আরিফুল ইসলাম আরিফঃ সাবেক সংসদ সদস্য মো: শওকত চৌধুরী এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (ভারপ্রাপ্ত) ৯ জনের বিরুদ্ধে ব্যাংকের ১২০ কোটি ৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অপরাধে চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা উপ-পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, গতকাল মঙ্গলবার কমিশনের বৈঠকে চার্জশিটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করবেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। কমার্স ব্যাংকের ১২০ কোটি ৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৬ সালের ১০ মে ৯ জনকে আসামি করে বংশাল থানায় মামলা করে দুদক।
মামলায় শওকত চৌধুরী ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেনÑ কমার্স ব্যাংকের বংশাল শাখার সাবেক ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা ব্যবস্থাপক (চাকরিচ্যুত) মো: হাবিবুল গনি, সাবেক ফার্স্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার ও বৈদেশিক বাণিজ্য কর্মকর্তা শিরিন নিজামী, সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (চাকরিচ্যুত) দেবাশীষ কুমার বাউল, প্রধান কার্যালয়ের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট পানু রঞ্জন দাস, সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (চাকরিচ্যুত) মো: শফিকুল ইসলাম, সাবেক ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (চাকরিচ্যুত) ইফতেখার হোসেন এবং সাবেক এক্সিকিউটিভ অফিসার আসজাদুর রহমান।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা ব্যাংকিং আইন-কানুন ভঙ্গ করে অবৈধভাবে তিনটি পিএডি সৃষ্টি করে ব্যাংকের ৫৫ কোটি ৪৩ লাখ ১২ হাজার ৮৮০ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া ২৬টি এলসির (ঋণপত্র) বিপরীতে অন্যায়ভাবে ৩৫টি এলটিআর (লোন ট্রাস্ট রিসিট) সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যাংকের ৩৪ কোটি ৯৩ লাখ ৭ হাজার ৩৫১ টাকা আত্মসাৎ করেন।
বর্ণিত ২৯টি এলসির শর্ত মোতাবেক গ্রাহকের কাছ থেকে মঞ্জুরিপত্র সম্মতির টোকেন, চার্জ ডকুমেন্ট, এমআইসিআর চেকসহ জামানত মর্টগেজ এবং শওকত চৌধুরী ও তার স্ত্রী মোছা: মাহবুবা খাতুনের গ্যারান্টি, আন্ডারটেকিং গ্রহণ করা হয়নি। এ ছাড়া ডিঅ্যান্ডবি থেকে সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট রিপোর্ট এবং হালনাগাদ সিআইবি গ্রহণ করা হয়নি।
শওকত চৌধুরী সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একই জমি/সম্পত্তি প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে জাল দলিল করে তা খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংকে মর্টগেজ দেন। ব্যাংক কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ঋণ শ্রেণীকরণ বা বিএল আড়াল করার জন্য শওকত চৌধুরীকে দীর্ঘমেয়াদি অবৈধ আর্থিক সুবিধা প্রদানের জন্য অন্যায়ভাবে নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য বা অপরকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব চরমভাবে লঙ্ঘন করে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয়ে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড বংশাল শাখায় ২৯টি আমদানি এলসি খোলেন। এলসি খোলার সময় ব্যাংক কর্তৃক মঞ্জুরিপত্রের শর্ত মোতাবেক এলসি মার্জিনসহ গ্রাহকের কাছ থেকে মঞ্জুরিপত্রের সম্মতি টোকেন, চার্জ ডকুমেন্ট, জামানত ইত্যাদি গ্রহণ করা হয়নি। এ ছাড়া আসামি শওকত চৌধুরী অন্য ব্যাংকে বন্ধক প্রদানকৃত জমির জাল কাগজপত্র দাখিল করে সহায়ক জামানত প্রদান করেন। ওই এলসিগুলোর বিপরীতে সুদ ছাড়া ব্যাংকের পাওনা ৯৩ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ২৩১ টাকা, যা সুদসহ ১২০ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ৯৮৯ টাকা আত্মসাৎ করেন।