বিএনপি নেতা এনামুল গণপূর্তের মূর্তিমান আতঙ্ক! পর্ব-১

লেখক: সাব এডিটর
প্রকাশ: ৩ years ago

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গণপূর্ত অধিদপ্তরে অনিয়মিত চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর মাধ্যমে যোগদান করা বর্তমান উচ্চমান সহকারী মোঃ এনামুল হক এখন অধিদপ্তরের মুর্তিমান আতঙ্ক। গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী (সংস্থাপন) নন্দিতা রানী সাহাকে ম্যানেজ করে অনেক কর্মচারীকে বঞ্চিত করে পদোন্নতি নেন এনামুল হক। নিজের পদোন্নতি নিয়ে-ই ক্ষ্যান্ত হননি এ কর্মকর্তা। এরপর বিভিন্ন পদোন্নতি ও নিয়োগে নন্দিতা রানীর সাথে হাত মিলিয়ে জাল জালিয়াতি করে অর্থ হাতিয়ে নেন। অধিদপ্তরের চাকরি করেও নিয়ন্ত্রণ করেন বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ। এমনকি অনিয়ম, দুর্নীতি, ভয়ভীতি, জোরপূর্বক গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের যত ইম্প্রভাইজড বাসা আছে তা থেকে প্রতিমাসে মোটা অংকের মাসোয়ারা আদায় করেন তিনি। নন্দিতা রানী সাহার আশকারায় অধিদপ্তরের অন্য প্রকৌশলীদের গণেন না এনামুল হক। নন্দিতা রানীর খেয়াল খুশি মতো যা ইচ্ছে তা করেন এনামুল হক।

 

জানা গেছে, ২০০৪-২০০৫ দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে শ্রমিক দলের ব্যানার থেকে সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। কিন্তু অতি কূটকৌশলী হওয়ায় নব্য আওয়ামী লীগার সেজে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বনে গিয়ে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে তদবির বাণিজ্য, বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ বাগিয়ে দিয়ে বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

 

গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মোঃ এনামুল হক নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য আহমেদ কবিরুল ইসলাম নামে এক হিসাব সহকারি এর সাথে যোগসাজসে তার ভাই জাফর আলী কাঠ মিস্ত্রীর হেল্পার অফিস কম্পাউন্ডে দখল করে ভাড়া দিয়ে রেখেছে এবং ইলেকট্রিশিয়ান মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এর বাসাটি এনামুলের শ্যালক শাহজালালকে ১২ তলা অফিস কম্পাউন্ডের ৩ নং সেডের বাসাটি জোরপূর্বক ভাড়া দিয়েছে। উল্লেখ্য তার শ্যালক শাহজালাল কোন সরকারি কর্মচারী নয়। ১২ তলার পূর্ব পার্শ্বে কোর্ট অফ সেটেলমেন্ট অফিস সংলগ্ন একটি সরকারি বাসায় আহমেদ কবিরুল ইসলামকে দিয়েছেন এবং এনএসআই অফিস সংলগ্ন একটি বাসা দখল করে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন যদিও সেখান থেকে তারা কোন ধরনের বাসা ভাড়া, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল কিছুই কর্তন করান না। ফলে এনামুলের জন্য সরকার লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছেন। মোঃ এনামুল হকের নিকট আত্মীয় স্বজনের নামে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স করিয়ে দেন এবং এই লাইসেন্সের বিপরীতে তার কর্মস্থল গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগসহ বাংলাদেশ সচিবালয়, শেরেবাংলা সার্ভিস কমপ্লেক্স এ অবস্থিত গণপূর্ত বিভাগ-২ এ অনেক কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। এসব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের একটি হচ্ছে মেসার্স আমীন ট্রেডার্স, ১/১০, ব্লক-এফ জয়েন্ট কোয়াটার, মোহাম্মদপুর।

 

গত বছর ২১/১০/২১ইং তারিখে ১০০৬ নং স্মারকের মাধ্যমে ৭,৩৪,৭৫০.৪৮৩ (সাত লক্ষ চৌত্রিশ হাজার সাতশত পজ্ঞাশ এবং দশমিক চার আট তিন) টাকার কাজ বাগিয়ে নেন। বিএনপিপন্থী এনামুলের এহেন অপকর্মের জন্য, তার আগ্রাসী ছোবলের হাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় একাধিক জিডি করা হয়। সেগুনবাগিচার শুকতারা হোটেলটি মূলত কর্মচারীদের সম্পদ। আর এই কর্মচারীদের সম্পদ এবং সুফল ভোগ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বছরের পর বছর ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ করেন মোঃ এনামুল হক।

 

এই ক্যান্টিনটি পরিচালনা করতেন মোঃ হারেজ ভূঁইয়া। এনামুল হক এর চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে বিদ্যুতের লাইন কেটে দেন এবং তার প্রাণনাশের হুমকিও দেন। এক পর্যায়ে প্রাণনাশের ভয়ে রমনা মডেল থানায় নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ভুক্তভোগী। যার নং- ২৭৭ তারিখ ০৮/০৬/২০১।

 

নাম না প্রকাশ না করার শর্তে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের এক কর্মচারী বলেন মোঃ এনামুল হক তার বহিরাগত বিভিন্ন বন্ধু বান্ধব নিয়ে অফিসে প্রতিনিয়ত মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন আড্ডায় মগ্ন। কিন্তু তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে কথা বলার জন্য মোঃ এনামুল হকের মোবাইলে বার বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আরো জানা গেছে, বিএনপির নেতা এনামুল হক টেন্ডার বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন এবং তার সহযোগী হিসেবে গণপূর্ত প্রশাসন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর নাম ও তাদের দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এসব বিষয়ে জানতে এনামুল হককে ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন...