মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয়ী হয়ে আবারও হোয়াইট হাউজে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার জয়ের পর থেকেই বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে, এবার বন্ধ হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দুই দেশের চলমান এই সংঘাতে ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোটি কোটি ডলার সহায়তা দেয়া নিয়ে ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ব্যাপক সমালোচনা করেছেন।
তিনি একবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি এ যুদ্ধ শেষ করবেন। এবার গুঞ্জন উঠেছে, যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের সঙ্গে বসতে চান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রাশিয়ার সাবেক ও বর্তমান পাঁচ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় ট্রাম্পের সঙ্গে বসতে কিছু শর্ত আছে পুতিনের। এর মধ্যে আছে, রাশিয়ার দখল করা ইউক্রেনের ভূখণ্ডগুলো নিয়ে বড় কোনো ছাড় না দেয়া এবং কিয়েভের পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেয়ার ইচ্ছা ত্যাগের বিষয়।
গত ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। তবে নির্বাচনের আগে ট্রাম্প রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার কথা জানিয়েছিলেন।
তবে ওই কর্মকর্তারা জানান, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় কোনো চুক্তি হলে, তাতে ইউক্রেনে চলমান সম্মুখসারির যুদ্ধ বন্ধে রাজি হতে পারে ক্রেমলিন। পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন অঞ্চল ভাগাভাগির বিষয়েও আলোচনার সুযোগ রাখা হবে। এই চার অঞ্চলকে বর্তমানে নিজেদের বলে দাবি করে রাশিয়া।
এছাড়া খারকিভ ও মিকোলাইভের যেসব এলাকা রাশিয়ার দখলে রয়েছে, সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারেও রাজি হতে পারে ক্রেমলিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার পর যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত কোনো চুক্তি না হলে, রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যাবে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে সূত্র।
গত মঙ্গলবার রাশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার দিন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, পুতিন ইতিমধ্যেই বলেছেন, কোনোভাবেই সংঘাত বন্ধ হবে না। যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়াকে এক ছাতার নিচে একমাত্র ট্রাম্পই আনতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন তার যোগাযোগবিষয়ক পরিচালক স্টিভেন চেউং।
সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া চায় না ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিক বা ইউক্রেনের ভূখণ্ডে ন্যাটো সেনারা অবস্থান করুক। কিয়েভ এই শর্ত মেনে নিলে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে চায় মস্কো। এ ছাড়া ইউক্রেনকে নিজেদের সামরিক বাহিনীর আকার কমানো এবং দেশটিতে রুশভাষীদের বাধা না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে ক্রেমলিনকে। ইউক্রেনের ১৮ শতাংশ অঞ্চল এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। অপর দিকে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের মাত্র ৬৫০ বর্গকিলোমিটারের মতো নিয়ন্ত্রণ করছে কিয়েভ।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পুতিন এমন একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হতে পারেন, যেখানে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনের বেশির ভাগ অঞ্চল মস্কোর অধীন থাকবে।