নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কুতুবদিয়ায় ভূমিহীনকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার জমি দখলে নিতে নানামুখি ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ উঠেছে লিটন কুতুবী নামের এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। কে এই সাংবাদিক? কি তার পরিচয়? অনুসন্ধানে উঠে এসেছে লোমহর্ষক তথ্য।
আরো পড়ুন..বিএমপির ডিসি’র নারী কেলেঙ্কারী!
কে এই সাংবাদিক লিটন? কি তার পরিচয়?
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভূমিহীন ব্যক্তির নামে বরাদ্দকৃত জমি দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করছে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার কুতুবদিয়া প্রতিনিধি লিটন কুতুবী। উপজেলা সদরের বড়ঘোপ ইউপির (৭নং ওয়ার্ড) আজমকলোনী গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক এস, কে লিটন কুতুবীর বিরুদ্ধে গুরুতর এ অভিযোগ তুলেছেন একই ইউনিয়নের রেইজ্যার পাড়ার জহির আহমদ। ওই সাংবাদিক পূর্বদেশ পত্রিকার কুতুবদিয়া প্রতিনিধি হলেও সরেজমিনে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। নিজেকে দেশের স্বনামধন্য দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বেড়ান তিনি। তার ব্যবহৃত ভিজিটিং কার্ডে প্রথম আলোর নাম রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে প্রথম আলো পত্রিকার নাম ভাঙ্গিয়ে মানুষকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করেন তিনি। তিনি কখনো কখনো নিজেকে থানা পুলিশের সোর্স পরিচয়ে মানুষকে হয়রানী করে থাকে বলে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন। শুধু তাই নয় থানায় মামলা কিংবা অভিযোগ করতে যাওয়া লোকজনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে মামলায় প্রকৃত আসামীর নাম বাদ দিয়ে নিরীহ অসহায় মানুষকে মামলায় জড়ানোর মত গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ওই সাংবাদিক লিটন কুতুবীর বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগের সত্যতা কক্স টিভির অনুসন্ধানী দল আগুন টীমের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
কুতুবদিয়ায় ভূমিহীনকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া জমি দখলের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৫ মে সকাল ১১টায় কুতুবদিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) হেলাল উদ্দিন চৌধুরী অভিযান চালিয়ে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এস,কে লিটন কুতুবী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে অপ-প্রচার চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল। এতে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বিগত ২০১২ সালের ৫ অক্টোবর কক্সবাজার ডেপুটি কমিশনার বরাবরে খাস জমি বরাদ্দের আবেদন করেন বড়ঘোপ ইউনিয়নের রেইজ্যার পাড়ার মোজার আহমদের ছেলে ভূমিহীন জহির আহমদ।
আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত পূর্বক প্রকৃত ভূমিহীন হিসেবে শনাক্ত করে বন্দোবস্তী মোকদ্দমা নং-৯৮/০৯-১০ ইং মূলে বড়ঘোপ মৌজায় রেজিষ্ট্রি দলিল নং-৯১৩, বি,এস খতিয়ান নং-৩২৬১ বি,এস দাগ নং- ৪৫৯৬ এর ৮ শতক খাসজমি জহির আহমদ এবং তার স্ত্রী রোকসানা আকতারের নামে বরাদ্দ দেয় সরকার। ওই বছরের ২০ অক্টোবর কুতুবদিয়া সাব রেজিষ্ট্রি কার্যালয়ে জমিটির রেজিষ্ট্রি সম্পাদন করা হয়। পরবর্তীতে সরকারি কর-খাজনাদি পরিশোধ করলে তাদের নামে ৩২৬১ নং নামজারী বি,এস খতিয়ান সৃজন হয়। সরকারি নির্দেশ মতে সে সময় ভূমিহীন জহির ও রোকসানাকে সরেজমিনে গিয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাদ্দকৃত জমির দখল বুঝিয়ে দেন। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে অদ্যাবদি এ প্রভাবশালীর ভয়ভীতিতে ওই জমিতে ঘর তুলতে পারেননি জহির ও রোকসানা দম্পতি।
এর প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তারা। দখলদার ব্যক্তি এতটাই প্রভাবশালী কেউ তাদের কথায় কর্ণপাত করেননি। অবশেষে কোন উপায়ান্তর না দেখে গত ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর সকালে কাকুতিমিনতি করে ওই জমি ছেড়ে দিতে অনুরোধ জানান জহির।
কিন্তু কে শুনে কার কথা.? এতে আরো ক্ষেপে ওঠেন মহাক্ষমতাধর লিটন কুতুবী। জমিতে উঠার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে মারধরসহ স্বপরিবারে খুন করার হুমকি দেন জহির ও রোকসানাকে।
