ছেলে সেলিমের মৃতদেহের সামনে মাটিতে লুটিয়ে কাঁদছিলেন মা সেলিনা বেগম। সান্ত্বনা দিতে আসা কেউ-ই তাঁকে মাটি থেকে তুলতে পারছিলেন না। বাবা সুলতান তালুকদারও নির্বাক। সেলিম তালুকদার রমজান (২৬) ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার সুলতান তালুকদারের ছেলে।
কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে গত ১৮ জুলাই ছাত্র আন্দোলনের সময় সেলিম গুলিতে আহত হন। ধানমণ্ডির পপুলার হাসপাতালে ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গত বৃহস্পতিবার মারা যান তিনি। গতকাল শুক্রবার সকালে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সেলিমের চাচা জানান, ঢাকার বাড্ডা লিংক রোডে ভাড়া বাসায় থাকতেন তাঁরা।
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন সেলিম। পড়াশোনার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি করতেন। ঘটনার দিন অফিসে যাওয়ার সময় ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের এলাকায় মাথায়, বুকে, পিঠে ও ফুসফুসে গুলি লাগে তাঁর। তিন বোনের একমাত্র ভাই ছিলেন সেলিম।
মাত্র আট মাস আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তাঁর বাবা সুলতান তালুকদার পেশায় একজন গাড়িচালক। ৬০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি মাঝেমধ্যে গাড়ি চালান। মূলত ছেলের উপার্জনেই চলত তাঁদের সংসার। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার বাসার সামনে সেলিমের প্রথম জানাজার পর লাশ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ি।
তখন মৃতদেহ ঘিরে কান্নায় ভেঙে পড়ে স্বজন ও প্রতিবেশীরা। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে সেলিমের মা মাটিতে গড়াগড়ি করে বিলাপ করছিলেন। চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমার ছেলে তো আন্দোলনে যায় নাই। নির্দোষ এই ছেলেটাকে কেন গুলি করল?’ নিহতের পরিবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে সেলিমের বাবার চাচাতো ভাই দুলাল তালুকদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ভাতিজা অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিল। ওরা ঢাকাতেই বড় হয়েছে। সেখানেই পড়ালেখা করে চাকরি করছিল।’