তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে সরকার দলীয় প্রভাবশালীরা সরকারি খাস সম্পত্তির বাণিজ্য করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্র জানায়, প্রভাবশালী জনৈক জুবায়ের ও রবিউল (মাস্টার) ও আলাউদ্দিন আলীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী ভূমিগ্রাসী সিন্ডিকেট চক্র। উপজেলা যুবলীগের বিতর্কিত এক নেতা এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছে আর অপর নেতা তাকে শেল্টার দিচ্ছে। এসব কারণে তাদের এই ভূমিদস্যুতা দেখেও না দেখার অভিনয়ে প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে। আবার এই ভূমিগ্রাসী চক্রের খপ্পড়ে পড়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে। সরেজমিন অনুসন্ধান করলেই এসব অভিযোগের সতত্যা পাওয়া যাবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আবার একদিকে সরকারি খাস সম্পত্তি নিয়ে বাণিজ্য করে এই সিন্ডিকেট চক্র সাধারণ মানুষের পকেট কেটে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে এসব সম্পত্তির দখল নিয়ে হামলা-মামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় শান্তিপ্রিয় জনপদের মানুষের মধ্যে অশান্তি এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। অথচ এই ভূমিগ্রাসী চক্র সরকারি খাস সম্পত্তি বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিজেরা ফুঁলেফেঁপে ঊঠছে। আর তাদের অপকর্মের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারি দল ও সরকারের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব ফুটে ঊঠেছে, আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও বিশাল অর্জন উবে যাচ্ছে। তানোরের বাধাইড় ইউপির হাপানিয়া মৌজায় ৩৩ শতক সরকারি খাস কৃষি জমি প্রায় ১২ বছর ধরে ভোগদখল করে আসছিলেন ভূমিহীন সেলিম। কিন্তু জনৈক রবিউল মাস্টার রাতারাতি তার কাছে থেকে জোরপূর্বক ও প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই জমির দখল নিয়ে বহিরাগতদের কাছে পজিশন বিক্রি করে প্রায় ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও প্রচার রয়েছে।
জানা গেছে, মাঠের চারপাশে তিন ফসলী জমি। মাঝে মাঝে গড়ে তোলা হয়েছে একটি করে বসত ঘর। কোথা গড়ে উঠেছে গ্রাম। যাতাযাতের নেই কোন রাস্তা। এমন চিত্র হাজারো দেখা মিলবে রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে গ্রামে বিভিন্ন মাঠে। সরকারী খাস জমি দখল করে যে যার মত গড়ে তুলছে বসতি। গড়ছে ছোট খাটো গ্রামও। গ্রামে এখন যেন চলছে খাস জমি দখলের মহোৎসব। এসব বসতিতে বসবাস করা ব্যাক্তিরা কোন ভূমিহীন পরিবারে নয়, তারা দখলদারী। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিরা গ্রামে থাকা কিছু পরিবারকে উৎসাহ দিয়ে টাকার বিনিময়ে সরকারী খাস জমি দখল করে দিচ্ছে। শুধু সরকারী খাস জমিই নয়, দখলদারদেও থেকে রেহায় পাচ্ছে না ব্যক্তি মালিকানা জমির মালিকেরাও। এসব কাজে জড়িত ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজে স্থানীয় গুটি কয়েকজন সরকার দলীয় নেতা কিছু ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড কাউন্সিলেরা টাকার বিনিময়ে ভূমি দখলদারদের সহযোগিতা করে থাকেন বলে দীর্ঘদিনে অভিযোগ। তবে রাজশাহী জেলার চারঘাট, বাঘা পুঠিয়া, বাগমারা দুর্গাপুর মোহনপুর তানোর গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলায় কত একর খাস জমি বেদখল হয়েছে এর কোন পরিসংখ্যান নেই ভূমি অফিস গুলোতে।
