TadantaChitra.Com | logo

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পল্লবীতে আ‘লীগ নেতা খলিলের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৪, ২০২১, ১৫:০৫

পল্লবীতে আ‘লীগ নেতা খলিলের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

(কসাই খলিল আওয়ামীলীগের নেতা বনে গিয়ে ৫নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে দিনে রাতে জমি দখল করেই জিরো থেকে এখন শতকোটি টাকার মালিক)

অনলাইন ডেস্ক: পল্লবী থানার অন্তরগত ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে উঠেছে বসত বাড়ী জায়গা জমি দখলের বিস্তার অভিযোগ। রাজধানীর পল্লবীর বাউনিয়াবাধ পলাশনগর সহ একাধিক স্থানের অসহায় নিরীহ মানুষের জায়গা সম্পত্তি জবর দখলসহ প্রতারণার মধ্যমেও জায়গা সম্পত্তি গিলে খাচ্ছে আওয়ামীলীগের এই নেতা। তার ভয়ানক থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছেনা কেউই। স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতারা বলেন এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার সাথে এক সময় রাজনীতি করতো কসাই খলিল ও সারোয়ার আলম। তাদের এই দখলবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেন এমপি।

আওয়ামীলীগের পদপদবী রক্ষা করতেই যোগদেয় তারা ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামীলীগের (সাধারন সম্পাদক) এসএম মান্নান কচি ও তার ভাই (৫নং ওয়ার্ড) কাউন্সিলর আব্দুর রউফ নান্নুর দলে। তাদের এই রাজনীতির পল্টিবাজির ভেলকি দেখে রীতি মতো নেতারাও বেশ হতবাক।

অভিযোগ রয়েছে থানা পুলিশ ও কথিত স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে খলিলের রয়েছে সু-সম্পর্ক। পল্টিবাজ খলিল নামেও এলাকায় বেশ পরিচিত। এলাকায় কসাই খলিল নামেও তার গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে বেশ। অন্যদলের ছত্রছায়ায় থেকে নিজ দলীয় আওয়ামী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাদেরও কোণঠাসায় রাখে। গত বছরে খলিলের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় (৫নং ওয়ার্ড) যুবলীগ নেতা খালেকুজ্জামান জীবনকে রক্তাক্ত জখম করে রাস্তার উপর কুপিয়ে ফেলে যায়।  ফের স্বাসিয়ে যায় প্রতিবাদ করলে জানে মেরে দিবো বলেও হুমকি দেয় ওই বাহিনীর সন্ত্রাসীরা।

খলিলের পিছনের অতিত’ কয়েক বছর আগেও লালমাটিয়া টেম্পুস্ট্যান্ডে অন্যের দোকানে কসাইয়ের কাজ করতো। পরে তাকে পল্টি দিয়ে নিজেই ১০/১৫ কেজি গরুর গোস্ত, ১১ নম্বর বাজার থেকে কিনে লালমাটিয়ায় মোড়ে বেঁচা শুরু করে। ফাঁকে ফাঁকে স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির মিটিং মিছিলেও অংশ নিতো। পরে তার সরলতা দেখে কাছে টেনে নেয় পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা। পরে স্থানীয় এমপির নজরে এলে খলিল বনে যান ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক। এরপর থেকে তাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। সেই কসাই খলিল এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। দুদকের চোখ ফাঁকি দিতেই স্ত্রীসহ বিভিন্ন জনের নামে ব্যাংক এ্যাকাউন্টে টাকাও  রাখেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে কিনেছেন ফ্ল্যাট, প্লট, জমি।

বাউনিয়াবাধ এলাকার পাড়া মহল্লার অলিগলির চা-দোকানে কানাঘুষা চলে সামান্য একজন কসাই ক’বছর আগেও ঠিকমত দু’বেলা দু’মুঠো খাবার যোগারের জন্য রাস্তায় বসে থাকতো, কখন গোস্তো বিক্রি হবে। আজ আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হয়ে হয়েছে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। নিরীহ মানুষের জমি বসত বাড়ী অন্যায় ভাবে জোড়পুর্বক কেড়ে নিয়ে সে হয়েছে সমাজ সেবক। হাজেরা বেগম, মেসের আলীসহ বহু ভুক্তভোগীরা সম্পাদ হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব, সর্ব শান্ত।

ভুক্তভোগী অনেকেই তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশে প্রতিবাদ করতে না পারলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্ত তাতেও সে থামছেনা। দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে কসাই খলিল।

বিশস্ত সুত্রে জানা গেছে আওয়ামীলীগের কমিটি সামনে তাই খলিল কৌশল অবলম্বন করে তার স্ত্রীকে মাঠে নামিয়েছে সব জায়গায় তার উপস্থিতি রাখে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের ধর্ষণের চেষ্টাসহ বিভিন্ন হয়রানি মুলুক মামলা দিয়ে জেলের ঘানি টানাবেন বলেও তাদের রীতিমত হুমকি ধামকি দিয়ে থাকেন খলিলের স্ত্রী।

বাউনিয়াবাধের বাদল ওরপে দালাল বাদল, পিচ্চি খলিল, কাইল্যা আমির , কারেন্ট চোর শুক্কুর মাতবর সহ গড়েছে একটি নিজেস্ব বাহিনী। এ বাহিনীরা খলিলের হয়ে তারা এলাকায় মুভমেন্ট করে। নতুন কেউ বাড়ী বানানো বা জমিতে বাউন্ডারি করলে এই বাহিনীর কাছ থেকে চড়া দামে ইট, বালু, সিমেন্ট, খোয়া ইত্যাদি কিনতে বাধ্য করে। কেউ রাজি না হলে রাতের আধারে এই বাহিনীরা তাদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে।

