নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ায় বাড়ির ভাড়াটিয়াকে মারধর অতঃপর ঘরে তালা মেরে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন। সেই দিন রাত আনুমানিক সারে ১১টায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, গভীর রাতে নগরীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা নতুন রাস্তা এলাকার কুরবান মিয়ার ২য় তলার ভাড়াটিয়া রানী ২শিশু সন্তান নিয়ে বাসায় বসে আছেন তার স্বামী কবিরের অপেক্ষায়। হটাৎ করেই দরজায় করা নারার শব্দ। হয়তো ভালবাসার সেই মানুষটি এসেছেন ভেবে দরজা খুলল রানী। কিন্তু দারজায় দাঁড়িয়েছিলেন ওই বাড়ির মালিক কুরবান মিয়ার ছেলে সোহেল (৩২) ও তার বন্ধু মিরাজ আলি (৩০) এবং অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। বাসায় রানীর স্বামী আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে সোহেল ও মিরাজ রানীর বাসায় প্রবেশ করে বাসার ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে রুমের দরজা বন্ধ করে রানীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয় সোহেল। এতে রানী রাজি না হওয়ায় তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান সোহেল ও তার সহযোগী মিরাজ এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী দম্পতির। এসময় রানীর সাথে হওয়া সকল ঘটনা মোবাইলে ভিডিও ধারন করে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি। একপর্যায়ে রানী সোহেলের হাতে কামর দিয়ে তাদের কব্জা থেকে মুক্ত হয়ে চিৎকার দিলে সোহেলরা রানিকে এ বিষয় বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এসময় বাসায় আসেন রানীর স্বামী কবির মিয়া। বাসার কাছে যেতেই চিৎকার শুনতে পান তার স্ত্রী রানীর। সিড়ি দিয়ে উঠে বাসার সামনে যেতেই সোহেল দেখতে পান তার রুম থেকে বেড় হচ্ছেন বাড়িওয়ালার (বাড়ির মালিক) ছেলে সোহেল, মিরাজ ও আরও একজন। দুজন মুখোমুখি হতেই রানীর স্বামীকে টেনে নিচে নামিয়ে নিয়ে আসেন সোহেল। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই কবিরকে এলোপাথাড়ি মেরে তাড়িয়ে দিয়ে তার স্ত্রী ও সন্তানদের তালাবদ্ধ করে রাখা হয় ঐ বাসায়। ওই সময় সোহেল শরিরের বিভিন্ন স্থানে তাঁকে ব্যাপক আঘাত করেন বলেও জানা যায়। পরে সকালে রানীকে বের করে বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেন সোহেল। আর এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হলে ধামাচাপা দিতে সবার কাছে সোহেল বলে বেড়ান যে কবিরের স্ত্রীর চরিত্র খারাপ হওয়ায় এবং বাসা ভাড়া দিতে না পাড়ায় তাদের বের করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে কবির তার স্ত্রীর কাছে জানতে পারেন পুরো ঘটনা। রানীর শরিরের বিভিন্ন যায়গায় আঘাত করেন সোহেল।

সুত্রে জানা যায়, এ বিষয়ে রানী বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ তাদের মন মত একটি অভিযোগ পত্র লিখিয়ে দায়িত্বরত ডিউটি অফিসার বিষয়টিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এস আই ওসমানের কাছে পাঠান। অভিযোগ পত্রটি নিয়ে ভুক্তভোগি পরিবার এসআই ওসমানের কাছে গেলে ওসমান ভুক্তভোগিদের নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে রানীর ২শিশু সন্তান উদ্ধার করেন এবং অভিযুক্তদের আটক করে রানীকে রাতে থানায় আসতে বলেন। রানী থানায় গিয়ে জানতে পারেন আটককৃতদের ঘটনাস্থল থেকে গোপন উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পরে রানী এসআই ওসমানকে কল দিলে রানীকে বিষয়টি আপোষ মীমাংসা করিয়ে দেওয়ার কথা বলেন।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী রানী বলেন, বাড়ির মালিকের ছেলে তাকে কুপ্রস্তাব দেয়, এতে তিনি রাজি না হওয়াতেই এই ঘটনাটি ঘটেছে। তার স্বামী কবির জানান, চিকিৎসা সম্পন্ন করে তারা সোহেলদেরকে আইনের আওতায় আনতে মামলার জন্য থানায় গিয়ে অভিযোগ দেন কিন্তু পুলিশের সাথে তাদের সম্পর্ক থাকায় থানা পুলিশ কোন আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে থানার ওসির নির্দেশে আপোষ মীমাংসার কথা বলেন এবং এলাকা ছেড়ে দিতে বলেন। পরে তারা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও মহা-পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর পুরো ঘটনা উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই ওসমান বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাচ্চাদের রানীর কাছে হস্তান্তর করেছেন। পরে রানীকে রাতে থানায় আসতে বললে তারা আর থানায় আসেননি। অভিযোগের সত্যতা আছে কিনা এবং কি আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে এসআই ওসমান বলেন, বিষয়টি বাসা ভাড়া সংক্রান্ত ঘটনা, রাতে দুই পক্ষকেই থানায় আসতে বলা হয়েছে। বাড়ির মালিক পক্ষ এসেছেন তবে রানিদের বারবার ফোনে কল দিলেও তারা ফোন ধরেননি। দুই পক্ষ থাকলে তাদের কথা শুনে আপোষ মীমাংসা করিয়ে দিয়ে কিছু খরচাপাতি পাইয়ে দেয়া যেত।