অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার: জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে উদ্দেশে গঠন করা হয়েছিল তা লক্ষ্য অর্জনে চরম ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রন্টের অন্যতম নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেছেন, শুধু ঘরে বসে বসে ত্যানা ছেড়ার কাজ করলে কোনও কাজ হবে না। কাজ তখনই হবে যদি কাঁথা সেলাই করার মতো কাজ করতে পারি। ভোট ডাকাতির ৬ মাস হয়েছে, এই ৬ মাস কত মাসে গিয়ে ঠেকবে তাও জানি না। কিন্তু আমরা আজও রাজপথে নেমে এই নির্লজ্জ ভোট ডাকাতির কোনও প্রতিবাদ করতে পারলাম না।
শুক্রবার (২৮ জুন) ‘ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র চাই, কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্না এসব কথা বলেন।
সামাজিক সংগঠন থেকে নাগরিক ঐক্যের রাজনৈতিক দল হিসেবে দুই বছর পূর্তিতে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ ও অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম, দলের নেতা মঈনুল ইসলাম, এলডিপি নেতা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল প্রমুখ।
নাম উল্লেখ না করে বিএনপি মহাসচিবের প্রতি ইঙ্গিত করে মান্না বলেন, ৩০ তারিখে তো দেশে ভোট হয়নি, ভোটের ডাকাতি হয়েছে ২৯ তারিখে। আপনি ৩০ তারিখ সকাল বেলা কেন বলবেন যে ভোট ভাল হচ্ছে। কেন দুপুর পর্যন্ত বুঝতে পারলেন না যে ভোট খারাপ হচ্ছে। কেন ৩০ তারিখ বিকাল বেলা চার/পাঁচ দিনের জন্য হরতাল দিতে পারলেন না। যদি সেদিন এরকম কিছু করা যেত তাহলে সারা বাংলাদেশ অচল হয়ে যেত। কেউ কেউ বলতে পারে, হরতাল দিলেও হরতাল হতো না। আরও নির্যাতন হতো, আর হামলা-গ্রেফতার হতো। শেষ পর্যন্ত সবাইকে ঘরে ঢুকে যেতে হতো। হতেও পারতো। কিন্তু সেই কারণে আপনি কি প্রতিবাদ করবেন না। বরং একটা প্রতিবাদ যদি করা যেত তাহলে উল্টোও ঘটতে পারতো। সারাবিশ্বের মানুষ জানতো এই ডাকাতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ মাঠে নেমেছিল, হরতাল করেছিল, আন্দোলন করতে চেয়েছিল, জোর করে সেটা তারা বন্ধ করে দিয়েছে।
বরগুনার রিফাত হত্যার ঘটনা শুধু হিন্দি ছবিতেই দেখা যায় উল্লেখ করে মান্না বলেন, বরগুনাতে যখন এ ঘটনা ঘটলো তখন সবাই রাতে টিভিতে দেখেছেন অথবা ফেসবুকে দেখেছেন। আমি পরদিন দুইজন মানুষকে ফোন করেছিলাম, তারা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, এই কি আমাদের বাংলাদেশ। একটা যুবক ছেলেকে বিনা কারণে বিনা দোষে কুপিয়ে হত্যা করলো। আর শত শত মানুষ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো অথচ এই বাংলাদেশ তো মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। এই বাংলাদেশ ৫২র ভাষার লড়াই করেছিল। কোনও একজন যদি যেত, লড়াই করতো, ওই চাপাতি ধরে ফেলতো। তারপর ওকেই বলতো ওই হত্যা সে করেছে। আর যারা হত্যা করেছে তারা বেঁচে যেত। এই দেশেতো এখন তাই হয়। দেশ উল্টো রথে চলে, চলছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, এটা কোনও দেশ নয়। এটা মৃত্যু উপত্যাকা। তারই মধ্যে দাঁড়িয়ে আপনারা কেউ কেউ মনে করেন, একটু জায়গা যদি পাই সেখানে একটু কথা বলতে পারবো। ভুলে যান ওই সুযোগ নাই। সেই কথা ভুলে যান। এখানে সংসদে কথাই বলতে দেয় না। সময় দেবে দুই মিনিট এক মিনিট পরে বাতি নিভিয়ে দেয়। তারপরে বলে আপনার কথার মধ্যে সংবিধানবিরোধী যা যা আছে সেগুলো এক্সপাঞ্জ করা হলো। কোনও একজন দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করার আগেই স্পিকারের ভূমিকায় যিনি থাকেন তিনি বলেন, আপনার কথার মধ্যে যদি কোনও উল্টা-পাল্টা সংবিধানবিরোধী বক্তব্য থাকে আপনার কথা কিন্তু এক্সপাঞ্জ করা হবে। কে সেই স্পিকার কিভাবে স্পিকার কে সংসদ। কি সংসদের মধ্যে লড়াই করার কথা যদি ভাবেন, আমি বলি সবার আগে রাজপথের লড়াই নিশ্চিত করেন, না হলে সংসদে লড়াই করে লাভ নেই।
হাফিজউদ্দীন আহমেদ বলেন, বাজেট নিছক আয় -ব্যয়ের হিসাবের চাইতে অনেক গুরুপুর্ণ বিষয়। একটি সরকারের অর্থনৈতিক নীতি বোঝার ক্ষেত্রে বাজেট আমাদের অনেক তথ্য দেয় । সে কারণে নাগরিক' ঐক্য প্রতিবছর বাজেট নিয়ে বিশ্লেষণ করে থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা বাজেট বিশ্লেষণের আয়োজন করেছি । রাজনৈতিক দল হিসাবে নাগরিক' ঐক্যের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করা। তাই আমরা বাজেটে সরকারের করনীতি, ব্যয়ের ক্ষেত্র নিধারণ এবং ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ বিশ্লেষণ করে দেখতে চেয়েছি কল্যাণ রাষ্ট্রের পথে বাংলাদেশ কতোটা এগিয়েছে। এই বাজেট বিশ্লেষণ করে আমরা একটি বিষয় প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছি, তা হচ্ছে বর্তমান সরকারের তথাকথিত উন্নয়ন মুলত সমাজে অত্যন্ত অল্প কিছু মানুষের সুবিধা তৈরি করেছে। আর এই তথাকথিত উন্নয়নের সুফল থেকে সমাজের প্রায় সব মানূষ বঞ্চিত হচ্ছে । ফলে বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের বৈষম্য ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। এ ধরণের বাজেটে দীর্ঘদিন থেকেই একমাত্র সরকারি দল ছাড়া আর অন্যান্য রাজনৈতিক দল, নাগরিক' সমাজ কেউ এর সুফল অর্জন করতে সক্ষম হয় নাই।
এম হাফিজ উদ্দিন খান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল, দেশে যে ধরনের নির্বাচন হল, তার প্রতিবাদে ১ জানুয়ারি থেকেই দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে পড়বে। কিন্তু আসলে কেউ নামেনি। কোনও ছোট রাজনৈতিক দলতো নামেইনি, এমনকি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও রাস্তায় নামেননি। সবাই ঘরে বসে কথা বলছেন। এমনকি আমিও ঘরে বসেই কথা বলি।
অধ্যাপক আবু সাঈদ বলেছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে রাজনীতি চলছে, সেখানে সমাজ শক্তির ভারসাম্য শেষ হয়ে যাচ্ছে। একটি রাষ্ট্রে সামাজিক যে শক্তি থাকে তা এদেশে আর নেই। নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। বরগুনায় প্রকাশ্যে দিনদুপুরে শত শত মানুষের সামনে রিফাত হত্যাকাণ্ড তার বড় প্রমাণ।