনার
  • কসাই জিহাদ
  • রুদ্ধশ্বাস অভিযান
  • লাশের খোঁজ