নিরাপত্তার তাগিদে এবিষয়ে জহির আহমদ গত ৭ জানুয়ারি কুতুবদিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে থানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি (ডায়েরি নং-২১৯) হিসেবে লিপিবদ্ধ করেন। সাংবাদিক লিটন কুতুবী জহির আহমেদকে গায়েল করার জন্য ষড়যন্ত্রের নীল নকশা চক কষতে থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি ধর্ষণ মামলায় কৌশলে আসামী করেন জহির আহমদকে। গত ১৩ মে ২০ দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি তার বোনকে ধর্ষণ করার অভিযোগে কুতুবদিয়া থানায় ৬ জনকে আসামী করে একটি এজাহার দায়ের করতে যায়। দেলোয়ার থানায় গিয়ে আগে থেকে উপস্থিত সাংবাদিক লিটন কুতুবীর সাথে দেখা হয়। দেলোয়ার সম্পর্কের খাতিরে মামলার বিষয়ে লিটন কুতুবীকে জানায়। লিটন কুতুবী দেলোয়ারকে তার সাথে সুসম্পর্ক থাকা এস আই সামসুল আলমকে মামলার দায়িত্ব দেয়ার কথা বলে এজাহারটি হাতে নেয়। এজাহারে ভুল আছে দাবী করে দেলোয়ারের অশিক্ষিতের সুযোগ নিয়ে লিটন কুতুবী পরক্ষণে শুদ্ধ করার কথা বলে কম্পিউটার দোকানে নিয়ে যায়। এর পর শুদ্ধ করে আনার কথা বলে এজাহারটি দেলোয়ারকে ধরিয়ে দেয় এবং বলে দেয় এখন শুদ্ধ করে দিয়েছি এবার জমা করে দাও। এরপর দেলোয়ার তার কথামত এজাহারটি থানায় দাখিল করলে মামলা নং ০৮ নথিভূক্ত হয়। পরে দেলোয়ার জানতে পারে মামলার ৫ নং আসামী জসিম উদ্দিনের নাম নাই তার স্থানে আসামী করা হয়েছে নিরীহ ব্যক্তি জহির আহমদকে। জহির আহমদের বয়স দেখানো হয়েছে ৪৫ বছর। অথচ তার প্রকৃত বয়স ৬০ বছর। মামলার বাদী দোলোয়ার কক্স টিভির তদন্ত দল আগুন টিমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারটি অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে।
বরাদ্দপ্রাপ্ত জমির মালিক জহির আহমদ কান্না জড়িত কন্ঠে জানান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ভূমিহীন হিসেবে বরাদ্দ দেয়া জমিতে ঘর করার জন্য বহু চেষ্টা করেছি। আমার দুই ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে তারা পড়ালেখা করছে। আমার ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে সরকারের দেয়া জায়গায় একটি ঘর করে থাকব,অনেক আশা ছিল আমার। আমাকে এখনো ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। স্থানীয় সাংবাদিক লিটন কুতুবী আমার জায়গাটি দখল করে অপর একজনকে বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করছে বহু আগে থেকে। আমি থানায় জিড়ি করেছি। লিটন কুতুবী আমাকে ধর্ষণের মামলায় ষড়যন্ত্র করে আসামী করেছে। এসিল্যান্ড স্যার আমাকে জায়গা বুঝিয়ে দেয়ার পর আমি ঘর করতে গেলে আমাকে লিটন কুতুবী ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী লম্বা দা ও লোহার রড দিয়ে মারতে আসে। আমি আমার জায়গা ফিরে পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তেক্ষেপ কামনা করছি।
স্থানীয়রা জানান, এস,কে লিটন কুতুবী সাংবাদিক পরিচয়ে একজন পেশাদার ভূমিদস্যু। সে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তার আশেপাশের খাস জমি বিভিন্ন মানুষকে বিক্রি করেছে। আরো অনেকের জায়গা জমি জোর করে দখলে রাখার অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিক লিটন কুতুবীর বিরুদ্ধে। জহির আহমদের নামে বরাদ্দ দেয়া এই জমিটাও বিক্রি করার জন্য গত তিনদিন আগে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি ভরাট করে রাতারাতি পলিথিনের বেড়া দিয়ে ঘর তৈরি করেছিল। ২দিন আগেও সেখানে কোন ঘর ছিলনা। তার অপ-সাংবাদিকতা ও অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্থানীয়রা। নানা মুখি ষড়যন্ত্র করে জায়গাটি দখলে নিতে সে এখনো নানা অপপ্রচার ও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। লিটন কুতুবীর নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের অভিযোগের যেন শেষ নেই।
এবিষয়ে কুতুবদিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) হেলাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, ‘এই জমি রাস্তার সাথে লাগানো একটি সরকারি খাস জমি। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে এই জমিটি ভূমিহীন জহির আহমদ ও তার স্ত্রীর নামে বরাদ্দ করা হয়। সরকারিভাবে তাদেরকে দখল বুঝিয়ে দেয়া হলেও লিটন কুতুবী নামে একজন লকডাউনের সুযোগ নিয়ে তাতে ঘর তৈরি করেছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে সঠিক কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এ অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন লিটন কুতুবীর নামে সরকারি খাস জমি দখলের অহরহ অভিযোগ রয়েছে। কাগজপত্রের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে সেগুলোরও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সাংবাদিকতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকারী চিহ্নিত ভূমিদস্যু লিটন কুতুবীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার ভূমিহীন জমির প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দেয়ায় এসিল্যান্ড মোঃ হেলাল চৌধুরী ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও নৌবাহিনী টিমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সচেতন মহল। এ সংক্রান্ত বিষয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।