অন্যের জমি দখল ছাড়াও সরকারি খাল-বিল নদী নালায় মাটি ভরাট ও ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে বিক্রি করে এ বাহিনীর সকলেই এখন কোটিপতি। আওয়ামী দলের নাম বিক্রি করে এ বাহিনীরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির লাইন চোরাই পথে সংযোগ দিয়ে বাউনিয়াবাধ এলাকার হাজার হাজার ঘর থেকে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে। বিদ্যুৎ অফিসের গাড়ী প্রতিদিন ওই স্থান দিয়ে যাতায়াত করলেও তাদের নজরে আসেনা।

ভুক্তভোগীরা জেনে গেছে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও পল্লবী থানা প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা টাকার মোহে পরে অন্ধ হয়ে গেছে। উর্ধতন কর্মকর্তাদের চাপে খলিলের বিরুদ্ধে কখনো অভিযোগ হলেও তাকে আটক করেনা পুলিশ।

গত ২৬শে মার্চ ২০২১ ইং তারিখে কসাই খলিলের বাহিনীরা মেসের আলীসহ তার স্ত্রী সন্তানদের মারধোর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরে পল্লবী থানায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলেও (তদন্ত অফিসার) আব্দুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ আমলে নেননি বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।

পল্লবী থানার ওসি দাদন ফকিরের আমলে বাউনিয়াবাধ এলাকায় ১৮ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন হাজেরা বেগম নামের এক বৃদ্ধ অসহায় মহিলা। বেঁচে থাকার জন্য সেখানে গড়েছিলেন চা- দোকান, গরুর খামার। বুনে ছিলেন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফলমুলের গাছও। ওই জমির উপর চোখ পড়ে কসাই খলিলের। ওই মহিলাকে কোনো ভাবে ম্যানেজ্ড করতে না পেরে রাতের অধারে খলিলসহ তার লাঠিয়াল বাহিনীরা মহিলার দোকান ঘর, খামার, সকল ফলমূলের গাছ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে পানির ভিতর ফেলে দেয়। অসহায় হাজেরা বেগম বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার চেচামেচি করলেও খলিলের লাঠিয়াল বাহিনীর ভয়ে কেউ টু-সব্দটিও করতে পারেনি। এগিয়ে আসেনি থানার পুলিশও। বর্তমানে সেখানে বিশাল এক জুতার ফ্যাক্টারী করা হয়েছে। সেই জমি এক সচিবের নামে এখন চলছে। তাদের উচ্ছেদ করে খলিল পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও জান গেছে। ওই মহিলা এখনো প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে ন্যায় বিচারের আশায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অপরাধ করেও বারবার পার পেয়ে যাওয়ায় খলিল আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

সম্প্রতি পলাশ নগর এলাকায় ১০০ দাগে। আনোয়ার ও শাহিদা ইসলাম নামের পৃথক পৃথক নামে পনে দুই কাঠা দুটি প্লট রয়েছে বাউন্ডারি করা। কসাই খলিলের চোখ পড়ে ওই জমিতেও। তার পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে রাতের আধারে সেখানে হামলা চালিয়ে জমির বাউন্ডারি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। বাড়ী তৈরির দেড়টন রডও ওই বাহিনীরা সেখান থেকে নিয়ে যায়। হাইকোর্টের এক আদেশে বলা আছে” থানায় কোন ধরনের বিচারিক কার্যক্রম চলবেনা। থানা-ই যদি বিচার শালিসের কাজ করে তাহলে কোর্টের প্রয়োজন কি?।

কোর্টের অর্ডার উপেক্ষা করেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আসামীদের মামলা না দিয়ে থানার চারতলায় চেম্বার খুলে অপরাধীদের কোর্টে চালান না দিয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক, কনেষ্টবল, আনসার সদস্যরা বিচার সালিসের দেনদরবারও চালায়। এতে দু’পক্ষকেই গুনতে হয় মোটা অংকের অর্থ।

থানার কর্মকান্ড দেখে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারীরা যদি অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়, তবে প্রতিবাদকারীদের নিরব দর্শক হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কারণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারীরাই তখন অপরাধী বনে যান। কিছু কিছু পুলিশের ক্ষেত্রে ঘটছে সেটিই। সরকার প্রধান ও ডিএমপি প্রধানের পক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ নির্দেশনা না এলে এই ‘মিউচুয়াল ক্রাইম’ বন্ধ হওয়ার কোনো আশা নেই-এমনটিই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দলীয় পদপবী ব্যবহার করে খলিলের দখলবাজি কর্মকান্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এস এম মান্নান কচি বলেন, খলিল আমার দেওয়া সেক্রেটারি না, সে ইলিয়াসের দেওয়া সেক্রেটারি। তিনি আরও বলেন, যারা এখনো বিভিন্ন থানা ওয়ার্ডের পদে আছে তারা সবাই ইলিয়াসের দেওয়া।  তিনি আরও বলেন তবে অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে কেউ আসেনি, আসলে হয়তো একটা সমাধান করার চেষ্টা করবো।  এক প্রশ্নে তিনি বলেন যদি খলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হয় তাহলে অবশ্যই দল থেকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।