
মুন্নি আক্তার: নারী কেলেংকারীসহ নানা বিষয়ে ভোলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোকতার হোসেনের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ জমা পড়ে পুলিশ সদর দফতরে। এর একটি অভিযোগের তদন্ত শেষ হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসপি মোকাতার হোসেনের অর্ডার্লী (কনস্টেবল) মনির হোসেনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এসপি মোকতারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যে অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয় সেই অভিযোগটি এসেছিল এসপির অধীনস্থ কয়েকজন নারী কনস্টেবলের কাছ থেকেই। তাছাড়া গত ২১ নভেম্বর এবং ৮ নভেম্বর জিয়াউর রহমান নামের এক ব্যক্তি পৃথক দুইটি অভিযোগ দিয়েছেন। একটি মহাপুলিশ পরিদর্শক এর কাছে আর অন্যটি প্রধান মন্ত্রীর বরাবর। পুলিশের আইজির অভিযোগটি তদন্ত শুরু করার পর মাঝপথে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত এবং কনস্টেবলের সঙ্গে এসপি মোকতার হোসেনের আপত্তিকর ফোনালাপের রেকর্ড এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই মোকতার হোসেন এসপি হিসেবে ভোলায় যোগদান করেন।
এদিকে চাকরি ফিরে পেতে এসপি মোকতার হোসেনের সাবেক অর্ডার্লী মনির হোসেন বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি বরাবর আবেদন করেও কাক্সিত সাড়া পাননি। তার আবেদনটি এরই মধ্যে খারিজ হয়ে গেছে। ওই আবেদনে তিনি এসপির নারী কেলেংকারীর বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, নিজের জন্যে নয়, এসপির জন্যে নারী সংগ্রহ করতে গিয়েই তার চাকরি গেছে। তিনি যা করেছেন, সবাই এসপির নির্দেশে করেছেন। প্রকৃত অপরাধী এসপি। অথচ এসপি মোকতার হোসেনকে আড়াল করে তদন্ত কমিটি তাকে (অর্ডালী) অন্যায়ভাবে গত বছর চাকরি থেকে অপসারণ করেছে।
পুলিশের আইজির কাছে দেয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, এসপি মোকতার হোসেন ভোলা জেলায় যোগদান করার পর থানা পরিদর্শনে গিয়ে সুন্দরী নারী কনস্টেবলদের কং নম্বর সংগ্রহ করেন। পরে তাদের পুলিশ লাইনে বদলী করে নিয়ে আসেন। এরপর তাদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে নিজে এবং তার সাবেক অর্ডার্লী কনস্টেবল মনিরকে দিয়ে পুলিশ সুপারের বাংলোয় আসতে বলেন। এসপি মোকতারের সঙ্গে একান্তে সময় কাটালে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবেন বলেও প্রলোভন দেখানো হয়। এ প্রস্তাবে রাজি না হলে বিভিন্ন সমস্যায় ফেলার হুমকি দেয়া হয় নারী কনস্টেবলেদের। চাকরি ফিরে পাওয়ার আবেদনেও বিষয়টি স্বীকার করেছেন এসপির সাবেক অর্ডার্লী মনির হোসেন।
বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কাছে করা আবেদনে অর্ডার্লী মনির হোসেন জানান, এসপি মোকতারের মৌখিক নির্দেশে নারী কনস্টেবলদেরকে একা এসপির বাংলোতে দেখা করতে বলেছেন। এসপি তার নিজের এবং অর্ডার্লী মনিরের মোবাইল ফোনে নারী কনস্টেবলের সঙ্গে কথা বলেছেন। কয়েকজন নারী কনস্টেবল এসপি ও তার অর্ডার্লীর প্রলোভন প্রত্যাখ্যান করেন। তারা ভুক্তভোগী নারী কনস্টেবলদের এসপি মোকতার হোসেন ও অর্ডার্লী মনিরের কথোপকথন রেকর্ড করার পরামর্শ দেন। কথোপকথন রেকর্ড করার পর উইমেন্স পুলিশ নেটওয়ার্কের প্রধান ও পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি মিলি বিশ্বাসের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেন।
