নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দুর্নীতির দায়ে দুদকের দায়ের করা মামলার আসামী আবদুল মাবুদ এসএ টিভিতে বহাল থেকে বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, এ মামলায় জামিন না নিয়ে আবদুল মাবুদ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিব্য অফিস করেন। অফিসে বসেই তিনি বিভিন্ন তদবির বাণিজ্য করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তিনি নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের লোক বলে পরিচয় দিয়ে নানা সুবিধা আদায় করেন। তার এমন কর্মকাণ্ডে এসএ টিভির সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এসএ টিভি সূত্রে জানা গেছে, কর্তৃপক্ষ তাকে কয়েক দফা চিঠি দিয়ে ছুটি দিয়েছে কিন্তু তিনি তার স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রতিষ্ঠানে ৩/৪ ঘন্টা অফিস করেন। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের এমডি দেশের বাহিরে থাকাকালীন সময়ে “লেট এডিশন” প্রোগ্রামে দুদকের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তার এক কাছের লোক দিয়ে বক্তব্য প্রদান করান। ওই প্রোগ্রাম প্রচার হলে এসএ গ্রুপ তথা এসএ টিভির বড় ধরনের ক্ষতি সাধিত হত। আবদুল মাবুদ বলে থাকেন, দুদকের মামলায় তার জামিন নেওয়া লাগবে না। দুদক চেয়ারম্যান তাকে মামলা থেকে খালাস দিতে সব রকম সহায়তা করেন। অফিসকে অপরাধের আখড়া বানিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের লিপ্ত হচ্ছেন। রাজধানীর বড় বড় অপরাধীকে এই প্রতিষ্ঠানে এনে দেন দরবার করেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও আবদুল মাবুদ। পছন্দ মত দরবার না হলে তার কাছের লোকজন দিয়ে সংবাদ প্রকাশ ও হয়রানি করা হয় এমনও অভিযোগ রয়েছে আবদুল মাবুদ এর বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, স্ত্রী ও শাশুড়ির সহায়তা নিয়েও অবৈধ উপায়ে অর্জিত পৌনে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ লুকাতে পারেননি সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল মাবুদ। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আবদুল মাবুদ ও তাঁর স্ত্রী নাসিমা খানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
মামলায় বলা হয়, আবদুল মাবুদ অবৈধভাবে অর্জিত ৪ কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ২১৬ টাকা মূল্যের সম্পদের অবৈধ উৎসকে বৈধ দেখানোর উদ্দেশ্যে স্ত্রী নাসিমা খানের নামে মিথ্যা ও জাল নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও হলফনামা নামা করে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকার মিথ্যা ‘দান’ ও ‘ঋণ’ দেখিয়েছেন। এ ছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৪ কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ২১৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ৪ কোটি ৬২ লাখ ৬১ হাজার ৮৯৫ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে আমানত রেখে তা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তুলেও নেন।
দুদক সূত্র জানায়, আবদুল মাবুদ তাঁর আয়কর হিসাব ও দুদকে দেওয়া সম্পদের হিসাব বিবরণীতে দেখান যে তিনি তাঁর স্ত্রী নাসিমা খানের কাছ থেকে ‘দান’ হিসেবে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা পেয়েছেন। নাসিমা খানের এই টাকার উৎস তাঁর মা সাহানারা খান অর্থাৎ আবদুল মাবুদের শাশুড়ি। ২০০৩ সালে সাহানারা খান মেয়ে নাসিমা খানকে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ‘দান’ হিসেবে দেন; যা একপর্যায়ে সুদে-আসলে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা হয়।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মূলত অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বৈধ করতে আবদুল মাবুদ জাল হলফনামা ও স্ট্যাম্প দিয়ে দানপত্র তৈরি করেন।
অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল মাবুদের শাশুড়ি সাহানারা খান জানান, তাঁর স্বামী আকরাম খানের রেখে যাওয়া অর্থ থেকে তিনি ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা মেয়েকে দান করেন। দানের সময় ছিল ২০০৩ সাল। আকরাম খান মারা যান ১৯৮৩ সালে। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে এত বছর ওই টাকা কোথায় ছিল এবং সেই টাকার উৎস কী, তার উপযুক্ত তথ্য দিতে পারেননি সাহানারা খান। দুদক নিশ্চিত হয়েছে যে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের বিভিন্ন সময়ে করা এফডিআর বৈধ করতেই জাল হলফনামা ও জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার করে দানপত্র তৈরি করেন। এ প্রক্রিয়ায় ২০১৬ ও ২০১৭ সালে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা দানসূত্রে মালিক হয়ে তা আয়কর রিটার্নেও প্রদর্শন করেন।
মামলায় দুদক বলেছে, অভিযুক্ত আবদুল মাবুদ ও তাঁর স্ত্রী নাসিমা খানের নামে ৪৩টি এফডিআরে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৯৪ হাজার ৯৪৩ টাকা, নাসিমা খানের নামে ধানমন্ডির ফ্ল্যাট ক্রয়ে ৫৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, জমি ক্রয়সহ পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণে ব্যয় ৪৪ লাখ ৫৪ হাজার ৫১৩ টাকা, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ করা ফ্ল্যাট বাবদ ব্যয় ৬৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন আয়ের উৎস গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া নাসিমা খানের মায়ের দেওয়া ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা দান, নাসিমা খানের ভাইবোনদের ৩ কোটি ১ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা ফেরত দেওয়া, নাসিমা খানের ভাই মো. ফজল করিম খান নাসিমা খানকে মৌখিক ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ৫৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা মূল্যের ধানমন্ডির ফ্ল্যাট দান, নাসিমা খানের নামে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণে ব্যয় বাবদ ৪৪ লাখ টাকা ধার দেখানো—সবই জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা ও ভুয়াভাবে নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সৃজন করে হলফনামা সম্পাদন করা হয়েছে বলে নথিপত্রে দেখা যায়।
এসব তথ্য উল্লেখ করে দুদকের উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ এসএ টিভির সিইও আবদুল মাবুদ ও তাঁর স্ত্রী নাসিমা খানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
‘পদ্মায় গোসলে নেমে ৩ কিশোরের মৃত্যু’
রাজশাহীর পবা উপজেলায় পদ্মা নদীতে ডুবে তিন কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।......বিস্তারিত