TadantaChitra.Com | logo

৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রূপনগরের স্বঘোষিত সম্রাজ্ঞী নাজমার গ্যাস বিদ্যুৎ চোরাই সংযোগে মাসিক আয় কোটি টাকা!

প্রকাশিত : জুলাই ২৬, ২০১৮, ১৮:০১

রূপনগরের স্বঘোষিত সম্রাজ্ঞী নাজমার গ্যাস বিদ্যুৎ চোরাই সংযোগে মাসিক আয় কোটি টাকা!

রাজধানীর মিরপুর রূপনগরের দুয়ারীপাড়ায় স্বঘোষিত সম্রাজ্ঞী নাজমা হোসেনের রাজত্ব চলছে। অবৈধ ব্যবসা করেই তিনি জিরো থেকে হিরো বনেছেন। তার নেতৃত্বেই ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিলসহ মাদকের জমজমাট কারবার চলছে। এমনকি সরকারী জমিতে বসবাসকারীদের অবৈধ গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানি সংযোগ দিয়েও প্রতিমাসে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবু কমেনি তার অর্থলিপ্সা। অন্যের সম্পত্তি দখলেও তার জুড়ি নেই। রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। প্রভাবশালীদের সাথেও রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক। এসব কারণে তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কারো প্রতিবাদ করারও সাহস নেই।
কে এই নাজমা ?
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নাজমার গ্রামের বাড়ি বরিশাল। তার পিতা মুসলিম বাংলা একাডেমিতে দারোয়ানের চাকুরি করতো। অতি দরিদ্র পরিবারেই নাজমার বেড়ে ওঠা। পরে জাহাঙ্গীর নামে স্বল্প বেতনের এক সাধারণ কর্মচারীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু স্বামীর বেতনে সংসারের ব্যয় নির্বাহ হতো না। ওই সময় তার সংসার খরচ ও ঘরভাড়া বাবদ জনৈক ব্যক্তি তাকে নিয়মিত টাকা দিতো। এ নিয়ে অনেক সরস আলোচনা রয়েছে। এরপরই ধুরন্ধর হয়ে ওঠেন নাজমা। একই সঙ্গে ঘুরতে থাকে ভাগ্যের চাকা। সময়ের ব্যবধানে নিজে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হন। ধীরে ধীরে প্রভাবশালী অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। এভাবে প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের সঙ্গে সখ্যতা থাকার দোহাই দিয়ে তিনি রূপনগরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। কেউ তার অবৈধ কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেই তার ওপর নেমে আসে নির্যাতনের স্টিম রোলার। লেলিয়ে দেয়া হয় পোষ্য বাহিনী। মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে লোকজনকে বশ করার কৌশলও তার জানা।
কোটিপতি হবার নেপথ্যে:
এককালের কপর্দকহীন নাজমা এখন কোটিপতি। বসবাস করেন আলীশান বাড়িতে। চলেন রাজকীয় হালে। শুধুমাত্র দুয়ারীপাড়ায় এলাকায় তার রয়েছে ডজনখানেক প্লট ও বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে কোনটাই নিজের কেনা নয়। জোরপূর্বক দখল করেই নিজের সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছেন। পাশাপাশি মাদকসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসাও চলছে রমরমা। এর মধ্যে সরকারের গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানি সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করেই নাজমা এবং তার সহযোগীরা প্রতি মাসে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অভিযোগ মতে, নওয়াব ফয়জুন্নেসা ওয়াকফ স্টেট ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের জমিতে কয়েক হাজার পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে নাজমার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সহস্রাধিক বাসা। এসব বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিতে তাকে এককালীন ৩৫-৪০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এরপর প্রতিমাসে দিতে হয় ১২শ’ টাকা করে। মাসের ১০ তারিখের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পুনঃসংযোগ পেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। সরকারের অফিসের মতোই আবেদন করতে হয় নাজমার কাছে। এ জন্য ফের মোটা অংকের অর্থ গচ্চা দিতে হয়। সাথে দিতে হয় মুচলেকা। যাতে ভবিষ্যতে নাজমার কোন কাজের ব্যাপারে আপত্তি না জানাবার অঙ্গীকার থাকে।
