বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, দেশ ও জাতি এক চরম ক্লান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই দুঃসময়ে প্রখ্যাত বরেণ্য সাংবাদিক দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও পরিবেশবিদ, শিক্ষক মাহফুজ উল্লাহ সাহসী ভূমিকা পালন করে আমাদেরকে উজ্জীবিত করতেন। আমাদের এই দুঃসময়ে তাহার সাহসী ভূমিকা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত যোগান দিয়েছে। এমন এক অসময়ে সেই সাহসী কন্ঠ বন্ধ হয়ে গেল। এই ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে কথা ও কলমের দ্বারা মোকাবিলা করে যাচ্ছিলেন এই নির্ভিক সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। চলমান এই অস্থির সময়ে তার মতো একজন সাহসী মানুষের বেঁচে থাকা আজ বরই প্রয়োজন ছিল। জুলুম শাহীর বিরুদ্ধে মাহফুজ উল্লাহর আপোষহীন ভূমিকা দেশ ও জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ রাখবে তাহাকে।
মাহফুজ উল্লাহ স্মৃতি পরিষদ আয়োজনে বরেণ্য সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর স্বরণে তিন দিন ব্যাপী কর্মসূচী যেমন:- তিনদিন ব্যাপী কোরআন খতম, ইফতার, এতিম-অসহায়-গরিব ও পথ শিশুদের মাঝে খাবার সামগ্রী বিতরন এবং একটি স্বরণিকা “স্মৃতির পিঞ্জরে” প্রকাশনা উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের ২৬শে রমযান, ১লা জুন ২০১৯, রোজ শনিবার, বিকেল ৪:০০ টায় এ কর্মসূচীর উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান (প্রথম দিন) নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত উদ্ধোধনী কর্মসূচীর প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি রিজভী আহমেদ উপরোক্ত কথা বলেন। আজকের ইফতার বিতরণ ও দোয়া মাহফিল প্রথম দিনের কর্মসূচীটি সার্বিক সহযোগীতায় আয়োজন করেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক, উক্ত স্মৃতি পরিষদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মাহফুজ উল্লাহ স্মৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার ও সঞ্চালনায় মোঃ আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদ। উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট অধ্যাপক আবদুল আউয়াল ঠাকুর, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন লেখক ও সাংবাদিক, জেষ্ঠ্য রাজনৈতিক প্রতিবেদক কাফি কামাল, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজের) সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ দিদারুল আলম, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সম্পাদক মামুন হোসেন ভূঁইয়া, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান রয়েল, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন শাওন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-পাঠাগার সম্পাদক মোঃ সোহেল আলম, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক তৌহিদ আউয়াল। কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা শাহ আলম ও মাওলানা ইব্রাহিম খলিল এবং মোনাজাত পরিচালনা করবেন হযরত মাওলানা মির্জা ইয়াসির আরাফাত।
রিজভী আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, মাহফুজ উল্লাহ স্মৃতি পরিষদ গঠনের জন্য মুল উদ্যোগদাতা মাহফুজ উল্লাহ সহচর তার বিভিন্ন বইয়ের প্রকাশক, ডিইউজের সদস্য মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার তাহার অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে এই স্মৃতি পরিষদ গঠিত হয়। উক্ত পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান তাহার সার্বিক তত্ত্বাবধানে গঠিত হয়েছে। এছাড়া আরোও যারা সহযোগীতা করে যাচ্ছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, মাহফুজ উল্লাহ স্মৃতি পরিষদ তাঁহার আদর্শ ও শিক্ষাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে এই স্মৃতি পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ সময় তিনি স্মৃতি পরিষদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী (সিলেট) তার প্রশংসা করে বলেন, মাহফুজ উল্লাহর স্বরণে বিশেষ করে আজকের তিন দিনের কর্মসূচী ঘোষণার প্রথম দিনের এই কোরআন খতম, দোয়া ও ইফতার মাহফিল এবং এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
স্মৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার তাঁহার বক্তব্যে মাহফুজ উল্লাহর কর্মময় জীবনের আলোচনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, বরেণ্য সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ আজ আমাদের মাঝে নেই, সেই বিষয়টি আমি এখনও বিশ্বাস করে নিতে পারিনি। তাহার সাথে সর্বশেষ কথা ও স্বাক্ষাত হয় ৩১শে মার্চ ২০১৯। সে আলোচনায় বেগম খালেদা জিয়ার আত্মজীবনী “হার লাইফ, হার স্টোরি” বইটি বাংলায় অনুবাদ শেষ করে প্রকাশনা করা সহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়। তারই সাথে এবার একুশে বই মেলায় তাহার জীবনের শেষ একটি বই প্রকাশ করেছি বইমেলায়। এভাবে তাঁহার কয়েকটি বই আমাদের সুখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দি ইউনিভার্সেল একাডেমি থেকে প্রকাশ করেছি বেগম খালেদা জিয়ার এই আত্মজীবনী সহ। এর মধ্যে ২ এপ্রিল তাঁহার সাথে সাক্ষাতের কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ দুপুরের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় মাহফুজ উল্লাহর সাথে আর দেখা সাক্ষাৎ বা কথা বলার মতো কোন সুযোগ হয়নি। হয়েছে তার জীবনের শেষ বিদায় জানাযায় অংশগ্রহণ করা। মাহফুজ উল্লাহর মতো কর্ণজন্মা মানুষ আর সহজে এই বাংলায় জন্ম নিবে না। একজন মেধাবী সাংবাদিক, পরিবেশবিদ সহ সাংবাদিকতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন তা জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করবে। উক্ত পরিষদ গঠন করতে যাদের সহযোগিতা পেয়েছি তাহাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তারই সাথে আজকের প্রথম দিনের কর্মসূচী সার্বিক সহযোগীতাকারি অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
রিজভী আহমেদ বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। এ সরকার কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সরকার ও প্রশাসন কৃষকের সাথে তামাসা করেছে। তিনি বলেন, কারামুক্তি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি কামনা করে বলেন, এই সরকার খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রমযানে খালেদা জিয়াকে ঠিকমতো সেহেরী ও ইফতার খেতে দিচ্ছে না। এর জন্য একদিন এই সরকারকে আসামীর কাঠগোড়ায় দাড়াতে হবে। সারাদেশে বিরোধীদলীয় নেতা কর্মীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। জনগণের মনে শান্তি নেই। দেশের জনগণ এই সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলনের অপেক্ষায় রয়েছে।
রিজভী আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা নাসিমের মন্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে। এ জন্য নাসিম বেসামাল মন্তব্য করে মিথ্যার জালে সরকার নিজে আবদ্ধ হয়ে পাগলের ন্যায় কথা বলে বিএনপিকে দায়ি করে সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করতে চাচ্ছে।
রিজভী আহমেদ বলেন, জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রতি মাহফুজ উল্লাহর ত্যাগকে স্বরণ করে তিনি বলেন, এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে তিনি মাহফুজ উল্লাহ যে বইটি “হার লাইফ, হার স্টোরি” লিখেছেন তার তুলনা হয় না। এই বইয়ের পাতায় পাতায় মাহফুজ উল্লাহর মেধা খুজে পাওয়া যায়। এ বইটি বর্তমান দেশের প্রেক্ষাপটে দেশজাতি ও জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীদের মাঝে একটি অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তুলেছে।