বিজ্ঞানের এমন উৎকর্ষের যুগেও সাপের দংশনে মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে চলছে বাংলা সিনেমার মতো আয়োজন। আজ শনিবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা গ্রামে সাপের কামড়ে এক টাইলস মিস্ত্রির মৃত্যু হয়। এরপর তাঁকে জীবিত করে তুলতে সন্ধ্যায় ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক শুরু হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
সাপের কামড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম সাইফুল ইসলাম (৪০)। তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে। তিনি পেশায় টাইলস মিস্ত্রি ছিলেন।
পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৮ জুন) রাত ৮টার দিকে টেটা দিয়ে মাছ ধরতে যান সাইফুল ইসলাম। এ সময় বিষধর গোখরা সাপ তার পায়ে কামড় দেয়। তার সঙ্গীরা তৎক্ষণাৎ সাপটিকে মেরে ফেলে। সাইফুলকে নেয়া হয় ওঝার কাছে। ওঝার ঝাড়ফুঁকে অবস্থার উন্নতি না হলে স্বজনরা শনিবার সকালে নিয়ে যান মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাইফুল। মৃত সাইফুলকে জোহরের নামাজের পর দাফন করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সন্ধ্যা পার হয়ে গেলেও নিহতের স্বজনেরা এক ওঝার আশ্বাসে সাইফুলকে দাফন করতে দেয়নি।
জানা যায়, ওই ওঝা নাকি সাত দিনের সাপে কাটা রোগী ভালো করতে পারেন। তার কথা মতে স্থানীয় স্কুল মাঠে ওই কবিরাজ তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে কলাগাছ ও কলসি স্থাপন করে নানা আয়োজন করে। মৃতকে চিকিৎসায় ভালো করবে বলে ঝাড়ফুঁকের কার্যক্রম শুরু করে ওই ওঝা। দৃশ্যটি দেখার জন্য দূর-দূরান্তের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৃত যুবকের বাড়িতে দিনব্যাপী ভিড় করে উৎসুক জনতা।
ঢালজোড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সাপের কামড়ে সাইফুল নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পরে জোহরের নামাজের পর তার জানাজা হওয়ার কথা থাকলেও এক ওঝা তাকে ভালো করতে পারবে বলে আশ্বাস দেয়। আমরা গ্রামের সহজ-সরল মানুষ, তাই এ কথা শুনে তার চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য সাইফুলের পরিবার রাজি হয়। ফলে ঠিক সময় দাফন করা হয়নি। পরবর্তীতে ওঝা একটি কড়ি আনার কথা বলে আমাদের দুজন লোককে সঙ্গে নিয়ে সাভারে দিকে যায়। কিন্তু সে এখান থেকে যাওয়ার পর বিভিন্ন টালবাহানা করছে। এখন যে দুইজন লোক তারা নিয়ে গেছে তাদের জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে বলে আমি মনে করি। তাই আমরা, আমাদের লোকজনদের বলেছি তোমরা নিরাপদে আমাদের কাছে ফিরে আসো। পরে আমরা সাইফুলের জানাজা ও দাফনের কাজ রাতের মধ্যেই সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেই।’
এ ব্যাপারে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ।