TadantaChitra.Com | logo

৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিচার বিভাগ ও পুলিশের চাহিদা’ বাজেট ভাবনা

প্রকাশিত : মে ২৪, ২০২১, ১৪:৪২

বিচার বিভাগ ও পুলিশের চাহিদা’ বাজেট ভাবনা

ড. মো. কুতুব উদ্দীন চৌধুরী :  ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, বাংলার মুক্তিকামী মানুষের অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’র ডাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে চলে রাস্তাঘাট, ধ্বংসকৃত স্থাপনাসমূহ মেরামতের কাজ, জাতির উন্নয়নে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ১৯৭২ সালে। সেই থেকে শুরু বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।

১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে আসে সামরিক শাসন। এই সামরিক শাসনের ধারাবাহিকতা চলে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দেশের সাধারণ মানুষ ও ছাত্র-জনতার ঐক্যের ফলে দেশ স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্তি পায়। দেশের অর্থনীতির চাকা হয়ে পড়ে স্থবির। তৎকালীন সময় বাজেটের পরিমাণ ছিল কয়েক হাজার কোটি টাকা। ২০০৮ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’র সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে শুরু হয় উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় দেশে উন্নয়নের  অগ্রযাত্রাকে স্থিতিশীল রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র দূরদর্শিতা ও অবিচল নেতৃত্বে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে স্বীকৃতি পেয়েছে।বর্তমান বাজেটের পরিমান প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ  হাজার কোটি টাকা।

প্রতি বছরের বাজেটে শিক্ষা ও প্রতিরক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েই বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। বিচার বিভাগ দেশের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক হিসাবে স্বীকৃত।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর বর্তমান সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিকল্পনার প্রতি মানুষের রয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। সেইক্ষেত্রে বিচার প্রার্থী সাধারণ মানুষের যাতে ভোগান্তির শিকার হতে না হয়। তজ্জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে হতে হবে আরো দায়িত্বশীল।

বিজ্ঞ আইনজীবীগণ ও বিজ্ঞ আদালত সংশ্লিষ্টদের মতে বিচার প্রার্থীদের সমস্যা ও সরকারের করণীয় :

বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় স্থাপিত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও তৎঅধীনস্থ আদালত সমূহে বিচারকের সংখ্যা কম। কিন্তু মামলা-মোকদ্দমার আধিক্য বেড়েই চলেছে। সেক্ষেত্রে বিচার প্রার্থীরা হচ্ছে ভোগান্তির শিকার। আদালত কক্ষসমূহ সংকীর্ণ আয়তনের। যেখানে বিজ্ঞ আইনজীবীদের বসার জায়গা পাওয়া অনেক সময় হয়ে উঠে না। আদালত কক্ষ সমূহের বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক পাখাগুলো থাকে অচল। সারাদেশের নিম্ন আদালতগুলোতে এয়ার কন্ডিশন সুবিধা না থাকায় বিজ্ঞ আইনজীবীদের খুব কষ্টভোগ করতে হয়। নিম্ন আদালতগুলোতে ডায়াসের সাথে মাউথ স্পিকার সিস্টেম না থাকায় অনেক সময় বিজ্ঞ আইনজীবীরা শুনানীর বিষয় বিজ্ঞ আদালতের দৃষ্টিগোচরে আনতে পারেন না। যে কারণে বিচারিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায় সাধারণ বিচার প্রার্থী মানুষ প্রতিনিয়তঃ হচ্ছে ভোগান্তির শিকার। এক্ষেত্রে বাজেটে বিচার বিভাগের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা উচিত। আদালত কক্ষসমূহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিটি জেলা জজ আদালতে আলাদা বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে। তজ্জন্য বিজ্ঞ জেলা জজ, বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সুপারের সমন্বয়ে একটি সমন্বয় কমিটি করা যেতে পারে।

নিম্ন আদালতের বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। উচ্চ আদালতেও বিচারপতির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।সময়ের প্রয়োজনে বিচারপতির সংখ্যা বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবী।আদালত কক্ষসমূহের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