গ্যাস ছাড়াও অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েও আদায় করা হচ্ছে মাসিক বিল। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল অংকের রাজস্ব। এ অবৈধ আয় নিশ্চিত করতে তার রয়েছে পেটোয়া বাহিনী। বোনের স্বামী মনির হোসেন এ বাহিনীর প্রধান সিপাহসালা। আব্দুল লতিফ মোল্লা এবং লুৎফর রহমান এই বাহিনীর ক্যাডার। অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল আদায়ের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন তারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধ গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মিলেনি। বরং নাজমা এবং তার বাহিনীর লম্পঝম্প বেড়ে গেছে। তিতাস, ডেসা, ওয়াসা এবং ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা হচ্ছে বলে চক্রটি নিজেরাই দম্ভের সঙ্গে বলে বেড়ায়।
মাদক ব্যবসা:
এদিকে নাজমার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, তিনি একজন মাদক মাফিয়া। তার নেতৃত্বেই রূপনগর, দুয়ারীপাড়াসহ আশপাশ এলাকায় মরণনেশা ইয়াবা, গাঁজা ফেন্সিডিলের জমজমাট ব্যবসা চলছে। নিজে গাড়িতে করে মাদকের চালান এনে তা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। বছর খানেক আগে নাজমার গাড়ি থেকে বিপুল সংখ্যক ইয়াবা উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।ওই ঘটনায় তাকে বেশ কয়েকদিন কারাবাস করতে হয়। মুক্ত হবার পর তার মাদক ব্যবসা আরো বেড়ে যায়। বর্তমানে নাজমার ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করছে সুজন মোল্লা এবং শহীদ মোল্লাা। কয়েক মাস আগে সুজন ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে ধরাও পড়ে। প্রায় আড়াই মাস তাকে জেল খাটতে হয়। জামিনে বেরিয়ে সে পুনরায় মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে।
দখলী সাম্রাজ্য:
সন্ত্রাস আর অবৈধ ব্যবসার কারণে রূপনগর-দুয়ারিপাড়ায় নাজমা সম্রাজ্ঞীর খেতাব পেয়েছেন। তার নামে ওই এলাকার মানুষ তটস্থ থাকে। কখন তার রোষাণলে পড়ে নিজের সম্পত্তি হারাতে হয়, সে ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। তারপরও অনেকে নিস্তার পাননি। নাজমার দখলী থাবায় অনেকে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। অনুসন্ধানে নাজমার দখল করা বেশ কয়েকটি বাড়ির ঠিকানা মিলেছে। এর মধ্যে দুয়ারীপাড়ার ‘ক’ ব্লক ২/১ নম্বর (ডাবল প্লট); ২ নম্বর রোডে ৯, ১১, ১৭, ১৯, ২১ ও ২২ এবং ৪ নং রোডের ৫ নম্বর প্লট; ‘খ’ ব্লকের ১ নং রোডে জাহেদের বাড়ি। এছাড়া দুয়ারীপাড়া বাজারে অন্তত আটটি দোকান দখল করে রেখেছে।
অন্যদিকে নাজমার সহোদর জাহাঙ্গীর হোসেন দুয়ারিপাড়া ২ নম্বর রোডের ২৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের একটি বাড়ি জবর দখল করে রেখেছেন। ফরিদপুরের নগরকান্দার জনৈক সিদ্দিক ফকির ওই বাড়িতে বসবাস করতেন। সিদ্দিক ও অন্য ভাড়াটিয়াদের সন্ত্রাসী কায়দায় তাড়িয়ে জাহাঙ্গীর সেটি দখল করেছে। জানা গেছে, আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজেদা চৌধুরী সংসদ সদস্য ইলিয়াছ উদ্দিন মোল্লার সহায়তা চেয়েও বাড়িটি দখলমুক্ত করতে পারছেন না।
আ’লীগ নেতাকর্মীরা বিব্রত:
নাজমার জন্য বিব্রত স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য নাজমার রোষানল থেকে রেহাই পাচ্ছেননা দেশে আলোড়ন সৃস্টিকারী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মোল্লা। জীবনের ঝুকি নিয়ে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধি অপরাধের অভিযোগে কুখ্যাত রাজাকার কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে অপরিসীম সাহসীকতার পরিচয় দেন তিনি। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তার অনুসারীরা এখন নানাভাবে নাজমা হোসেনের হয়রানির শিকার। আগামীতে এলাকায় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিরর হতে প্রত্যাশী নাজমা আমির হোসেন মোল্লাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভেবে এখন থেকেই দমনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে নাজমা নিজের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে। মাদক ব্যবসাসহ সব ধরনের অপকর্মে জড়িত থেকে এলাকার পরিবেশকে কলুষিত করছে। দায়ভার আওয়ামীলীগের উপর চাপানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে স্থানীয়দের দাবি। এ ব্যাপারে নাজমার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান…..(চলবে)


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।