
তদন্ত চিত্রঃ তিনি আরেক লম্পট পরিমল ওরফে সাইদুর রহমান। সেই লম্পট পরিমল জেলে গেলেও এই লম্পট শিক্ষকের ছাত্রী ও শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানীর ব্যাপারে তেমন কিছুই হয়নি। নামে মাত্র তদন্ত! মূল ঘটনা আড়াল করে তদন্ত কমিটি অপরাধীর পক্ষ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ থাকলেও তা বারবার অস্বীকার করছেন তদন্ত কমিটি।
তবে এই দ্বায়সারা তদন্ত কমিটির গতিবিধি সন্দেহজনক ভুক্তভোগিদের কাছে। তদন্ত কমিটি তদন্তের নামে লম্পট নারীবাজ সাইদুর রহমানের চাকরির মেয়াদ শেষ করে দ্বায়সারা প্রতিবেদন দিবেন বলে অনেকেই মনে করছেন। অবশেষে সেই নারীবাজ লম্পট সাইদুর রহমানের বিচারের দাবীতে রাস্তায় নামলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। তারা এই নারীবাজ শিক্ষকের বিচার দাবী করেন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে। এখন দেখার পালা এই নারীবাজের টাকা আর ক্ষমতার কাছে বিচারের বানী কি নিরবে কাঁদে কিনা! লম্পট সাইদুর রহমানের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও থেমে থাকবে না।

এক ছাত্রী’র সাথে একান্তে সাইদুর!
একাধিক শিক্ষিকা ও নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে রাজধানীর কমার্স কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান সাইদুর রহমানের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্প্রতি মিরপুরে কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে দোষী শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, পরিষদের ডিরেক্টর-লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লবি অ্যাডভোকেট মাকছুদা আখতার, সংগঠনের আন্দোলন সম্পাদক লাইলা খালেদা, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা, মহিলা পরিষদ নেতা অ্যাডভোকেট দিপ্তী শিকদারসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মহিলা পরিষদের নেতারা বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত করতে হবে। চাকরিতে বহাল রেখে তদন্ত করা হলে তা প্রভাবিত হবে। তাই অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত এবং সুষ্ঠু তদন্ত করে শিক্ষককে আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তি দিতে হবে।
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অভিযোগ, এই শিক্ষক ছাত্রীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে যৌন নিপীড়ন চালিয়ে আসছেন। শুধু ছাত্রীই নয় তার যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন নারী শিক্ষকও।
এরই একপর্যায়ে গত জুন মাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়। এরপর গত আগস্টে মহিলা পরিষদের কাছে অভিযোগ করেন একজন নারী প্রভাষক।
এ ব্যাপারে ঢাকা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শফিকুল রহমান বলেন, ‘এরই মধ্যে কলেজের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি পাঁচ-ছয়টি মিটিং করেছে। নিশ্চয় তারা কাজ করছে। আমি লজিস্টিক যত সাপোর্ট দরকার দিচ্ছি। তদন্তের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। আশা করছি দ্রুত এই বিষয়ে রিপোর্ট পাওয়া যাবে।’
সাইদুর রহমানের যত অভিযোগঃ
ঢাকা কমার্স কলেজের অধ্যাপক সাইদুর রহমান এক দিন সন্ধ্যায় ফোন করেন তারই একজন নারী সহকর্মীকে। ওই নারী তখন সবেমাত্র প্রভাষক হিসেবে কলেজে যোগ দিয়েছেন। মুঠোফোনে সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমার ওষুধ ফুরিয়ে গেছে। মোহাম্মদপুরে ওষুধ কিনতে যাব। আমার তো এক চলাফেরায় সমস্যা, বাসায় কেউ নেই। তুমি কি আমার সঙ্গে যেতে পারবে?’ ওই নারী প্রভাষক বুঝে উঠতে পারেন না কী বলবেন। একপর্যায়ে সাইদুর রহমান খুব করে বললে, ওই নারী প্রভাষক তার সঙ্গে মোহাম্মদপুরে যেতে রাজি হন।
ষাট পেরিয়ে যাওয়া সাইদুর রহমানকে তিনি বাবার মতো শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু এরপর যা ঘটে, তাতে ওই নারী প্রভাষক রীতিমতো চমকে ওঠেন। ঘৃণাও তৈরি হয় বাবার মতো জানা ওই শিক্ষকের ব্যাপারে।
এসব বিষয় উল্লেখ করে কলেজের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ওই নারী প্রভাষক। কিন্তু অজানা কারণে তার অভিযোগের কোনো দৃশ্যমান তদন্ত হয়নি। ওদিকে অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া সাইদুর রহমানও দিনকে দিন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ওই নারী প্রভাষক ছাড়াও আরও অনেক নারী সহকর্মীকে তিনি যৌন হয়রানি করেন। গুরুতর অশালীন আচরণের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগ কলেজের কমিটি ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মানবাধিকার কমিশন ও জাতীয় মহিলা পরিষদেও জমা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় মহিলা পরিষদ অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে সাইদুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
