সাদমান রাফিদ, মুন্নি আক্তার: নাম তার দিদারুল আহসান। তিনি রাজধানী ফার্মগেট এ অবস্থিত আল-রাজি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বর্তমানে রাজনীতি না করলে গুঞ্জন রয়েছে তিনি জামায়েত শিবিরের রাজনীতির সাথে সংক্রিয়। এর আগেও তিনি জামায়েতের নেতা ছিলেন এমন গুঞ্জন রয়েছে ফার্মগেট এলাকায়। এখানে যেমন কাটছেন গলা তেমনি অন্যর বাড়ি জবর দখল করে রেখেছেন দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে। তিনি নিজেকে মনে করেন আইনের উর্দ্ধে। আইন মানার বালাই নাই তার মধ্যে। ময়লা আর্বজনায় থাকে সব সময় হাসপাতালটিতে এবং দ্রুটিগত চিকিৎসা ও টেষ্ট তো আছেই। সম্প্রতি অব্যবস্থাপনার দায়ে জরিমানাও করা হয় এই হাসপাতালটিকে। তবুও বদলায়নি স্বভাব। রোগীর খাবারের ফ্রিজে রক্ত পেয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত। এত কিছুর পরও চিকিৎসার ধরন পাল্টায় নি বরং অব্যবস্থাপনায় চলছে প্রতিষ্ঠানটি।
দীর্ঘদিন ধরে রাজধানী ঢাকা জেলার ফার্মগেট এলাকাধীন অবস্থিত আল-রাজি হাসপাতালের এমডি দিদারুল আহসানের বিরুদ্ধে বাড়ি জবর দখল করে হাসপাতাল পরিচালনার অভিযোগ। আইনের জটিলতা দেখিয়ে তিনি ১২ তেজকুনিপাড়া, ফার্মগেট এর বাড়িটি জবর দখল করে রেখেছেন। বারবার বাড়ি মালিকদের প্রয়োজনে বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেও কোন প্রতিকার পান নি। এরপর বাড়ির মালিকগন সংবাদ সম্মেলনও করেন। এতেও নরছে না আল-রাজি হাসপাতালের এমডি দিদারুল আহসান। জানা গেছে, তিনি নিজেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছু প্রভাবশালী নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে বাড়িটি জবর দখল করে রেখেছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এমন তথ্য একাধিকবার প্রকাশও করা হয়েছে। বাড়ীর মালিকদের ছয় বোনের পক্ষে সৈয়দ আমিনা হোসেন কাদের সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, অধিকার সম্পর্কীত যে কোন চাওয়া পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সেই আইনের কাছেই স্মরণাপণ্য হই এবং হয়েছি কিন্তু দুঃখজনক আমাদের ন্যায্য আইনি দাবিটি, আইন মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহন করেও আমরা আজ অবদি কোন প্রতিকার পাইনি। দেশের আইনি ব্যবস্থায় বিদ্যমান অচলবস্থা, ফাঁক-ফোঁকর ও অসৎ কু-চক্রের পাল্লায় পড়ে আমরা আজ দিশেহারা। গভীর দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে আজকে আমরা খুব নিরুপায়। কারন আল-রাজি হাসপাতাল নামক একটি কু-চক্রী ধর্ম-ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কাছে ফার্মগেটের মধ্যস্থলে আমাদের পৈত্রিক বাড়িটি ১৬ বছর যাবৎ জবর দখল অবস্থায় আছে। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী কোন বাড়ির মালিক কোন ভাড়াটিয়াকে তার ভাড়া প্রদান করলে ভাড়ার মেয়াদ যাই থাকুক না কেন কোর্ট আদেশ ছাড়া সেই ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য করতে পারে না। সুতরাং আইন মোতাবেক বাড়ি ২ বছরের জন্য ভাড়া দিলেও আপনি ভাড়ার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও তার বিরুদ্ধে মামলা করে কোর্টের আদেশ ব্যতিত তাকে উচ্ছেদ করতে পারবেন না। মামলা করে এই কোর্টের আদেশ পেতে যুগের পর যুগ অতিবাহিত হলেও ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না, এমনকি ভাড়াটিয়া যদি ভাড়া নাও প্রদান করে সেই ক্ষেত্রেও কোর্টের আদেশ ব্যতিত ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। এই আইনের সুযোগ নিয়ে আল-রাজি হাসপাতাল লিঃ দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ সঠিকভাবে ভাড়া না প্রদান করেও আমাদের ফার্মগেটের বাড়িটি দখল রেখে ব্যবসা করতে সক্ষম হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তার বাবা মরহুম ডঃ সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯২৮ সনে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বাঙ্গালী মুসলমান হিসাবে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বাঙ্গালী