
আমির হোসেনঃ ২০ বছর অনেকটা সময় কত হাসি, কান্না, আশা, হতাশা সবকিছু ছাপিয়ে চলে গেল এক একটা মূল্যবান সময়। আজ আমরা সবাই এক একটা প্লাটফর্মে দাড়িয়ে যে যার মত ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত সময় অতিক্রম করছি। একটু পিছন ফিরে তাকালেই দেখবে স্কুলের গন্ডি পেড়িয়ে ক্যারিয়ার গড়তে গড়তে কখন যে ২০ বছর নেই তা টেরই পাওনি। গত (১৯ জুলাই) এত বছর পর স্কুল জীবনের বন্ধুদের সাথে দেখা। মনে হচ্ছে আয়নায় নিজেকে আবার দেখছি।১৯৯৯ সালের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মিলনমেলা আজ। স্মৃতিপটে ভাসছে স্কুল জীবনের সুখময় স্মৃতি। বুকের ভেতর ফাঁকা কুচকাওয়াজ বাজছে। আবেগের অশ্রুতে কারো চোখ ছলছল, আনন্দে কেউবা বাকহীন। ২০ বছর পরে বন্ধুকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে শুধু একটাই প্রশ্ন, “বন্ধু তুই কেমন আছিস?”।
বলছি ৯৯-গেট-টুগেদারের কথা। গত (১৯ জুলাই) শুক্রবার হয়ে গেল মানিকনগর মডেল হাই স্কুলের দ্বিতীয় ব্যাচ (১৯৯৯ সাল) এর গেট-টুগেদার অনুষ্ঠান। জুম্মার নামাজের পর শুরু হয় অনুষ্ঠান। উপস্থিত ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মোসাঃফেরদৌসি ইয়াসমিন ও ১৯৯৯ সালের সেই শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ। আরোও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোশারফ হোসেন বাহার সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ গন।
প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ডাঃ ইফ্ফাত জাহান শিমু (৯৯ ব্যাচ, বিজ্ঞান শাখা), পরিচালনায় মোঃ নিজামুল হক সবুজ(৯৯ ব্যাচ, মানবিক শাখা),সার্বিক সহযোগিতায়
আব্দুল লতিফ পলাশ( ৯৯ ব্যাচ), মোঃ সামসুল আরেফিন রুবেল, প্রোগ্রামের সার্বিক দায়িত্বে মোঃ মমিনুল ইসলাম (৯৯ ব্যাচ, বিজ্ঞান শাখা)।
৪টি ধাপে ছিল এই অনুষ্ঠান। কেক কাটার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের সূচনা পর্ব। এরপর দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্ব শেষ করে তৃতীয় পর্বে বসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আড্ডা পর্ব।
একটা সময় ছিল যখন শিক্ষক ও আমাদের মাঝে দূরত্ব ছিল। শিক্ষক থাকত চেয়ারে বসা আর আমরা একঝাঁক ছাত্র-ছাত্রীরা বেঞ্চে বসে ক্লাশ করতাম। কিন্তু এখন একসাথে পাশাপাশি বসে চলছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্লাশ তবে সেটা পাঠ্য বইয়ের নয়, জীবনের পাঠ্য বইয়ের স্মৃতিচারণ। চলছিল জীবনের পাড় হয়ে যাওয়া ২০ বছরের এক একটি বৃক্ষের বেড়ে উঠার গল্প, শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের সুখময় স্মৃতির অধ্যায়। এরইমধ্যে সুপ্রজিত স্যার আমাদের সকলকে আইসক্রিম এনে খাওয়ালেন। ভালই চলছিল শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের আড্ডা কিন্তু সময়টা বোধহয় আমাদের সাথে হিংসা করছিল। সময় জানান দিচ্ছিল শিক্ষকদের এবার বিদায়ের পালা।
যথারীতি শিক্ষকদের বিদায় পর্ব শেষ করে আমাদের বন্ধুদের নিয়ে শুরু করি অনুষ্ঠানে শেষ পর্ব নিজেদের মধ্যে আড্ডা ও পুরস্কার পর্ব। ২০ বছর পর অনেকের সাথে দেখা সবার মাঝেই পরিবর্তন তবে সেটা শুধু দৈহিক গঠনের কিন্তু সকলের মাঝেই রয়ে গেছে ৯৯ এর সেই প্রাণচঞ্চল মনোভাব। আবেগঘন মুহূর্ত,হাসি-আনন্দের মাঝে প্রাণমুখর হয়ে উঠছিল আমাদের আড্ডা। আড্ডার এক পর্যায়ে প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ডাঃ ইফ্ফাত জাহান শিমু (মিতা) বন্ধুদের মাঝে পুরস্কার বিতরনীর ঘোষণা প্রদান করেন। উল্লেখ্য অনুষ্ঠানে নাম রেজিষ্ট্রেশন করার প্রথম ৫ জনের জন্য ছিল পুরস্কার ঘোষনার। আয়োজক কমিটির সদস্য মোঃ নিজামুল হক সবুজ পুরস্কার পর্ব পরিচালনা করে। প্রথম পুরস্কার বন্ধু মোঃ মনির হোসেন, দ্বিতীয় পুরস্কার বন্ধু মোঃ আবু ইদ্রিস, তৃতীয় পুরস্কার বন্ধু রাজিব শাহা, চতুর্থ পুরস্কার বন্ধু নিজামুল হক তাহের এবং সর্বশেষ পুরস্কার ডাঃ আশরাফুল ইসলাম কে প্রদান করা হয়।
ঘড়ির কাটা বার বার জানান দিচ্ছিল সন্ধ্যার হওয়ার। আমাদের মাঝে যে সকল মেয়ে বন্ধু ছিল তাদেরকে সন্ধ্যার পর পর বিদায় দিয়ে দিলাম সাথে দূর থেকে আগত অনেক বন্ধুদেরও বিদায় দিয়ে আমরা কিছু সংখ্যক বন্ধুদের নিয়ে প্রায় রাত ৮ টা পর্যন্ত চলল আড্ডা সাথে চটপটি আর চা। অবশেষে সকলকে বিদায় দিতেই মনে পড়ল ২০ বছর তো চলে গেল ধরে রাখতে পারিনি আজকের দিনটিও সেভাবেই চলে গেল। ধরে রাখা যায়নি কিন্ত স্মৃতির ফ্রেমে জমা রয়ে গেল নতুন কিছু স্মৃতি।
অনেকেই ইচ্ছা থাকার সত্ত্বেও আসতে পারেনি, কয়েকজন দেশের বাহিরে থাকায় যার যার অবস্থান থেকে সার্বক্ষণিক সমর্থন দিয়ে গেছেন। অনেকে না আসার সমর্থন জানিয়েছেন। প্রোগ্রাম আটকে থাকেনি। যথা নিয়মে প্রোগ্রাম চলে গেছে। আগামীতে আরোও ভাল প্রোগ্রাম করার অভিপ্রায় নিয়ে প্রোগ্রাম সমাপ্তি করা হয়েছে।