সরেজমিন গত কয়েকদিনে রাজশাহী জেলার তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তিন ফসলি জমির মধ্যে এক চিমঠে সরকারী খাসজমি যেখানেই রয়েছে সেখানেই দখল করা হয়েছে। বসত বাড়ি দেখলে মনে হবে এ যেন দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। যে যার মতো করে জমি দখল করে সেখানে কাঁচা-আধাপাকা ও পাকা স্থাপনা তুলছে। এর মধ্যে তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নে সরকারী খাস জমি বেশি দখল হয়েছে। গতকাল বাধাইড় ইউনিয়েরে হাফানিয়া মৌজায় একটি আধা-পাকা বসতি তৈরি করছিলেন একই গ্রামের আলম নামের এক ব্যক্তি। কথা হয় তার সাথে তিনি জানান, এখানে চার শতক খাস জমি ছিল। স্থানীয় এক প্রধান শিক্ষক ও তানোর উপজেলা যুবলীগের এক জৈষ্ঠ নেতার কাছে থেকে তিনি নিয়েছেন। তবে কত অর্থের বিনিময়ে তিনি জমি নিয়েছেন তা বলতে চাননি তিনি। তবে তিনি বলেন, তার এ জমির কোন কাজপত্র নাই। শুধু একটি ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প আছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রানিহাটি গ্রামের জমসেদ আলী। তার ক্রয়কৃত পাঁচ বিঘা জমি তানোর উপজেলার উচাডাঙ্গা মৌজায় রাস্তা ঘিষে রয়েছে। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিনি চাষাবাদ করে আসছেন হঠাৎ’ গত বছর রাস্তার ধারে থাকা প্রায় এক বিঘা জমিতে রাতারাতি কয়েকটি বসত ঘর গড়ে উঠে। সংবাদ পেয়ে ছুটে আসেন। থানা ও স্থানীয় চেয়ারম্যান কাছে জমি উদ্ধারে দীর্ঘদিন ধরে ঘুরেন। কিন্ত আজও তার নিজের ক্রয়কৃত জমি থেকে দখলদারদের উঠাতে পারেনি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দখলদার বলেন, তারাও সেই প্রধান শিক্ষক ও যুবলীগ নেতার কাছে থেকে নগদ অর্থে কিনেছেন।
তানোর উপজেলার কৃষ্পুর গ্রামের আব্দুর মান্নান জানান, তার নিজে অনেক জমি রাস্তা ঘিষে রয়েছে। দখলদারদের জবর দখল দেখে ভয়ে সেগুলো পুকুর কেটে নিয়েছেন। তিনি আরো জানান, প্রতি জমির মালিকের মধ্যে কিছু না কিছু সরকারী খাস জমি রয়েছে। তার পরিমাণ হয়তো এক থেকে পাঁচ শতক হবে। আর এসব দেখে এক শ্রেনীর প্রতারক গ্রামের সহজ সরল মানুষকে জমির লোভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন রাতারাতি বসত বাড়ি তুলতে সহযোগিতা করছে।
এমন ঘটনা শুধু তানোর উপজেলায় নয়, রাজশাহীসহ পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলে মাঠে মাঠে সরকারী খাস জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। দখল হচ্ছে শহরের মধ্যেও। দখল হয়ে যাচ্ছে নদী নালা-খাল বিলসহ নানা সরকারী স্থাপনা। রাজশাহীর তানোর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মামুন, সরকারী খাস জমি বেদখল হওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, আমরা প্রতি মাসেই কিছু না কিছু খাস জমি উদ্ধার করছি। অনেক দলখদার আদালতে মামলা করেছেন। মামলার কারণে বেশকিছু জমি উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। খাস জমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় আইনগত জটিলতা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও জানান, আমাদের ভূমি অফিসের কোন ব্যক্তি এসব জবরদখলের মধ্যে থাকার প্রমাণ পেলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে কি পরিমাণ জমি দখলদারদের মধ্যে রয়েছে সে বিষয়ে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেন নি। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও তানোর আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা শরিফ খাঁন বলেন, এসব ভূমিদস্যুদের এসব অপতৎপরতার কারণে আওয়ামী লীগ বা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে এটা কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি এ বিষয়ে সরেজমিন তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।