TadantaChitra.Com | logo

২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মুগদা মহানগর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের সামনে মাদকের হট স্পট

প্রকাশিত : জুন ২৬, ২০১৮, ১৬:৫২

মুগদা মহানগর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের সামনে মাদকের হট স্পট

মুন্নি আক্তারঃ রাজধানীর মুগদাপাড়ায় অবস্থিত মহানগর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের সামনে প্রতিদিন মাদকের হাট বসে। দিন-রাত ২৪ ঘন্টা এখানে বিক্রি হয় লাখ লাখ টাকার মাদক। এজন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা মাদক সেবন এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এজন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অবিভাবকদের মধ্যে এক ধরণের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, মুগদা মহানগর আইডিয়াল স্কুল কলেজের উল্টৈা পাশেই রয়েছে মাদক স্পট। যেখানে রাত দিন ২৪ ঘন্টা ইয়াবাসহ লাখ লাখ টাকার মাদক বিক্রি হয়ে থাকে। পিয়ারি বেগম নামের একজন মাদক সম্রাজ্ঞি এই মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে বলে জানা গেছে। তার রয়েছে শত শত অনুসারী। তারা নিজেরার ইয়াবা সেবন করে এবং এলাকার মাধ্যে সাপ্লাই করে থাকে। এসব মাদক হাত বদল হয় কলেজের সামনেই দিনে দুপুরে। ব্যাপকহারে এই কলেজের শিক্ষার্থীরা মাদকে জড়িয়ে পড়ছেন। এতে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবকরা। কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মামুন মিয়া জানিয়েছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ছাড়াও মুগদা থানার পুলিশ এই মাদক স্পট থেকে মাসোয়ারা পান। এজন্য এখানকার মাদক ব্যবসা থামছে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিছুদিন আগে মুগদাপাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান চলে। অভিযানে অন্য জায়গায় সার্চ করলেও পিয়ারি বেগমের বাড়িতে অভিযান চলেনি। পরে জানা যায়, অভিযানের আগেই মাদক কর্মকর্তারা পিয়ারি বেগমকে জানিয়ে দেন। সেদিন পিয়ারি বেগম তার ঘরে মাদক রাখেনি। কিন্তু অভিযানের পর পরই আবার শুরু করে ব্যবসা। কিন্তু মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সেদিন এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, তাদের কাছে খবর আছে পিয়ারি বেগম গাজা বিক্রি করে থাকেন। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, মাদক সম্রাজ্ঞি পিয়ারি বেগমের রয়েছে শতাধিক অনুসারী। এরা প্রতিদিন পিয়ারি বেগমের কাছ থেকে মাদক ফ্রি পেয়ে থাকে। বিনিময়ে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকার ইয়াবা বিক্রি করে দিতে হয়। এজন্য তারা কলেজের সামনে সব সময় বসে থাকে। এখান থেকে রিকশা মোটরসাইকেলে করে মাদক নিয়ে যায় খদ্দেররা। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে এসে নিয়ে যায় মাদক। দিনে রাতে প্রকাশ্যে এখানে মাদক এবং টাকা পয়সা লেনদেন হয়ে থাকে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত আশপাশের দোকানদার এবং এলাকার মানুষ। কিন্তু পিয়ারি বেগমকে কিছু বলার সাহস রাখে না কেউ। কারণ কিছু বলতে গেলে পিয়ারি বেগমের লোকজন এসে হামলা করতে পারে এমন আশঙ্কা সবার মনে। মূল রাস্তায় পিয়ারি বেগম প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা করছে। এখান দিয়ে দিনে রাতে শত শত বার পুলিশের গাড়ি যাতায়াত করে। বিনা দোষে অনেক মানুষকে মাদক দিয়ে পুলিশ ধরে আনলেও পিয়ারি বেগমের গায়ে কোন রকম আঁচড় পড়ে না। এ বিষয়ে পিয়ারি বেগমের ভাষ্য হলো, প্রতি সপ্তাহে ১৮ হাজার টাকা মাসোয়ারা দেই পুলিশকে। আমাদের ধরবে কেন ? জানা গেছে, কলেজের সামনে মাদকের হটস্পট হওয়ায় কলেজের শিক্ষার্থীরা মাদকে জড়িয়ে পড়েছে। যে কারণে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে শিক্ষক-অবিভাবক। কারণ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে চলে মাদকের ব্যবসা। এখান থেকে পুরো মুগদা পাড়া এলাকায় মাদক ছড়িয়ে পড়ে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, মহানগর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের বেশ কিছু শিক্ষার্থী মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়েছে। তারা মাদকের টাকার জন্য বাসায় উৎপাত করে থাকে। শিক্ষার্থীদের মাদকের জড়িয়ে যাওয়ার কথা শিকার করেছেন কলেজের একাধিক শিক্ষক। তারা