অর্ডার্লী মনির হোসেন তার আবেদনে উল্লেখ করেন, তিনি ভোলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় এসপির বাসভবনের গার্ড রুমে অর্ডালী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। এসপি সরকারি বাসায় একাই থাকতেন। এসপির স্ত্রী ঢাকায় থাকতেন। ২০১৬ সালের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে পুলিশ সুপারের (এসপি মোক্তার) অফিসের রিসিপশন শাখার কর্মরত নারী কনস্টেবলকে বিভিন্ন প্রলোভনে এসপির বাসায় আনার ব্যবস্থা করার জন্য তাকে বলা হলে তিনি এক নারী কনস্টেবলের সঙ্গে কথা বলেন। ওই নারী কনস্টেবল এসপির কথায় তার বাসায় না আসায় আরেক নারী কনস্টেবলকে তার বাসায় আনার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। এসপি তাকে বলেন, একজন নারী কনস্টেবল পুলিশ লাইনে বদলী হয়েছে তাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে সরকারি বাসভবনে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
সূত্র জানায়, নারী কেলেংকারী ছাড়াও এসপি মোকতার হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজীসহ নানা অভিযোগ এনেছিলেন জনৈক জিয়াউর রহমান। তার দেয়া দুইটি অভিযোগের তদন্তে প্রথমে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয় অতিরিক্ত ডিআইজি (বর্তমানে ডিআইজি, এইচআর) আবদুল আলিম মাহমুদকে। পরে দায়িত্ব পান পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল হক। রেজাউল হক এখন সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে কর্মরত। এক পর্যায়ে অভিযোগ দুইটি পাঠিয়ে দেয়া হয় বরিশালে। অভিযোগ দুইটির তদন্তভার দেয়া হয়, বরিশাল রেঞ্জের তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি আকরাম হোসেনকে (বর্তমানে টেলিকম অ্যান্ড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্টরে দায়িত্বে)। অতিরিক্ত ডিআইজির দফতর থেকে অভিযোগকারীকে ঢাকা থেকে বরিশাল গিয়ে স্যা দিতে গত ১৩ ডিসেম্বর চিঠি দেয়া হয়। চিঠি অনুযায়ী ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগকারী বরিশাল যাওয়ার কথা। কিন্তু এর আগের দিন অতিরিক্ত ডিআইজির স্টেনোগ্রাফার স্বপন চৌধুরী টেলিফোনে জিয়াউর রহমানকে জানান, আপনাকে কষ্ট করে ঢাকা থেকে বরিশাল আসার প্রয়োজন নেই। বিষয়টি ঢাকা থেকে নিস্পত্তি হচ্ছে। আপনি পুলিশ সদর দফতরে যোগাযোগ করেন। এরপর পুলিশ সদর দফতরে বারবার যোগাযোগ করেও তদন্তের অগ্রগতি জানতে পারেননি জিয়াউর রহমান।
এ বিষয়ে জানতে এসপি মোকতার হোসেনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যয়িনি।
ডিআইজি আবদুল আলিম মাহমুদ বলেন, পুলিশের নারী কনস্টেবলরা এসপি মোকতার হোসেনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছিলেন তার তদন্ত হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে কাছে তার বিরুদ্ধে ব্যববস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। কর্তৃপ কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা আমার জানা নেই। তাছাড়া অন্য দুইটি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কোন পর্যায়ে আছে তা বলতে পারবো না। অতিরিক্ত ডিআইজি আকরাম হোসেন বলেন, ‘এসপি মোকতার হোসেন বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। আপনার সঙ্গে যেহেতু আমার ভাল পরিচয় নেই তাই প্রতিবেদনে কী উল্লেখ করেছি তা বলা যাচ্ছে না।’ এছাড়াও জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাখিল করা আরো একটি অভিযোগ পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে আমি নিজেই তদন্ত করছি। ইতিমধ্যে জিয়াউর রহমান সহ অনেক স্বাক্ষীর লিখিত স্বাক্ষী নিয়েছি। যথাসময়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেও কাছে তদন্তের প্রতিবেদন পাঠানো হবে। এসপির বিরুদ্ধে নারী কেলংকারী ছাড়া ঘুষ, দুর্নীতির কোন অভিযোগ তিনি তদন্ত করেননি বলেও জানান। অতিরিক্ত ডিআইজি রেজাউল হক বলেন, ‘যেহেতু এসপির বিরুদ্ধে আগে একটি অভিযোগ তদন্ত হয়েছে, তাই দ্বিতীয় দফায় আনা পৃথক দুইটি অভিযোগের তদন্তে খুব-একটি গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তারপরও একটি প্রতিবেদন পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে জমা দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে তা বলতে পারবো না।’
