ইয়াসিন আরাফাত রবিন: বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে, আর এর সবচেয়ে বড় শিকারগুলোর একটি বাংলাদেশ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন দেশের মানুষের জীবনে এক কঠিন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই কার্যকর ও টেকসই উদ্যোগ না নিলে আগামী দশকে বাংলাদেশ আরও ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের এক তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। এর ফলে লাখ লাখ মানুষ বাসস্থান হারিয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে।
পরিবেশবিদদের মতে, শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষি উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ধান, গম, ভুট্টা ও সবজির মতো প্রধান খাদ্যশস্যের ফলন কমে যাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (NAP) গ্রহণ করেছে। এর আওতায় উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসার এবং শহরাঞ্চলে সবুজায়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি—এই উদ্যোগগুলোকে আরও বিস্তৃত ও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাফিজ বলেন, “বাংলাদেশকে এখন শুধু দুর্যোগ মোকাবিলায় সীমাবদ্ধ না থেকে টেকসই উন্নয়ন ও সবুজ জ্বালানির দিকে জোর দিতে হবে। স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত না করলে দীর্ঘমেয়াদি সফলতা পাওয়া যাবে না।”
এদিকে তরুণ প্রজন্মও পরিবেশ রক্ষায় সোচ্চার হচ্ছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গাছ লাগানো, প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নদী-খাল দখলমুক্ত করার আন্দোলন চালাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগিতা জরুরি। উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হবে। অন্যথায় একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সংকট হবে জলবায়ু পরিবর্তন, আর এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হবে বাংলাদেশ।