বলছেন, অনেকে চেষ্টা করেও এখান থেকে মাদকের ব্যবসা দূর করা যায়নি। আমরা অসহায়। আমরা চাই এলাকা মাদক মুক্ত থাক। কিন্তু প্রশাসন তাদের শেল্টার দেয়। আমাদের কিছু করার নেই। অভিযোগ রয়েছে, মামুন মিয়া তার প্রাইভেট স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট ভাল দেখানোর জন্য প্রশ্নপত্র ফাঁস করে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন। পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র দিয়ে দেওয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এজন্য তিনি (মামুন মিয়া) পরীক্ষা এবং হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে চুক্তি করে পরীক্ষার এক ঘন্টা আগে প্রশ্নের ছবি মোবাইলের মাধ্যমে করে নির্দিষ্ট ফেইসবুকে ছেড়ে দেন। টাকায় চুক্তিবদ্ধ শিক্ষার্থীরা হলের (কদমতলা স্কুল এন্ড কলেজের) পাশেই একটি বাড়িতে অবস্থান করেন। সেখানে প্রশ্নের সমাধান করে দেওয়ার জন্য কিছু লোক অবস্থান করেন। তারা শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র বুঝিয়ে দেওয়ার পর ওই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে হলে প্রবেশ করেন। গত কয়েকটি পরীক্ষায় এ কাজটি সুচারুরূপে করেছেন প্রতারণায় পটু এই অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত)। আর প্র্যাকটিকেল পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ঘুষ দিতে হয় বলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কমপক্ষে তিন হাজার করে টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা করেন শিক্ষক নামের কলঙ্ক এই মামুন। নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার জন্য টাকা দিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি পরীক্ষার্থীদের আগেই বলে দেন বলেও অভিযোগে প্রকাশ। এভাবে প্রতিবছর বোর্ড পরীক্ষার সময় এলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। এছাড়া টাকার বিনিময়ে বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ফেল করা ছাত্র-ছাত্রীকে পাস করিয়ে আনেন এবং এ-প্লাস না পাওয়া শিক্ষার্থীদের ফল পুনর্ববিচেনার দরখাস্ত দিয়ে এ-প্লাস পাইয়ে দেন বলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ। এভাবে তিনি মোটা অংকের টাকা নেন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের কাছ থেকে। মজার বিষয় হলো, প্রশ্নপত্র ফাঁস করেও এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় একটি এ প্লাসও পায়নি প্রতিষ্ঠানটি থেকে। লোকজন বলে থাকেন এবছর মামুন মিয়ার দুই নম্বরী চেহারা উন্মোচিত হয়েছে। অথচ গেøাডেন এবং এ প্লাস পাইয়ে দেওয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসএসসিতে গোল্ডেন ও এ প্লাস পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়েছিলেন তিনি। এদিকে কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেও নানাভাবে শিক্ষার্থীদের ভাল রেজাল্ট করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিজে প্রাইভেট পড়ান ধর্মীয় মুখোশধারী এই মামুন মিয়া; অথচ ক্লাসের শিক্ষার্থীরা তার কাছে গেলে দুর্ব্যবহার করে থাকেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন এই প্রতিবেদককে। এছাড়া তার রয়েছে কোচিং ব্যবসা এবং বাংলাবাজারে গাইডের ব্যবসা। সেখান থেকেও অনৈতিকভাবে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন তিনি। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, তার লেখা গাইড কেনার জন্য স্কুল এবং কলেজের সব শিক্ষার্থীকে বাধ্য করা হয়। গাইড না কিনলে ক্লাস টিচাররা বকাবকি করেন শিক্ষার্থীদের। আর ক্লাসে ব্যবহারিক ক্লাস না নিয়েও ব্যবহারিক ক্লাসের টাকা নেওয়া হয়। এভাবে কয়েক বছরে বিশাল অংকের টাকার মালিক বনে গেছে শিক্ষক নামের কলঙ্ক এই প্রতারক। সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হলো, কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতারণার শিক্ষা দিয়ে থাকেন এবং নানাভাবে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করেন এই প্রতারক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত)। ছাত্র ভর্তি করে দিতে পারলে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ভর্তি ফির ৭৫ ভাগ টাকা নগদ দিয়ে দেওয়ার লোভ দেখান বলে অভিযোগ পরহেজগার লেবাজের অধিকারী মামুনের বিরুদ্ধে। (চলবে)


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।