চলতি অর্থবছরের শেষ মাসেও কাটছাঁট করা হচ্ছে প্রকল্পের বরাদ্দ। এবার দুটি প্রকল্পের বরাদ্দ কেটে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রাপ্ত বরাদ্দ উপযোজন ও ব্যয় খাত পরিবর্তনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে চিঠি দিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, বাস্তবায়নাধীন তিনটি প্রকল্পের অনুকূলে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ অপরিবর্তিত রেখে ব্যয় খাত পরিবর্তন করা হবে। গত ৪ জুন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কার্যক্রম বিভাগকে চিঠি দিয়েছে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এ তিনটি প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ছিল ৫৮৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সেখান থেকে দুটি প্রকল্পের বরাদ্দ ১১ কোটি টাকা কেটে নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পটিতে। মোংলা বন্দর চ্যানেলের আউটার বারে ড্রেজিং প্রকল্পের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটিতে বরাদ্দ দেয়া অর্থ খরচ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। ফলে ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা ছেঁটে দেয়া হচ্ছে। ফলে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২০ লাখ টাকা। এছাড়া মোংলা বন্দর হতে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত পশুর চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের অনুকূলে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৩০ কোটি টাকা। পুরো অর্থ ব্যয় করতে না পারায় শেষ মুহূর্তে এসে এ প্রকল্প থেকে কাটা হচ্ছে ৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫৫৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়ন অগ্রগতি ভালো হওয়ায় ওই দুই প্রকল্পের কেটে ফেলা অর্থ অতিরিক্ত হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। ফলে প্রকল্পটিতে মোট বরাদ্দ দাঁড়াচ্ছে ৫৬৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, এ রকম ব্যয় খাত পরিবর্তনে আইনগত কোনো বাধা নেই। প্রয়োজনে সেটি করা যেতে পারে। কিন্তু সংশোধিত এডিপি তৈরির পর অর্থবছরের একেবারেই শেষ মুহূর্তে এসে এরকম কাটছাঁট আর্থিক ও পরিকল্পনা শৃঙ্খলার পরিপন্থী। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা যদি আগে থেকেই সচেতনভাবে প্রক্ষেপণ করত তাহলে হয়তো এমনটা ঘটত না। ফাস্ট ট্র্যাক অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৬৫৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
অন্যদিকে পায়রা সমুদ্র বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটিতে ব্যয় বেড়েছে ১৯৬ দশমিক ৯২ শতাংশ। প্রকল্পটির অনুমোদিত ব্যয় ছিল এক হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। সেখান থেকে দুই হাজার ২২২ কোটি ৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, ব্যয়ের সঙ্গে দুই বছর বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদও। কেননা প্রকল্পটি চলতি বছরে জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
এ প্রসঙ্গে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এর আগে বলেন, শুধু টাকার অংকে হিসাব করলে চলবে না। এ ব্যয় বৃদ্ধি যৌক্তিক। কেননা মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবেই (ডিপিপি) বলা ছিল প্রাথমিক কাজ হলে পরবর্তীতে অন্যান্য কম্পোনেন্ট যুক্ত করা হবে। সে অনুযায়ী নতুন কম্পোনেন্ট যোগ করা হয়েছে। তাছাড়া জমির দাম আগে ৪ হাজার টাকা উপরে প্রতি শতক ছিল না। পরবর্তীতে রাস্তা হওয়ায় রাস্তার পাশের জমি শতকপ্রতি ১ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। সেই সঙ্গে সরকারি নিয়মে আগে দেড় গুণ দাম ধরা হলেও এখন নতুন নিয়ে তিনগুণ দাম দিতে হচ্ছে। পুনর্বাসনেরও ঘর তৈরিসহ তাদের পুনর্বাসিত করার খরচ বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে ব্যয় বাড়ছে।
সূত্র জানায়, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় রামনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে প্রস্তাবিত পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরটি অবস্থিত। এটি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকারমূলক ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্প। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর জাতীয় সংসদে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ অ্যাক্ট ২০১৩ অনুমোদিত হয় এবং ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়। তৃতীয় এ সমুদ্র বন্দরটি প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর উদ্বোধন করেন।