স্টাফ রিপোর্টারঃ সরকারী স্টাফ কোয়ার্টারের জমি দখল করে মসজিদ নির্মাণ করে বাণিজ্য করার অভিযোগ একজন গণপূর্তের টাইপিষ্ট কর্মচারী বিরুদ্ধে উঠলেও তিনি তার স্থানে অনড় রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, মসজিদের টাকায় তিনি ৮০ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন ফ্ল্যাট। নিয়মনীতি তোয়াক্ক না করেই সরকারী জায়গায় গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে লুটে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। নাম তার সুলতান আহমেদ। তিনি ওই মসজিদ কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক। সরকারী কলোনীবাসী এ নিয়ে দুদক চেয়ারম্যান ও প্রধান প্রকৌশলী গণপূর্ত অধিদপ্তরে আলাদা দুইটি অভিযোগও দেন। ওই অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলোনীবাসীর নামাজের জন্য কোয়ার্টারের অভ্যন্তরে একটি মসজিদ আছে। মসজিদটি গণপূর্ত বিভাগের সরকারী জায়গায় নির্মিত। মসজিদটি পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমেদ। দীর্ঘ আঠারো বছর একই পদে থেকে মসজিদের হিসাব-নিকাশের বিভিন্ন গড়মিল দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে সুলতান আহমেদ। উল্লেখ্য, এলাকায় তিনি উক্ত মসজিদটি ওয়াকফ্ এর জায়গা দাবী করে বাহিরের লোকের নিকট থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে সুলতান আহমেদ প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে গণপুর্ত বিভাগের সরকারী জায়গায় ৭/৮ টি দোকান নির্মান করেন। পাশাপাশি ০৭ নং বিল্ডিং এর পূর্ব পাশে মসজিদের ইমামের জন্য পাঁচ কাঠা জায়গার মধ্যে বাড়ী করে দিয়েছে ও ১৫ লক্ষ টাকা অগ্রিম নিয়ে এবং পশ্চিম পাশে ওই মসজিদের মুয়াজ্জিনের জন্য অগ্রিম ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে তিন কাঠা জায়গার মধ্যে বাড়ী নির্মাণ করে দিয়েছেন মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক দুর্নীতিবাজ সুলতান আহমেদ। উক্ত মসজিদের ইমাম এর বাসায় অবৈধভাবে গ্যাস ও ওয়াসার পানি লাইন টেনে দেন। এছাড়াও ইমাম ও মুয়াজ্জিনের কাছ থেকে প্রতিমাসে বিনা রশিদে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের বিল নেন সুলতান আহমেদ। জানা গেছে, সুলতান আহমেদ গর্ণপূর্ত ০২ ইডেন বিল্ডিং এ টাইপিস্ট হিসাবে কর্মরত। সম্প্রতি ওই মসজিদের সাধারণ সম্পাদক দুর্নীতিবাজ সুলতান আহমেদ মসজিদের টাকা মেরে ৮০ লক্ষ টাকা দিয়ে ৫৩৮/সি (৮ম তলা) খিলগাঁও এলাকায় একটি বিলাশবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন। ডেমরা অঞ্চলে পরিবারের অন্য লোকের নামে ২০ কাঠা জমি ক্রয় করেছেন। যাহার মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। এছাড়াও মসজিদের নামে টাকা তুলে দুর্নীতিবাজ সুলতান আহমেদ তার নিজ গ্রাম চৌদ্দগ্রাম এলাকায় নামে-বেনামে কয়েক বিঘা জমি ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারী নীতিমালা অমান্য করে খিলগাঁও গভঃ স্টাফ কোয়ার্টারকে নিজস্ব বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে ব্যবহার করেছেন উক্ত গণপূর্ত অফিসের টাইপিষ্ট দুর্নীতিবাজ সুলতান আহমেদ। গণপূর্তের জায়গায় আয় করতে গড়ে তুলেছেন কয়েকটি দোকান ঘর। মসজিদের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন নিজের নামে। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি দেখা করে সব বলবেন বলে এই প্রতিবেদকে জানান। এমনকি এগুলো নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছে তা তিনি নিজেই স্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের বিষয়ে তিনি দেখা করা ছাড়া কোন কথাই বলতে চান না। অভিযোগ রয়েছে, তিনি দেখা করে সাংবাদিকদেরকে হাতে পায়ে ধরে মাফ চেয়ে নেন। তবে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অনুসন্ধান চরছে, বিস্তারিত আগামী সংখ্যায়।
কি আছে গণপূর্তের প্রজ্ঞাপনে ?
২০০৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী মাসে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন) জুবায়ের আহমদ সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন অত্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারী কলোনী সমূহের মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুল এর অনুকূলে জমি বরাদ্ধ/ব্যবহার সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, সরকারী কলোনী এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুলের জমি বরাদ্ধ/ব্যবহারে অনুমতি প্রদান করা হলে এবং উহাতে মসজিদ/স্কুল/মাদ্রাসা নির্মিত হলে উক্ত মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুল পরিচালনার জন্য সদস্য হিসেবে গন্যমান্য ব্যক্তি/মুসল্লীদের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গৃহায়ন ও গণপূর্ত/ধর্ম/শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। তবে কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সদস্যদের অবশ্যই বাসা বরাদ্ধ প্রাপ্ত কলোনীবাসী হতে হবে। সরকারী আবাসন পরিদপ্তর কর্তৃক উক্ত কমিটির অনুমোদন আবশ্যক হবে। এই নীতিমালার কোন টাই মানেন না বর্তমান মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক দুর্নীতিবাজ সুলতান আহমেদ। এছাড়াও ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ আছে, সরকারী কলোনী এলাকায় মসজিদ/স্কুল/মাদ্রাসার জন্য বরাদ্ধকৃত ভূমি/ফ্ল্যাট বরাদ্ধ/ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হলে যে উদ্দেশ্যে বরাদ্ধ করা হয়েছে অথবা যে উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে সে উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে জমি ব্যবহার করা যাবে না। অথচ দুর্নীতিবাজ সুলতান আহমেদ এখানে সরকারী জমি ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারী কলোনী এলাকায় মসজিদ/স্কুল/মাদ্রাসার জন্য বরাদ্দকৃত জমিতে মসজিদ/স্কুল/মাদ্রাসা ব্যতীত বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য দোকান ঘর, মেস ঘর, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদি ঘর নির্মাণ কিংবা ভাড়া দেওয়া যাবে না। এমনকি উক্ত প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস হিসেবেও উক্তরুপ নির্মাণ ও ভাড়া দেয়া যাবে না। এগুলোর কোন কিছুই মানতে নারাজ দুর্নীতিবাজ সুলতান আহমেদ।