উপাচার্য ছিলেন। ১৯৭৮ সনে তিনি ২১ শে পদক প্রাপ্ত হন। তিনি ১৯৫৫ সালে তার স্ত্রীর নামে ফার্মগেট আল রাজি হাসপাতাল অবস্থিত এই জমিটি ক্রয় করেন এবং সেখানে লোন নিয়ে একটি বশত-বাড়ি নির্মান করেন। সৈয়দ আমিনা হোসেন কাদের সহ অন্যন্যা অংশিদারগন ১৯৯৬ সালে ফার্মগেটের এই বাড়িটি ৫ বছরের জন্য আল-রাজি হাসপাতালকে ভাড়া প্রদান করে। ভাড়ার মেয়াদ শেষ হয় ২০০১ সালে। তাদের প্রয়োজনে আল-রাজি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বাড়িটি ছেড়ে দেবার অনুরোধ করলে তারা এ বিষয়ে নানা ধরনের তাল-বাহানা শুরু করে বলে অভিযোগ করেন বর্তমান বাড়ির মালিকগন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে এবং যৌথভাবে উন্নয়ন করার প্রস্তাবও দেয়া হয় কিন্তু এত সব আলাপ আলোচনা ও কাকুতি মিনতি করার পরও বাড়িটি ছাড়েনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে তারা আইন অনুসরণ না করেই কোর্টে ভাড়া জমা দেয়া শুরু করে। উল্লেখ্য যে চুক্তি মোতাবেক প্রতি বছর বাড়ি ভাড়া ৬% হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও কোর্টে আজ অবদি তারা ১৭ বছর আগের সেই একই ভাড়া জমা দিয়ে যাচ্ছে। এরুপ ঘটনার পর বাড়ির প্রকৃত মালিকগন আদালতে আইন মোতাবেক দুইটি ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ মোকাদ্দমা দায়ের করে আইনের স্মরণাপণ্য হয়। দুঃখের বিষয় এই যে, আজ পর্যন্ত এই মোকদ্দমার কোন নিষ্পত্তি হয়নি এবং কোর্ট থেকে কোন প্রকার ডিক্রি বা মীমাংসা পাইনি। নানান অজুহাতে কোর্টের ডেট পিছাইতে থাকে। বিপক্ষে উকিলরা টাইম পিটিশন দিয়েই চলেছেন। আদালত তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী কোন সময় ২ মাস, কোন সময় ১ মাস, আবার কোন সময় ৩ মাস পরপর ডেট দেন। আবার যখন ডেট আসে তখন দেখা যায় সাক্ষী দেওয়ার জন্য ৫ মিনিট সময় না দিয়েই কেস মুলতবি হয়ে যায়। এবং আরো বিভ্রাটের ব্যাপার হচ্ছে, সিভিল প্রসিডিওরের নিয়ম অনুযায়ী নানা টেকনিক্যাল ইস্যুতে, হাসপাতালের উকিলরা কাল বিলম্ব করেই চলেছেন। এসব তো আছেই, আবার এর পর দেখা যায় যে, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রন আইন এবং ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ আইনগুলো এমনই জটিল, দুর্বোধ্য ও অপ্রসঙ্গিক যে কোন অসাধু ভাড়াটিয়া ইচ্ছে করলে আইনের ফাঁক-ফোঁকর ব্যবহার করে বহুদিন কেস চালিয়ে যেতে পারে। এই ভাবেই ভুক্তভোগিদের বাড়িটি আল-রাজি হাসপাতাল বহাল তবিয়তে গত ১৭ বছরে ব্যবসা করেই চলেছেন এবং এক পয়সাও ভাড়া বাড়াননি, আর এই ব্যাপারে ভুক্তভোগিদের করার কিছুই নাই, কোর্টর কাছে ভুক্তভোগিরা ধরাশয়ী। বর্তমানে ভুক্তভোগিরা কোর্টের মাধ্যমে বর্গফুটে মাত্র পাঁচ টাকা হারে ভাড়া পাচ্ছে যা ২০০১ সনের আর ভাড়ানো হয় নাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নিজেদের প্রয়োজনে বাড়িভাড়ার নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে ভুক্তভোগিদের না জানিয়ে বাড়ির পুরাতন এয়ারপোর্ট সংলগ্নের সামনের সিমানা রক্ষাকারি দেয়ালটি ভেঙ্গে ফেলেছে যা ভুক্তভোগিদের জমির নিরাপত্তা অখন্ডতার হুমকিস্বরুপ। আরো জানা গেছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাশের বাড়ির সিউওয়ারেজের লাইনের সঙ্গে ভুক্তভোগিদের বাড়ির সিউওয়ারেজ লাইন যোগ দিয়ে দিয়েছে। এতে প্রতিবেশী সঙ্গে ভুক্তভোগিদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যে কোর্টের রায়ের মাধ্যমে এইটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, আল রাজি হাসপাতাল লিঃ সঠিক আইন অনুযায়ী এবং সঠিক হারে কোর্টে ভাড়া জমা দেন নাই বিধায় বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ এর ১৮ ধারা অনুযায়ী আল- রাজি হাসপাতাল আইনের অধিনে কোন প্রকার সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে না। কিন্তু এরপরও ভুক্তভোগিরা আইন মান্য করে কোর্টে স্মরণাপন্য হয়ে মোকদ্দমাগুলো দীর্ঘ দিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আজ অবদি কোন প্রকারের আভাস মাত্র পায়নি। আল-রাজি