“মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পূণ:প্রবর্তনকারী, ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ কালজয়ী দর্শনের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার, সফল রাষ্ট্রনায়ক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৭তম শাহাদৎবার্ষিকীতে আমি তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। শহীদ জিয়ার অম্লান আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং দেশীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির রক্ষাকবচ।
তাঁর জীবিতকালে জাতির চরম দুঃসময়গুলোতে জিয়াউর রহমান দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার বীরোচিত ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা এবং রাষ্ট্র গঠনে তাঁর অনন্য কৃতিত্বের কথা আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। ৭১’ সালে সারা জাতি যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, অথচ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ দিশেহারা, ঠিক সেই মুহুর্তে ২৬শে মার্চ মেজর জিয়ার কালূরঘাট বেতার কেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষনা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের অভয়মন্ত্রে উজ্জীবিত করে, ফলশ্রুতিতে দেশের তরুণ, ছাত্র, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্বাধীনতাত্তোর শাসকগোষ্ঠীর দমনমুলক শাসন শোষনের যাঁতাকলে মানুষের প্রাণ হয় ওষ্ঠাগত, দেশের মানুষের একের পর এক গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা হরণ করা হয়, দেশ একদলীয় একনায়কতান্ত্রিক শাসনের নিষ্ঠূর কবলে পড়ে পিষ্ট হতে থাকে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়। সেই সময় দেশের সর্বত্র ভয়াবহ নৈরাজ্য নেমে আসে। গণতন্ত্র হত্যা ও অরাজকতার অমানিশার দুর্যোগের মুখে দেশের সিপাহী-জনতার মিলিত শক্তির মিছিলে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হন। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করে ফিরিয়ে দেন বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্র ও নাগরিক স্বাধীনতা। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা করেন। উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করেন। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির আখ্যা থেকে খাদ্য রপ্তানীকারক দেশে পরিণত করেন। ব্যক্তিজীবনেও দূর্নীতি, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও সুবিধাবাদের কাছে আত্মসমর্পণকে তিনি ঘৃণা করতেন। তাঁর অন্তর্গত স্বচ্ছতা তাঁকে দিয়েছে এক অনন্য ঈর্ষণীয় উচ্চতা। তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কারের কারনেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি স্থাপিত হয়।
এই মহান জাতীয়তাবাদী নেতার জনপ্রিয়তা দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারী শক্তি কখনোই মেনে নিতে পারেনি। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই অশুভ চক্র তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে দেশবাসী হারায়। তবে চক্রান্তকারীরা যতই চেষ্টা করুক কোন ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেই তিনি বিস্মৃত হন না বরং নিজ দেশের জনগণের হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে অবস্থান করেন। নিখাদ দেশপ্রেমিক এই মানুষটিকে কেউ কখনো তাঁর বিশ্বাস থেকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি। তিনি সারাজীবন আদর্শকে বুকে ধারণ করে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে গেছেন।
বর্তমান অনৈতিক সরকার একদলীয় সরকারের আদলে দেশ পরিচালনা করছে। কেন্দ্রীভূত স্বৈরতন্ত্রের প্রতিভূ বর্তমান সরকার। এরা নতূন কায়দায় পুরানো বাকশালকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। বিরোধী দলের অধিকার, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভূলুন্ঠিত করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সেজন্য দেশনেত্রীকে মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সাজানো মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। এ যেন গণতন্ত্রকেই কারাগারে আটকিয়ে রাখা। জনমনে ভয় আর আতঙ্ক সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালানো হচ্ছে। এমতাবস্থায় হারানো গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারে সকল গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারের আপোষহীন নেত্রী কারাবন্দী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আবারও তাঁর নেতৃত্বে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। জাতীয় জীবনের চলমান সংকটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, নির্ভিক নির্মোহ রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তির ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমনের পটভূমিতে তাঁর আদর্শ, দেশপ্রেম, সততা ও কর্মনিষ্ঠাকে জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবার ৩০ মে মহান নেতার শাহাদৎবার্ষিকী সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহসহ সকল স্তরের জনগণের প্রতি আমি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”