বিশেষ প্রতিনিধি : বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম মাহফুজুর রহমানকে নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আগামি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাহফুজুর রহমান আবারো দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন, এমন খবরে স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা-কর্মী, মুক্তিযোদ্ধারা সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজরা দেলোয়ার হোসেন বলেন, এস এম মাহফুজুর রহমান বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে এখানে আওয়ামী লীগের ইমেজ ক্ষুন্ন করেছে। তার সেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নারী কেলেংকারির মতো ঘটনায় পুরো উপজেলায় আজ আওয়ামী লীগ প্রশ্নবিদ্ধ। তার মতো প্রার্থী নিয়ে ‘নৌকা’ প্রতীকে এখানকার ঘরে ঘরে ভোট চাওয়ারমত পরিবেশ আমাদের নেই। ক’দিন আগে তিনি এখানে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন “প্রয়োজনে কোটি টাকা দিয়ে হলেও ‘নৌকা’ প্রতীক সহ দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করা হবে” এবং এসবে তার দলীয় মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত। তার মুখে বিষয়টি শুনে এখানকার দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা টেনশনে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজরা দেলোয়ার হোসেন আরো বলেন, চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান টাকার কুমির। টাকার জোরে তিনি পারেন না, এমন কিছু নেই। সংখ্যালঘু পরিবারের এক যুবতির করা তার (চেয়ারম্যান) বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলাও তিনি টাকার জোরে উল্টপাল্ট করে ফেলেছেন। ন্যায় বিচার না পাওয়ায় এখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন মাহফুজুর রহমানের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত। তাছাড়াও এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আরো অনেক নারী কেলেংকারির অভিযোগ আছে। কয়েকজন নির্যাতিত নারী তার বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলাও করেছে।
এখানকার নারী সমাজ তার ওপর ক্ষিপ্ত। এ অবস্থায় দল যদি আবারো তাকেই ‘নৌকা’ প্রতীক দেন, তাহলে এখানে আওয়ামী লীগের আর মানসম্মান কিছুই থাকবে না। দলের সভাপতি হিসেবে আমি তার পক্ষে ভোট চাওয়া সম্ভবই না। কারণ আমি এখানে দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত সুনামের সাথে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমি সংবাদপত্রের মাধ্যমে দলের সভাপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, অন্তত এখানে দলের সুনাম রক্ষার্থে মাহফুজুর রহমানের মতো বিতর্কিত লোককে যেন দলীয় মনোনয়ন না দেওয়া হয়। কারণ আবারো যদি তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, তাহলে পুরো উপজেলার মানুষ তার কাছে জিম্মি হয়ে যাবেন বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সভাপতি জানান।
কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান এখানে যে বদনাম অর্জন করেছেন যদি ফেয়ার নির্বাচন হয়, তাহলে তার জেতা সম্ভব নয়। কারণ এখানকার মানুষ তাকে ভোট দিবে না। তিনি এখানে আওয়ামী লীগের বড় ক্ষতি করেছেন। তার বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারির একাধিক মামলা থানায় হয়েছে।
বিদ্যুৎ চুরির অপরাধে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দেশের শীর্ষ স্থানীয় বেশকিছু পত্রিকায় তার নানা অপকর্মের প্রতিবেদন ফলাও করে ছাপা হয়েছে। তার কারণে এখানকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নানা অপবাদ সইতে হচ্ছে। মাহফুজুর রহমানকে দলের মনোনয়ন না দিতে আমরা দলের হাই কমান্ডের কাছে ইতিমধ্যে লিখিত চিঠি দিয়েছি। তারপরও শুনেছি তিনি নাকি কোটি টাকা খরচ করে দলের মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা টেনশনে আছি। তার মতো বিতর্কিত লোকের জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে হবে, বিষয়টি ভাবতেই দলের প্রতি মন খারাপ হয়। কারণ তাকে বিশেষ করে এখানকার নারী সমাজ একজন সিরিয়াল ধর্ষক হিসেবে চেনেন।
কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মন্নু হাজরা বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি মাহফুজুর রহমানের মতো কুলাঙ্গারদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখার জন্য নই। এখানকার হিন্দু পরিবারের কমলেশের স্ত্রীকে চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ধর্ষণ করে। এ নিয়ে মামলা হয়। হিন্দু সম্প্রদায় তার বিচার দাবি করে মানববন্ধনও করে। কিন্তু মাহফুজুরের টাকার জোরে নির্যাতিতা পরিবারটি বিচার না পাওয়ায়, তারা রাগে ক্ষোভে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে গেছেন। তাছাড়া চেয়ারম্যার মাহফুজুর রহমানের ছেলে বাবু এলাকার মাদক সম্রাট। এই ধরণের লোককে আমরা চেয়ারম্যান হিসেবে আর দেখতে চাই না।
কচুয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী নেত্রী নাজমা সারোয়ার এই প্রতিবেদককে বলেন, হিন্দু পরিবারের কমলেশ এর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। শুনেছি পরে চেয়ারম্যান তাদের সাথে বিষয়টি মিমাংসা করে ফেলেন। ওই হিন্দু পরিবার ভারতে ছিল, এখন কোথায় আছে জানি না। তাছাড়া আমি নিজেও নির্বাচন করবো। তাই চেয়ারম্যানের ব্যাপারে আমি আর কিছু বলতে ইচ্ছুক নই।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের ব্যক্তিগত মুঠোফোন কল দিলে তিনি প্রথমে রিসিভ করলেও বিস্তারিত জেনে পরিচয় গোপন রেখে লাইনটি কেটে দেন। পরে আর ফোন রিসিভ করেননি।