হাসপাতালের কাছে অসহায়, দেশের আইনের দেশের আইনের কাছে হেয় এবং দেশের প্রশাসনের কাছে মূলহীন বলে মন্তব্য করেন ভুক্তভোগিরা। তাই এখন ভুক্তভোগিদের দাবি দাওয়া সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন। দেশের দুর্বল ও দুনীতিগ্রস্ত আইন ব্যবস্থার অপ-ব্যবহার করে এবং টাকার প্রতাপ ও বাহুবল প্রয়োগ করে এই আল-রাজি হাসপাতাল নামক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তাদের পক্ষে একা লড়ার সামর্থ বা শক্তি নাই বলেও তারা সংবাদ সম্মেলনে জানান। তাই তারা সাংবাদিকদের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হন। সাংবাদিক ও দেশের মানুষের কাছে সংবাদ সম্মেলনের দিন বিভিন্ন দাবীও তুলে ধরেন। দীর্ঘ ১৭ বছরের মোকদ্দমাটির নিষ্পত্তি না হওয়ার কারনে ভুক্তভোগিদের যে অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দেশের জনগনের বিবেকের কাছে অবহিত করেন। ভাড়ার চুক্তি মেয়াদ অতিবাহিত হবার পরেও ভাড়াটিয়া যে কোর্টের দীর্ঘসুত্রার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাড়ি নিজের দখলে রাখতে পারে এবং বাড়ির মালিককে পথে বসাতে পারে এই ব্যাপারে দেশের জনগনকে অতিবাহিত করেন তারা। এ বিষয়ে জ্ঞাত হয়ে কেও যেন, নিজের কষ্টার্জিত উর্পাজন দিয়ে গড়া সম্পত্তি, ভাড়াটিয়ার কবলে পড়ে ভোগান্তির শিকার না হন সেই ব্যাপারেও সচেতন করেন ভুক্তভোগিরা।
আল-রাজী হাসপাতালকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা:
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আল-রাজী হাসপাতালকে জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট। চিকিৎসা অ-ব্যবস্থাপনার দায়ে এই হাসপাতালটির এমডিকে সাজাও দিয়েছে। সম্প্রতি ৬ লাখ টাকা জরিমানাও করেছে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক উপাদান দিয়ে রোগ নির্ণয় করায় এক অভিযানে তাদের এই জরিমানা করা হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সারওয়ার আলম। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, আল রাজী হাসপাতালে হেপাটাইটিস রোগ নির্ণয়ে যে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে তার মেয়াদ ২০১১ সালের জানুয়ারী মাসে শেষ হয়েছে। হাসপাতালের প্যাথজলী ল্যাবরেটরী তল্লাশী করে এ রকম আরো বেশ কিছু রোগ নির্ণয়কারী রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে যেগুলো ৬-৮ মাস পূর্বেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। ওই সময় র্যাব জানায়, হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটারে পুরাতন রক্তের দাগ লাগানো বেশ কয়েকটি ইট ও বালির প্যাকেট, দেয়ালের প্লাস্টার ধ্বসে পড়ার চিত্র, ময়লাযুক্ত বিভিন্ন কাপড় চোপড় দেখা গেছে। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ মাসুদ করিম। তিনি বলেন, অপারেশন থিয়েটারে পাশে অবস্থিত ড্রেসিং রুমে প্রচুর ধূলোবালিযুক্ত জিনিসপত্র রয়েছে যা অপারেশনকৃত রোগীর জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হতে পারে। অভিযানের সময় সেখানে কোন চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানকে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালটির প্যাথলজি শাখায় অভিযান চালিয়ে তৈরী করা ৪ ডিসেম্বরের একটি মেডিকেল রিপোর্ট দেখতে পান ম্যাজিস্ট্রেট। এতে মাতুয়াইলের মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মোঃ শাহানুর করিমের স্বাক্ষর ছিল। তবে সেই চিকিৎসকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান তিনি ওই সময় দশ দিনের মধ্যে সেই মেডিকেল সার্ভিসেস সেন্টারে যাননি, কোন মেডিকেল রিপোর্টে স্বাক্ষরও করেননি। অভিযানে বায়ান্নটি মেডিকেল রিপোর্ট জব্দ করা হয়। এই অপরাধে ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক মোঃ দিদারুল ইসলামকে ছয়মাসের কারাদন্ড এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া ক্লিনিক পরিচালনা করায় হাসপাতালের প্যাথলজি শাখাটি সীল গালা করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।