জিয়াউর রহমানের অভিযোগে বলা হয়েছে, ভোলার বিভিন্ন অবৈধ কল-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তেল-চাল চোর সিন্ডিকেট, পাচার সিন্ডিকেট, অবৈধ বালু উৎত্তোলন সিন্ডিকেট, মাদক স্পট ও চোরকারবারীদের কাছ এসপির নামে চাঁদা আদায় করছেন ভোলা ডিবির এক কনস্টেবল ও এক এসআই। ভোলার ৯ টি থানা থেকে প্রতি মাসে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা চাঁদা নেন এসপি মোকতার হোসেন। এছাড়াও ইলিশা ঘাট থেকে আলাউদ্দিন ও মাছ ব্যবসায়ী ইউসুফ প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা তোলা হয় এসপির নামে। সাগর বেকারীর মালিক স্বপন, ভোলা সদর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার এবং ইলিশা বাজার কমিটির সভাপতি হারুনের কাছ প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে তোলা হয়। লালমোহন বাজার থেকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা ও দৌলতখান বাজার থেকে ৮ হাজার টাকা আদায় করা হয়। ভোলা সদরের নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১৩ হাজার টাকা আদায় করা হয়। সরকারি গুদামের চাল চোরাই চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে প্রতি মাসে টন প্রতি ২০০ টাকা করে তোলা হয়। সরকারি চাল চোরাই চক্রের যেসব সদস্যের কাছ থেকে চাঁদা টাকা আদায় করা হয় তাদের মধ্যে আছে সংগ্রাম, মনির, জাকির, কালিমুল্লাহ, আলমগীর উৎপল, খায়ের, আবু ম্যালেটারী, ফয়সাল প্রমুখ। হোটেল আলম ও ইউসুফ থেকে এসপির নামে প্রতি মাসে আসে ৮ হাজার টাকা উত্তোলণ করা হয়। বাঘদা ও গলদা পাচার সিন্ডিকেট ইলিশা রানদাসপুর ঘাট থেকে ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা দেয়। তাছাড়া ইলিশা ঘাট থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা, তুলাতুলি ঘাট থেকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা, হাকিমউদ্দিন ঘাট থেকে প্রতি মাসে এক লাখ টাকা, তজুমদ্দিন ঘাট থেকে ৫০ হাজার টাকা, দৌলতখান মাছের ও তেলের ঘাট থেকে প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকা আদায় করা হয়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ভোলা জেলায় কোন থানায় নৌযান নেই। কিন্তু নৌযান দেখিয়ে মাসে ৩০০ থেকে ৫০০ লিটার তেল বরাদ্দ করেন। ট্রাফিক পুলিশের জরিমানার ¯িøপে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা অবৈধ আয় করা হয় বলে অভিযোগে বলা হয়। বলা হয়, এএসআই ও এসআইদের কাছ থেকেও প্রতিমাসে টাকা নেন এসপি। অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের ৫ জানুয়ারি ভোলায় বিশ্ব ইজতেমা চলাকালে চরফ্যাশন কোর্টের কনস্টেবল আলমগীর, জয়নাল, ইসরাফিলদের কাছ থেকে একজন হাজতি আসামী পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করলেও ওই কনস্টেবলদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা টাকা ঘুষ নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট গায়েব করেন এসপি মোকতার হোসেন। প্রতি বছর পুলিশ সদস্য নিয়োগের েেত্র রাজনৈতিক সুপারিশকৃত লোকদের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা এবং সোর্স দিয়ে লোক নিয়োগের েেত্র নেন ৬-৭ লাখ করে টাকা দেয়া হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ওয়ের্স্টানপাড়া রিজার্ভ পুকুরপাড়ে নাজিমের বাড়িতে দো-তলার ডান পাশের বাসাটি সাবেক এসআই নিজাম উদ্দিনের নামে ভাড়া নিয়ে সেখানে মেয়েদের নিয়ে ফ‚র্তি করেন পুলিশ সুপার মোকতার। ওই এসআই অবসরে যাওয়ার পরও এসপি ভাড়া পরিশোধ করিয়া অপকর্ম অব্যাহত রাখেন। গত বছরের শেষের দিকে বাসাটি ছেড়ে দেয়া হয়। জিয়াউর রহমান অভিযোগে বলেন, ভোলায় যোগদানের ৪-৫ দিনের মাথায় জনৈক প্রথম অর ‘ম’ নামের নারী কনস্টেবলকে অফিসে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন এসপি মোকতার হোসেন। সেদিন ওই নারী কনস্টেবল মুখ আড়াল করে কাঁদতে কাঁদতে অফিস থেকে বেরিয়ে যান, যা অনেক পুলিশ সদস্য প্রত্য করেছেন। পরদিন একইভাবে প্রথম অর ‘ই’ নামের আরেক নারী পুলিশ সদস্যকে অফিসে ডেকে ধর্ষণ করেন। ওই নারী কনস্টেবল অফিস থেকে বেরিয়ে এসপিকে তার বাপ-মা তুলে গালিগালাজ করতে করতে দৌড়ে চলে যান। এর কয়েকদিন পর প্রথম অর ‘ক’ নামের নারী পুলিশ সদস্যকে বাসায় ডেকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে পুলিশ সুপার মোকতার হোসেন। এখনও চারজন নারী কনস্টেবলকে টাকার বিনিময়ে এসপি যখন তখন ব্যবহার করছেন।