বর্তমান সরকার এ বছরে বিচারকদের বেতন বৃদ্ধি করে নতুন পে-স্কেল প্রদান করেছে। কিন্তু তাই যথেষ্ট নয়। বিচারকদের আবাসিক সুবিধা অপ্রতুল। মফস্বলে অনেক বিচারককে বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়। যে কারণে প্রত্যেকটি জেলায় জুডিশিয়াল অফিসার’স কোয়ার্টার করা যেতে পারে। সেজন্য বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন।

বিচারিক কার্যক্রমে মানুষ যাতে হয়রানী বা ভোগান্তির শিকার না হয়। তজ্জন্য মহামান্য উচ্চতর আদালতের তদারকিতে মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে।

মাজদার হোসেন মামলার রায়ে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ করে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের মহামান্য আপীল বিভাগ রায় প্রদান করলেও জুডিশিয়াল সচিবালয় আজও স্থাপিত হয়নি। যা না হলে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ নিরর্থক বলে পরিগণিত হবে। তাই বাজেটে জুডিশিয়াল সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন।

বিশ্লেষকদের মতে পুলিশ বাহিনীর সমস্যা ও সমাধানের উপায় :

রাজধানীসহ সারাদেশের থানাসমূহে বরাদ্দকৃত গাড়ীর সংখ্যা নিতান্তই অপ্রতুল। সে কারণে কোন দুর্ঘটনা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে না বা কোন দুর্ঘটনা ঘটার পূর্বে সংবাদ পাইলেও দুর্ঘটনা সংঘটনের পূর্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে না। যে কারণে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকায় প্রায় প্রতিটি থানায় দারোগাদের গাড়ী রিকিউজিশন করে ডিউটি করতে হয়। সে কারণে গাড়ীর অপ্রতুলতা কমাতে হবে। গাড়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। যাহা বাজেটের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিৎ।

বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ। অথচ সে তুলনায় পুলিশ সদস্যের সংখ্যা কম। প্রতি ১৭৪৭ জনে একজন পুলিশ। সে দৃষ্টিকোণ থেকে পুলিশের জনবল বৃদ্ধি করতে হবে। যার জন্য বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন।

সারাদেশে অপরাধের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় অনেকাংশে কমে আসছে। গুপ্ত হত্যা ছাড়া চুরি, রাহজানি, ছিনতাই, ডাকাতির সংখ্যা কমে এসেছে। আজকাল এসব খবর আর পত্রিকায় খুব বেশি একটা দেখা যায় না। আধুনিক যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশে অপরাধীরা তাদের নতুন নতুন কৌশল ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে। কিন্তু আইন-শঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তেমন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নাই। রাজধানীতে কিছু কিছু থাকলেও সংখ্যায় অপ্রতুল। মফস্বলে প্রতিটি থানার পুলিশ এখনও সে মান্ধাতা আমলের থ্রি-নট থ্রি রাইফেল ব্যবহার করছে। অথচ অপরাধীরা ব্যবহার করছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। তাই অপরাধ মোকাবেলায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো অত্যাধুনিক করে গড়ে তুলতে হবে। সে জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জামাদি প্রয়োজন। সেই কারণে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ দেওয়া উচিৎ।

অপরাধের ধরণ পাল্টিয়ে যাওয়ায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য কোন ঘটনার কু বা রহস্য উদ্ঘাটন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। উন্নত বিশ্বের পুলিশের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম থাকলেও বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি দিয়ে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। সে জন্যও বাজেটে বরাদ্দ থাকা উচিত।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আবাসিক সমস্যা বাংলাদেশে প্রকট আকার ধারণ করেছে। পরিবার নিয়ে বসবাস করার মত সুযোগ-সুবিধা তাদের নেই। যে কারণে কাজের প্রতি স্পৃহাও থাকেও কম। উন্নত দেশগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য তাদের বাজেটের উল্লেখযোগ্য অংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। জনগণের জানমাল রক্ষার্থেই তা প্রয়োজন। সে অনুযায়ী বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। নইলে ভাল ফলাফল আশা করা দুরূহ ব্যাপার।

পরিশেষে বলা যায় যে, বিচার বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যত উন্নত হবে ন্যায় বিচার ততবেশী নিশ্চিত হবে। তাই এই দুইটি ক্ষেত্রেই বাজেটে আলাদা খাত ও বরাদ্দ দেওয়া উচিত। তাহলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে।

(লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, কলামিষ্ট ও বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক)


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।