বিএফইউজের ১০ প্রস্তাব

লেখক: সাব এডিটর
প্রকাশ: ৮ years ago

প্রস্তাবিত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে ১০টি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন। আইনের সংশ্লিষ্ট এসব ধারা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে সংশোধনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার (২৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর কাছে এই পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাব নিয়ে বৈঠক করেন সাংবাদিক নেতারা।

বিএফইউজের পর্যবেক্ষণ শঙ্কা প্রস্তাবনা

১) আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৪ ধারায় ডিজিটাল এজেন্সি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই আইনের বিভিন্ন অধ্যায়ে যেসব ডিভাইসের কথা বলা হয়েছে তার সঙ্গে ইলেক্ট্রনিক সম্প্রচার মাধ্যমের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ। ইলেক্ট্রনিক সম্প্রচার মাধ্যম নিয়ে সম্প্রচার আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে, সেখানে সম্প্রচার বিষয়ক সকল কিছু দেখভাল করার জন্য কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিএফইউজে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, ডিজিটাল এজেন্সি ও সম্প্রচার কমিশনের কর্মপরিধি সাংঘর্ষিক হবে। ডিজিটাল মহাপরিচালক গণমাধ্যমের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে সম্যক অবহিত না হলে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হবে। এই এজেন্সিকে যতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে, এর মহাপরিচালকের পদটিকে ততটাই দায়সারা মনে করা হচ্ছে।

প্রস্তাবনায় বিএফইউজে বলেছে, এই এজেন্সি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নতুন করে ভাবা হোক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে একই ধরনের নানা দফতর থাকার পরও এ ধরনের আরেকটি এজেন্সি থাকা প্রয়োজন কি না, তা ভাবা উচিত।

২) তৃতীয় অধ্যয়ের ৮ ধারা নিয়ে বিএফইউজে বলেছে, শুধুমাত্র বিটিআরসিকে অনুরোধ করার জন্য একটি এজেন্সি করা। এই অধ্যায়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা করার জন্যই বিটিআরসির সৃষ্টি।

প্রস্তাবনায় বিএফইউজে বলেছে, বিটিআরসির আইন খতিয়ে দেখা হোক। বরং বিটিআরসির অধীনেই ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হোক।

৩) চতুর্থ অধ্যায়ে সংগঠনটি বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল নামে আরেকটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব। এই কমিটির সঙ্গে এজেন্সির সম্পর্ক কী হবে, তা বোঝা যাচ্ছে না।

শঙ্কা প্রকাশ করে সংগঠনটি বলেছে, যে হাই প্রোফাইল কমিটির চিন্তা করা হয়েছে, এ কমিটির বৈঠক করাই কঠিন হবে। ফলে যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া দীর্ঘসূত্রিতায় পড়বে।

৪) পঞ্চম অধ্যায় তথ্য কাঠামো নিয়ে বিএফইউজে বলেছে, কোনও বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কাঠামো কি এই আইনের আওতায় আসবে? শঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এ ধারা ব্যক্তিগত গোপনীয় আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, বিশেষ করে মহাপরিচালকের পরিদর্শনের ক্ষমতা।

৫) ষষ্ঠ অধ্যায়ের ২১ ধারার অপরাধ ও দণ্ড নিয়ে বিএফইউজে বলেছে, মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রচারণার বিষয়টি রাজনৈতিক বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এ ধারাটি আরও সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। দেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত কথাগুলো সংযুক্ত করা উচিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আরও স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করা উচিত। ধর্মীয় বা কোনও বিশ্বাসের বিষয়, সম্প্রদায় বা জাতি-গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর বিষয় এই ধারাতেই স্পষ্ট করা উচিত।

৬) আইনের ২৫ ধারা ধারা নিয়ে বিএফইউজে বলেছে, আক্রমণাত্মক মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক তথ্য-উপাত্ত প্রেরণের ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শন কে বিবেচনা করবে? কোন মাত্রায় বিবেচনা করা হবে। বিটিআরসির আইনে ও প্রস্তাবিত অনলাইন নীতিমালায় এসব বিষয় বলা আছে। এই ধারার ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ ও ‘ঘ’-এর অনেক বিষয় সজ্ঞায়িত করার প্রয়োজন আছে। সম্প্রচার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

শঙ্কা প্রকাশ করে বিএফইউজে বলেছে, অপরাধের মাত্রা বিবেচনার বিষয়টি নিশ্চিত করা না হলে ব্যাপক অপপ্রয়োগ হতে পারে। কাউকে হয়রানির জন্যও ব্যবহার হতে পারে।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আইনের অন্য ধারার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হোক। ‘ক’ ‘খ’ ‘গ’ ও ‘ঘ’-এর বর্ণিত বিষয় সজ্ঞায়িত করা হোক। অপরাধের মাত্রা বিবেচনার বিষয়টি নিশ্চিত করা হোক, অপপ্রয়োগ বা কাউকে হয়রানি করার জন্য ব্যবহার না করা হোক।

৭) আইনের ২৮ ধারার ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত নিয়ে বিএফইউজে বলেছে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। (সংবিধানের ৩৯ ধারা)

প্রস্তাবনায় বিএফইউজে বলেছে, কারও ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কারো নিজস্ব প্রচার ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বাধা আরোপ করা যাবে না।

৮) ২৯ ধারা নিয়ে বিএফইউজে বলেছে, মানহানি বিষয়ে প্রচলিত আইন, বিধি আছে। কেনও নতুন করে এই বিধি সংযোজন করতে হবে? প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে প্রচলিত আইনকে আরও আধুনিক করা যায়।

৯) আইনের ৩১ ধারার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে বিএফইউজে বলেছে, বর্ণিত বিষয়গুলো যাচাই করার ক্ষমতা যার হাতে, তিনি কতটা সক্ষম যাচাই করার জন্য? ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে, বিষয়গুলোর অপব্যাখ্যা দিয়ে এর অপপ্রয়োগ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কী?

শঙ্কা প্রকাশ করে বিএফইউজে বলেছে, ব্যাপক অপ্রযোগ হবে। এই ধারার অপপ্রয়োগ বন্ধে সকল পথ রুদ্ধ করতে হবে।

১০) আইনের ৩২ ধারা গুপ্তচর বৃত্তি সম্পর্কে প্রচলিত আইন রয়েছে। তাহলে নতুন আইনের প্রয়োজন কী? সাংবাদিকতা আর গুপ্তচরবৃত্তির পার্থক্য নিরূপণ করা প্রয়োজন।

শঙ্কা প্রকাশ করে বিএফইউজে বলেছে, যে মানের অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, ধারাটি ব্যাপক অপপ্রয়োগের আশঙ্কা আছে।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, গুপ্তচরবৃত্তির সংজ্ঞা স্পষ্ট করা প্রয়োজন। একজন সাংবাদিক একটি বিদেশি গণমাধ্যমের জন্য লেখা বা সম্প্রচারের জন্য খবর পাঠালে তা কি গুপ্তচরবৃত্তির আওতায় পড়বে। বিষয়টি নিষ্পত্তির প্রয়োজন।

আইনে বিশেষ বিধানের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব

এই আইনের কোনও ধারা সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের প্রতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা থাকতে হবে। কোনও সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের জন্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক প্রয়োগ করা যাবে না। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে এ বিষয়ে একটি সেল থাকবে। সেই সেলে অভিযোগ যাবে। সেলের অনুমোদন সাপেক্ষ কেবল কোনও সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করা যাবে। সেলের অনুমোদন ছাড়া সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের বেলায় এই আইন প্রয়োগ করা যাবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন...