TadantaChitra.Com | logo

২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফের সক্রিয় মানবপাচারকারীরা! যাত্রাবাড়ীতে দুই প্রভাবশালীর নিয়ন্ত্রনে মৎসলীগের নাসিরের অপকর্ম

প্রকাশিত : জুলাই ০৯, ২০১৮, ১৮:৩৯

ফের সক্রিয় মানবপাচারকারীরা!  যাত্রাবাড়ীতে দুই প্রভাবশালীর নিয়ন্ত্রনে মৎসলীগের নাসিরের অপকর্ম

সাদমান রাফিদঃ রাজধানীসহ ঢাকা শহরে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানবপাচারকারী সিন্ডিকেট। বিভিন্ন থানা এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতই গজিয়ে উঠছে নারী বিক্রির এজেন্ডরা। জানা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিশোরী মেয়েদের লোভনীয় চাকুরি, মডেল-নায়িকা বানানো ও প্রেম-বিয়ের ফাঁদে ফেলে নিঃশেষ করে দেয়া হয় মেয়েদের। বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত মেয়েদের নিয়ে আসা হয় ঢাকার বেশ কিছু আবাসিক হোটেল ও ফ্ল্যাট বাসায়। সেখান থেকেই শুরু হয় সমাজের নিষিদ্ধ নারীর ইতিহাস। জোরপূর্বক একের পর এক গনধর্ষণ করানোর পর সংগৃহীত মেয়েদের বিক্রি করে দেয়া হয় বিভিন্ন পতিতালয়ে। এখান থেকে আর ফেরত আস্তে পারে না কোন মেয়ে। আর তাদের অভিবাবকরাও জানেন না তাদের আদরের সন্তানটি কোথায় আছে। ১৪ ই আগস্ট রবিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে নারীপাচারকারীরা শ্যামপুর থানা এলাকার দক্ষিন বাংলা আবাসিক হোটেলে তুলে নিয়ে যায়, সাবিনা নামের এক তরুণীকে। সেখানে তালা বদ্ধ করে রাখা হয় তাকে। অনেক কৌশল খাটিয়ে সাবিনা সহযোগিতার জন্য ফোন করেন ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এর ০১৭১৩৩৭৩১৩৮ এই নাম্বারে। কিন্তু ঘটনা স্থলে পুলিশ যাওয়ার আগেই সাবিনা নামের সেই তরুণীর জীবনে ১৪ ই আগস্ট অভিশপ্ত দিন হিসেবে রূপান্তরিত হয়। একের পর এক পালাক্রমে গনধর্ষণ করা হয় সাবিনাকে। পরবর্তীতে স্থানীয় শ্যামপুর থানা পুলিশ এসে সাবিনাকে উদ্ধার করে নারিপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন না করেই সেখান থেকে বিদায় করে দেয়। জানা যায়, এর আগে নারীপাচারকারীদের বিরুদ্ধে সাবিনা নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২ এ মানবপাচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৯২/২০১৬ইং। আদালত মামলাটি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করেন। থানায় মামলাটি আসার পর মামলায় উল্লেখিত একাধিক মানবপাচারকারীকে আটকের পর গোপন তদবিরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। বর্তমানে চাঞ্চল্যকর এই মানবপাচার মামলাটি রাখা হয়েছে হিমাগারে। এ বিষয়ে সাবিনা জানান, মানবপাচার মামলাটি তুলে নিতে অনেক হুমকি দিচ্ছিল মানবপাচারকারী নাসির, রানা, সিকদার আলাউদ্দিন গংরা। সর্বশেষ মানবপাচারকারিরা তাকে ওই মামলার রেষে শ্যামপুর থানার দক্ষিন বাংলা আবাসিক হোটেলে নিয়ে আটক করে রাখে হানিফ, রনি, মানিক, শরিফ, আলম, সোর্স রাজু, কাওসার, সুমন, সায়েদ ও হোটেল মালিক। এ বিষয়ে শ্যামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, আপনি থানায় আসেন আপনার সাথে সাক্ষাতে কথা বলবো। এছাড়াও হোটেলে সাবিনা আটকের ঘটনার বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি। এ দিকে শ্যামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এর সাথে মুঠো ফোনে আলাপ করার পরপরই রনি পরিচয়ে ০১৭১০৮৩০১১৪ নাম্বার থেকে প্রতিবেদকে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে আসছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকায় বিভাগে মানবপাচারকারীদের জিম্মায় প্রাপ্ত-অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরী-মেয়ে আটক রয়েছে প্রায় ৫শতাধিক। আটককৃতদের বিভিন্ন রুমে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে শ্যামপুরের দক্ষিন বাংলা আবাসিক হোটেল, কাফরুলের ১৫২ নং হোল্ডিংয়ের হোটেল স্বাগতম আবাসিক, হোটেল এশিয়া, মিরপুর মডেল থানা এলাকার হোটেল বৈশাখী, হোটেল রিলেক্স, হোটেল রেড বেøজ, হোটেল জমজম, হোটেল ফ্রেন্ডস, মিরপুর মাজার সংলগ্ন হোটেল ডায়মন্ড, হোটেল বাগদাদ, হোটেল তাজ, গাবতলী বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন হোটেল মধুমতি, হোটেল চৌধুরী, গাজীপুর টঙ্গী বাজার এলাকার হোটেল স্বাগতম, টঙ্গী চৌরাস্তা এলাকার হোটেল ডন, হোটেল নসীব, জয়দেবপুর থানা এলাকার হোটেল রাজধানী আবাসিক, হোটেল এশিয়া, হোটেল রাজমনি, হোটেল ড্রিম ল্যান্ড, হোটেল এয়ারসহ আরও অনেক আবাসিক হোটেল ও ফ্ল্যাট বাসায়। বর্তমানে এ সকল হোটেলে মেয়ে সাপ্লাইয়ের কাজ করছে ওয়ারী জোনের শ্যামপুর থানার দক্ষিন বাংলা আবাসিক হোটেলের মালিক, ম্যানেজার ও নারীর দালালগং। সরে জমিনে এ সকল আবাসিকে ছদ্মবেশে প্রবেশ করে দেখা যায়, প্রতিটি হোটেলের বিভিন্ন কক্ষে মেয়েদের তালাবদ্ধ করে আটক করে রাখা হয়েছে। কিছুক্ষন পরপরই ওই সকল রুমে বহিরাগত পুরুষদের গ্যাং রেপ করতে টাকার বিনিময়ে ঢুকতে দেয়া হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় থানা পুলিশকে অবগত করা হলেও মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান করা হয়ে থাকে। কিন্তু থানা পুলিশকে জানানোর পরপরই ঘটনা স্থল পুরোপুরি কোন পুলিশ আসার গোপন সংবাদে খালি করে দেয়া হয়। আর মেয়েদের রাখা হয় তালাবদ্ধ করে মুখ বেধে। এদিকে গত একুশে আগস্ট মাঝরাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার দক্ষিন যাত্রাবাড়ী হোটেল প্রাইম আবাসিকের ৬০৩ ও ৬০৪নং রুমে নক করতে থাকে ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতা মফিজউদ্দিন হাওলাদারের ছেলে মোয়াজেম হোসেন। দরজা টোকানোর শব্দে হোটেলের রুমে থাকা রুবল ও জামালসহ অন্যান্যদের ঘুম ভেঙে গেলে রুম দুইটির দরজা খুলতেই রুমের ভিতর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকে পরে ৫/৬ জন যুবক। রুমগুলোর ভিতরে থাকা সকলের টাকা পয়সা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণের চেইন ও প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র নিয়ে যায় ডাকাত দল। এ সময়ে হোটেলের রুমে থাকা প্রত্যেককে দেশিয় অস্ত্র চাপাতি দিয়ে জখম করা হয়। চাপাতির আঘাতে আলতাফ ও সহিদুল গুরুতর আহত হয় রুবেল ও জামালদের চিৎকারে হোটেল স্টাফ ও ম্যানেজার এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারধর করে তারা চলে যায়। ৬০৩ ও ৬০৪নং রুম দুইটি ভারা নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত থাকতো বিভিন্ন মেলার স্টল ব্যাবসায়ী ও দোকানদার রুবেল, জামাল, আব্দুল হালিম, আলতাফ, সহিদুল, রাজিব, আকবর ও তফসির। এ বিষয়ে ডাকাতের কবলে পরা জামাল জানান, রাত ২টার দিয়ে রুমে প্রবেশ করে ডাকাত দল কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলোপাথাড়ি চাপাতি দিয়ে মারধর শুরু করে তারা। এতে আহত প্রত্যেকেই বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। থানা পুলিশকে জানানো হলেও তারা কেউ কোন ভ‚মিকা পালন করেননি। তবে এঘটনার সাথে হোটেল স্টাফ ও ম্যানেজার গং জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করছেন তারা। এ দিকে হোটেলের সিসি ক্যামেরায় ছবি দেখে স্থানীয়রা পরিচয় পেয়েছে ডাকাত সর্দার মোয়াজ্জেম হোসেন নাসিরের। মোয়াজ্জেম হোসেন নাসির স্থানীয় যাত্রাবাড়ী থানা মৎস্যলীগের সভাপতি পরিচয়ে এলাকার বিভিন্ন ¯পটে মাদকদ্রব্য ইয়াবা সরবরাহ করে। এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ চলা আবাসিক হোটেল ও ফ্ল্যাট বাসায় নারী সরবরাহ করে থাকে। জানা গেছে, বর্তমানে নাসিরের কথিত স্ত্রী লুবনাকে দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মাদক সরবরাহ করে আসছে। এছাড়াও রাত ১২টার পর থেকেই যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালি এলাকার বিভিন্ন রোডে উৎপেতে থেকে লিপ্ত থাকে ছিনতাইয়ে। এলাকার গণ্যমান্য দুই প্রভাবশালী যাত্রাবাড়ী আওয়ামীলীগের সাধারন স¤পাদক হারুনর রশিদ মুন্নার খালাতো ভাই ও শিল্পপতি নুরু হাজীর নিকট আত্মীয় পরিচয়ে চালিয়ে যাচ্ছে যত অপকর্ম। মৎস্যলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সিকদার মোঃ আলাউদ্দিনের ভগ্নীপতি ও পলাশ তালুকদারের আত্মীয় পরিচয় দিয়েও বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করছে বলে জানান স্থানীয় অনেকেই। এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী আওয়ামীলীগের সাধারন স¤পাদক হারুনর রশিদ মুন্না বলেন, “নাসির নামের আমার কোন খালাতো ভাই কিংবা কোন আত্মীয়ই নেই। এই নামের আমি কাউকে চিনি না। কেউ যদি আমার নাম বিক্রি করে চলে এর দায়ভার আমার না। তবে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ”। গোপন সুত্রে জানা গেছে মোয়াজ্জেম হোসেন নাসিরের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক মামলা। (চলবে)


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।