বিচারপতি’র নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি প্রতারণা দাপট, অভিনব কায়দায় ব্যবসায়ীর ১১লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল ফাঁস!
ভোলা জেলা প্রতিনিধি: ভোলার চরফ্যাশনে সফিউল্লাহ ওরফে জগলু নামে এক ব্যাক্তির অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। উপজেলার পৌরসভাধীন ৪নং ওয়ার্ডের প্রগতি পাড়ার মরহুম সাকাওয়াত উল্লাহ মাষ্টারের বড় ছেলে জগলু। অপর ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ কিসলু হাইকোর্টের স্বনামধন্য বিচারপতি হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট ভাই বিচারপতি, এ সুবাদে বড় ভাই জগলু নিজের নীতি নৈতিকতার জলাঞ্জলী দিয়ে পুরো চরফ্যাশনের জনপদকে বিষিয়ে তুলেছেন। বিচারপতি ভাইর নাম ভাঙ্গিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নারীদের যৌন হয়রানী, প্রতারণা এমনকি থানা পুলিশ ও আদালতে প্রভাব বিস্তার করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানকালে চরফ্যাশনের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ বিচারপতির ভাই জগলুর বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। স্থানীয় ফার্নিচার ব্যবসায়ী আতাউর রহমান জানান, জগলু লাভের উপর তাকে নগদ ২ লাখ টাকা দেন। এতে আতাউর মিয়া জগলুকে সিকিউরিটি হিসেবে ২ লাখ টাকা অংকের একটি চেক প্রদান করেন। টাকা পরিশোধের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই জগলু ২০১৮ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী স্থানীয় আইনজীবি লিটন হাওলাদার স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ প্রেরণ করেন। তাতে টাকা পরিশোধের তাগিদ দেয়া হয়। ফলে ব্যবসায়ী আতাউর নোটিশদাতা আইনজীবির মধ্যস্থ্যতায় জগলুকে নগদ এক লাখ টাকা পরিশোধ করেন। অবশিষ্ট টাকা প্রদানের সময় চেয়ে এক লাখ টাকার একটি চেক আতাউর মিয়া উক্ত উকিলের টেবিলে বসে স্বাক্ষর করেন। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ চরফ্যাশন শাখার ওই চেক নং ওইঐ- ৭২৫৮২০২ এবং হিসাব নং-২৫৫। চেকের পাতায় শুধু স্বাক্ষর নিয়ে আইনজীবি নিজেই চেকের পাতায় এক লক্ষ টাকার অংকটি বসিয়ে কথায় টাকার অংক না লিখেই জগলুর হাতে তুলে দেন। ব্যবসায়ী আতাউর মিয়া অভিযোগ করেন, উকিল সাহেবকে বিশ্বাস করে সরল মনে আমি চেকটি প্রদান করি। এরপর বিগত ২৪ মে ২০১৮ অপর আইনজীবি ছিদ্দিক স্বাক্ষরিত আরেকটি নোটিশ আসে। তাতে আতাউরের দেয়া ওই এক লাখ টাকার চেকটিতে অংকের ঘরে আরো একটি ১ অংক বসিয়ে এবং কথার ঘরে ১১ লাখ লিখে ওই টাকা দাবী করা হয়। জগলুর চেক প্রতারণার এমন অভিনব কৌশল দেখে ব্যবসায়ী আতাউর রিতীমত হতবাক হয়ে পড়েন। জাল জালিয়াতি করা ওই চেকের টাকা হাতিয়ে নিতে জগলু চরফ্যাশন যুগ্ম জেলা দায়রা জজ (২য়) আদালতে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে একটি সাজানো চেক ডিজঅনার মামলা ঠুকে দেন। ওই মামলায় ব্যবসায়ী আতাউরের বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক ওয়ারেন্ট তামিল করা হয়। এদিকে ব্যবসায়ী আতাউর মিথ্যে মামলা পেরেশানীতে অসুস্থ হয়ে ভোলায় চিকিৎসা নিতে আসলে মতলব বাজ জগলু সম্প্রতি রাতের আধারে গুন্ডাবাহিনী নিয়ে ব্যবসায়ীর বসত ঘরে প্রবেশ করে লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। জগলু ও তার ক্যাডাররা মহিলাদের নিপীড়ন চালিয়ে আতাউরের স্ত্রীর ১৫ ভড়ি স্বর্ণালংকার ও ব্যবসার মালামাল কেনার সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ১টি ল্যাপটপ ও ২টি মূল্যমান মোবাইল সেট লুট করে বলেও দাবী করেছেন আতাউরের পরিবার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিচারপতি ভাইর নাম ভাঙ্গিয়ে সফিউল্লাহ জগলু এরকম অসংখ্য অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। থানা-পুলিশ ও কোর্ট আদালতে দালালী আর মিথ্যে মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানী করে শীর্ষস্থানে আছেন তিনি। লাম্পট্য আর নারীবাজীর দায়ে চরফ্যাশনে বহুবার শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে জগলুকে।
ওদিকে বড় ভাইর এ সমস্ত অনৈতিক ও সন্ত্রাসী কাজের দায়ভার নিতে নারাজ ছোট ভাই বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ কিসলু। স্বনামধন্য এ বিচারপতির ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন, জগলুর অন্যায় কাজের সাথে বিচারপতি ভাইর কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। বরং স্থানীয় আইন শৃংখলা বাহিনী ও ভোলার প্রশাসনকে জগলুর অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ কিসলু।
সুত্রমতে, সফিউল্লাহ জগলুর বিরামহীন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী ও মানুষকে হয়রানীর প্রতিবাদে ভুক্তভোগীরা প্রতিকারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ কিসলু ও ভোলার জেলা প্রশাসকের নিকট স্বারকলিপি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ী আতাউরের বসতঘরে অনধিকার প্রবেশ করে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী আতাউর।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সফিউল্লাহ জগলুর সাথে তার মুঠোফোনে বার বার যোগযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।