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, ২১তম বিসিএস এর পরে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে চাকরি শুরু করেন এসপি মোকতার হোসেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি, ডিবি) থাকাকালে স্থানীয় মাজার নিয়ে বিরোধের জেরে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে নিরাপরাধ ব্যক্তিদের ওই মামলায় গ্রেফতার করেন মোকতার হোসেন। এসপি মোকতার ভোলায় যোগদানের পর দুই ভাইয়ের নামে গ্রামের বাড়িতে অনেক জমি কিনেন। সেখানে একাধিক আলিশান বাড়ি বানিয়েছেন। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রামের বাড়িতে একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করেছেন। সেখানে একটি মাদ্রাসা নির্মাণাধীন। ঢাকায় ২ টি ফ্যাট কিনেছেন এসপি মোক্তার হোসেন। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে তার রয়েছে মোটা অংকের টাকা। গ্রামের বাড়িতে তার দুইটি প্রাইভেট কার রয়েছে। বাংলামটর ফুটওভার ব্রীজ সংলগ্ন নাভানা জহুরা স্কয়ারে ৬ষ্ট তলায় একটি বিলাশবহুল ফ্যাট ক্রয় করে বর্তমানে সেখানে সন্তান নিয়ে স্ত্রী ফারহানা তানজিম মুনমুন বসবাস করছেন। অভিযোগকারী জিয়াউর রহমান বলেন, ইলিশা জোটন ব্যাপারী নামে এক ইয়াবার ডিলারকে সম্প্রতি দেড় লাখ পিচ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। দর কষাকষির পর পাঁচ লাখ টাকা উৎকোচের বিনিময়ে এসপি মোকতারের নির্দেশে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এসপি মোকতার হোসেন এ ধরনের অপকর্মের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাখিলকৃত অভিযোগ পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে বরিশাল রেঞ্জের তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি আকরাম হোসেনকে (বর্তমানে টেলিকম অ্যান্ড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্টরে দায়িত্বে) প্রধান তদন্তকারী করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোমা হাপাং (ডিএন্ডপিএস-১ পুলিশ সদর দপ্তর) বর্তমানে তদন্ত করছেন। এই তদন্ত কমিটির কাছে গত ১০/০৪/২০১৮ ইং তারিখ জিয়াউর রহমান লিখিত স্বাক্ষী ও তথ্য প্রমানাদি দাখিল করেছেন। জিয়াউর রহমান তার স্বাক্ষীতে বলেন, পুলিশ সুপার ভোলা জেলার সাথে তার কোন পারিবারিক বা জমিজমা বিষয় নিয়ে কোন বিবাদ ছিলো না এবং বর্তমানেও নাই। সে পেশা সাংবাদিক। সাংবাদিকের কাজ সংবাদ প্রকাশ করা। তদ্রুপ ভোলা জেলার পুলিশ সুপার মোকতার হোসেনের বিরুদ্ধে নারী কনস্টেবল যৌন নিপীড়নের কয়েকটি কল রেকর্ডেও ভিত্তিতে ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ইং তারিখে সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রায় “ভোলা জেলার পুলিশ সুপার মোকতার হোসেনের বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর অভিযোগ” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। এরপর থেকে জিয়াউর রহমানকে বিভিন্ন ভাবে ফাঁসানোর ভোলার পুলিশ সুপার মোকতার হোসেন চেষ্টা করে আসছে। এমনকি বিভিন্ন লোকজনকে বলে বেড়াচ্ছে জিয়াউর রহমান ভোলায় গেলে হয় অস্ত্র না হয় মাদক দিয়ে জেল হাজতে পাঠাবে। তার এমন হুমকিতে জিয়াউর রহমান ভোলা যেতে পারছে না। ইতিমধ্যে এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
