শাহিদুল ইসলাম তন্ময়, ঢাকাঃ শ্রীলঙ্কায় চলছে অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। যে কারণে নানা নাটকিয়তার পর আয়োজক হয়েও নিজ দেশে এশিয়া কাপের পঞ্চাদশ আসর বসাতে ব্যর্থ হয়েছে লঙ্কানরা। এশিয়া কাপে অংশ নেয়া দলগুলোকে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আয়োজক হিসেবে থাকলেও আরব আমিরাতে ম্যাচগুলো আয়োজন করেছে শ্রীলংকা ক্রিকেট বোর্ড।
পাশাপাশি টি-টোয়েন্টিতে সাম্প্রতিক সময়টা ভালোও যাচ্ছিল না তাদের। হারের বৃত্ত থেকে বের হতে খাবি খাচ্ছিল দাশুন শানাকার দল। এশিয়া কাপের চলতি আসরের শুরুটাও হয়েছিল তাদের আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাজেভাবে হেরে।
কিন্তু সকল বাধা বিপত্তিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এশিয়া কাপের পঞ্চাদশ আসরের শিরোপা নিজ ঘরেই রেখে দিল শ্রীলঙ্কা। ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়েছে তারা ২৩ রানে। যার ফলে দীর্ঘ ৮ বছর পর ঘুচল তাদের এশিয়া কাপের শিরোপা খরা।
২০১৪ সালে বাংলাদেশকে হারিয়ে সবশেষ এশিয়া কাপের শিরোপার স্বাদ পেয়েছিল লঙ্কানরা। এর পরের দুই আসরে ফাইনালেও খেলার সুযোগ হয়নি তাদের। আট বছর পর ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করল দাশুন শানাকা এন্ড কোং।
কিন্তু কে আশা করেছিল আন্ডারডগ হয়ে এশিয়ার সেরা হওয়ার দৌড়ে অংশ নেয়া দলটি ফাইনালে খেলবে? কেইই বা ভেবেছিল ঘরেই তারা রেখে দিবে শিরোপা। নিঃসন্দেহে বলাই যায় এটি ভাবনাতীত ছিল সকলেরই।
অসাধ্যকে সম্ভব করেছে দাশুন শানাকা এন্ড কোং। পাকিস্তানকে ১৭১ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে বল হাতে তাদের আটকে দিয়েছে ১৪৭ রানেই। সেই সুবাদে ২৩ রানের জয়ে ষষ্ঠ বারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা নিজেদের করে নিল ক্রিস সিলভারউডের শিষ্যরা।
শ্রীলঙ্কার দেয়া ১৭১ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বড় রকমের হোঁচট খায় টিম পাকিস্তান। দলীয় ২২ রানেই তারা হারায় দুই টপ অর্ডার বাবর আজম ও ফখর জামান। ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে বাবর মাঠ ছাড়েন ৫ রানে। আর ফখর সাজঘরের পথ ধরেন রানের খাতা খোলার আগেই।
দ্রুত দুই টপ অর্ডারকে হারিয়ে বিপাকে পড়া দলকে ট্র্যাকে ফেরানোর মিশনে নামেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ। কিন্তু দলীয় ৯৩ রানে ইফতিখারের বিদায়ের পর তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপ।
উইকেটের একপ্রান্তে আশা যাওয়ার মিছিল চলতে থাকলেও শক্ত হাতে হাল ধরে রাখেন রিজওয়ান। ৪৯ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলে তার বিদায়ের পর এক প্রকারে সুনিশ্চিত হয়ে যায় পাকিস্তানের পরাজয়।
পাকিস্তানের বাকি ৫ ব্যাটারের ভেতর কেবলমাত্র দুই অঙ্কের রান ছোয়া সম্ভব হয় হারিস রউফের পক্ষে। লঙ্কান বোলারদের দাপুটে বোলিংয়ে বাকিদের ফিরতে হয় এক অঙ্কের রানে আটকে থেকেই।
রিজওয়ানের বিদায়ের পর আর ম্যাচে ফেরা সম্ভব হয়নি পাকিস্তানের পক্ষে। সবগুলো উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রানের বেশি করা সম্ভব হয়নি বাবর আজমদের পক্ষে। একইসঙ্গে কাটানো সম্ভব হয় নি ১০ বছরের শিরোপা জয়ের খরা।
এর আগে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। শুরুতে দারুণ বোলিংয়ে চেপে ধরে লঙ্কান ব্যাটারদের। ৫৮ রানে করতে সাজঘরে ফেরেন শ্রীলঙ্কার ৫ ব্যাটার।
ইনিংসের তৃতীয় বলেই উইকেটের দেখা পান নাসিম শাহ। দুর্দান্ত এক ইনসুইঙ্গারে স্টাম্প উপড়ে যায় কুশল মেন্ডিসের। এর রেশ কাটাতে ব্যাট চালানো শুরু করেন ধনঞ্জয় ডি সিলভা।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে দ্বিতীয় আঘাত হানেন হারিস রউফ। মিস টাইমিংয়ে বাবর আজমের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ৮ রানে ফেরেন নিশাঙ্কা।
এক ওভার পর, হারিস রউফের দ্বিতীয় শিকার দানুষ্কা গুনাথিলাকা, করেন ১ রান। পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪২ রান তোলে শ্রীলঙ্কা।
একপ্রান্ত আগলে ভালোই ব্যাট চালাচ্ছিলেন ধনঞ্জয় ডি সিলভা। তবে তাকেও বেশিক্ষণ থিতু হতে দেয়নি ইফতিখার আহমেদ। ২১ বলে ২৮ করেন ধনঞ্জয়।
লঙ্কান শিবিরে ষষ্ঠ আঘাত হানেন শাদাব খান। মাত্র ২ রানেই দাশুন শানাকাকে ফিরতে হয় প্যাভিলিয়নে।
খেই ফিরে পেতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান ভানুকা রাজাপাকসে। হাসারাঙ্গা ডি সিলভাকে সঙ্গে নিয়ে বিপর্যয় কাটিয়ে ট্র্যাকে ফেরান দলকে। এই দুই দায়িত্বশীল ব্যাটারের জুটিতে ভর করে ১৩.১ ওভারে দলীয় সংগ্রহ শতরান পেরোয় শ্রীলঙ্কা।
হাসারাঙ্গা-ভানুকার বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি ভাঙ্গে হারিস রউফ। দলীয় ১১৬ রানে উইকেটের পেছনে ধরা দিয়ে হারিসের তৃতীয় শিকার হন হাসারাঙ্গা। ২১ বলে ৩৬ করে ডানহাতি এই অলরাউন্ডারের ফেরার মধ্য দিয়ে ভাঙ্গে লঙ্কানদের সর্বোচ্চ ৫৮ রানের জুটি।
এরপর শক্ত হাতে হাল ধরেন রাজাপাকসে। শাদাব খানের হাতে ব্যক্তিগত ৪৬ রানে জীবন পেয়ে চার ছক্কার পসরা সাজিয়ে ৩৫ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক। শেষমেশ অপরাজিত ৭১ ও চামিকা কারুনারত্নের ১৪ রানের সুবাদে ৬ উইকেটে ১৭০ রানের পুজি নিয়ে মাঠ ছাড়ে শ্রীলঙ্কা।