প্রতারণা ও জালিয়াতি করে শত কোটি টাকা হাতিয়েছে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি সোহেল রানা!

লেখক: সাব এডিটর
প্রকাশ: ৩ years ago

নিজস্ব প্রতিবেদক: রিহ্যাবের সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ সোহেল রানার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ রকম অভিযোগে তার নামে কমপক্ষে এক ডজন মামলা দায়ের হলেও এখনো তিনি রিহ্যাবের সহ-সভাপতি (অর্থ) পদে বহাল আছেন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত মানুষের সমগ্র জীবনের সঞ্চয় দিয়ে একটি মাথা গোজার ঠাঁই বা একটি ফ্লাটের স্বপ্ন থাকে। রিহ্যাবের সদস্য আবাসন ব্যবসায়িসহ বিভিন্ন ডেভেলপার কম্পানির রয়েছে এই ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দেয়ার বিভিন্ন অভিযোগ ও প্রতারণার নজির। এই প্রতারকদের মধ্যে আছে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি (অর্থ), সোহেল রানা। তার বিরুদ্ধে হয়রানি, প্রতারণা, সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগে প্রায় ১৫ টি মামলা বিভিন্ন থানা ও আদালতে চলমান রয়েছে।

রিহ্যাবের নিজস্ব মেম্বারদের গ্রাহক পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযোগ সমাধানের জন্য একটি কাস্টমার এবং মেডিয়েসন সেল গঠন করা হয়েছে বহু আগেই। ফলে আদালতে যাবার আগেই মেডিয়েসন সেলে গ্রাহক তার সমাধান পেতো। অত্যন্ত সুনামের সাথে দীর্ঘদিন এই মেডিয়েসন সেলটি কাজ করে থাকলেও বর্তমানে সোহেন রানা সহ বিভিন্ন রিহ্যাবের প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোন প্রকার সমাধান করা হচ্ছে না। ন্যায্য অধিকার না পেয়ে আইনের দ্বারস্থ হয়েছে সাধারন মানুষ। এখন তাদের মুখ বন্ধ করে দেবার জন্য রিহ্যাব সকল প্রকার চেষ্টা চালাচ্ছে। রিহ্যাবের ২০২১-২০২৩ কমিটির ৪র্থ সভায় (২৭/০২/২০২২), ভাইস প্রেসিডেন্টদের বিরুদ্ধে মামলা করা সকল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সহ সকল প্রকার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে একটি এজেন্ডা পাশ করা হয়। এজেন্ডায় আরো উল্লেখ করা হয় যে, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকল খরচ রিহ্যাবের কোষাগার হতে প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্যের দাবি, সভায় এ সংক্রান্ত কোন আলোচনায় হয়নি। তবে কার্যবিবরণীতে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা কাজী রইজ উদ্দিন কালু ভুক্তভুগীদের মধ্যে অন্যতম। সোহেল রানার খপ্পরে পরে প্রায় সর্বস্বান্ত হতে চলেছেন তিনি। ২০০৮ সালে সোহেল রানার কম্পানি বেঙ্গল ওয়ান ক্রিয়েসনের সাথে ভবন নির্মাণের চুক্তি অনুযায়ী ২০১১ মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কাজী রইজ উদ্দিন কালুকে ভবন স্থানান্তর করার চুক্তি হলেও ২০২২ সালেও তা বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। সাথে ঐ ভবনের ২১ টি ফ্ল্যাটের মাকিদের কাছে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দিয়েই টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন।

মিরপুর পল্লবীর আহমদ হলেন আরো একজন ভুক্তভুগী। পল্লবীর পুরোনা থানার বিপরীতে এই “আহমদ জাহানারা ভিলা”র শুধু ফাউন্ডেশন, পিলার আর একতলা পর্যন্ত তৈরি করেই, লাপাত্তা হয়ে যায়, সোহেল রানার কোম্পানি বিওসিএল। পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছেন আহমদ। স্ত্রীর জন্য ৬ তলার একটি বাড়ি তৈরির আজন্ম লালিত স্বপ্ন তিনি আর বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি প্রতারক সোহেল রানার জন্য। ২০১০ সালে সোহেল রানার বাড়ি তৈরির একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয় মৃত আহমদ এর সাথে। ৬ তলা ভবনের ১২ টি ফ্ল্যাট সমান ভাগে ৬ টি করে নেবেন জমির মালিক এবং সোহেল রানার কোম্পানি বিওসিএল । বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হওয়ার কিছু দিন পর আহমদ মারা যান। এরপর তার ছেলে ডা: জিল্লুর রহমান এর সঙ্গে সোহেল রানার চুক্তি হয় এবং সোহেল রানাকে পাওয়ার অব এটর্নিও দেন। পিলার এবং একতলার কাজ কিছুটা তৈরি করার পরই সোহেল রানার কোম্পানি, ভবনটি অসমাপ্ত রেখে চলে যায়। এরই মধ্যে সোহেল রানা তার ভাগের ৬ টি ফ্ল্যাট অলরেডি বিক্রি করে ফেলেছেন। ক্রেতারা ফ্ল্যাট দেখতে এসে ভবনটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় দেখতে পায়। দিনের পুরোটা সময়, অফিসে তালা ঝুলানো থাকার কারনে, সোহেল রানার সাক্ষাৎই পাওয়া ক্রেতাদের জন্য দুস্কর হয়ে ওঠে। এর পরই ভবনটি যাতে নির্মান সম্পন্ন করে সোহেল রানা, তার জন্য পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত গিয়েছেন ডা. জিল্লুর রহমান।

সোহেল রানার বিরুদ্ধে থানায় সাধারন ডায়েরি এবং আদালতে প্রতারনার মামলা করেছেন তিনি যা এখনো চলমান। ফ্ল্যাট ক্রেতা এবং ভবন মালিকরা বলছেন, রিহ্যাবের ক্ষমতা ব্যবহার করেই সোহেল রানা রাজধানীতে আবাসন শিল্পে বড় ধরনের প্রতারনা করে যাচ্ছে। শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের নি:স্ব করে দিচ্ছেন তিনি।

রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট না হলে সোহেল রানার পক্ষে এই প্রতারণা করা মোটেও সম্ভবপর ছিলনা। এই দায়ভার রিহ্যাব এড়াতে পারেনা। এ বিষয়ে রিহ্যাবের কতিপয় সাধারণ সদস্যের সাথে কথা বলে জানা যায়, রিহ্যাবের অফিসিয়াল ব্যয় মেটানোর জন্য প্রতিটি সদস্যকে বছরে পঁচিশ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। কিন্তু ঐ টাকা বঙ্গবন্ধুর প্রতি কটুক্তি সংক্রান্ত মামলার আসামীর ব্যয় মেটানো হবে তা কোন ভাবেই কাম্য নয়। মোহাম্মদ সোহেল রানার বক্তব্য নেওয়ার জন্য বারবার তার সেল ফোনে কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন...