মাদক সম্রাট নূর মোহাম্মদের মাদক ব্যবসা

লেখক: সাব এডিটর
প্রকাশ: ৭ years ago

তিনি নিজেই একজন মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বিভিন্ন মহলে। আবার তিনি নিজেই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র দিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছাড়াই করেন মাদকাসক্ত লোকের চিকিৎসা। চলেন সন্ত্রাসী স্টাইলে। হাতে স্বর্ণের আংটি ও মেয়ে মানুষের মত ব্যবহার করেন স্বর্ণের ভেছলাইট, গলায় থাকে সব সময় সোনার চেইন। তার এমন চলাফেরা দেখলেই বুঝা যায় তিনি কোটিপতি বাবার কোটিপতি সন্তান। তবে বাস্তবে তার বাবার চিত্র বিভিন্ন। বাবার তেমন অর্থ সম্পদ না থাকলেও তিনি চলেন রাজার হালে। মায়ের পৈত্তিক সম্পত্তির বাড়ি পেয়ে সেখানেই বসে করেন মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ। পুরো সিপাহীবাগ জুড়ে লাগিয়েছেন সিসিটিভি। নারীঘটিত ব্যাপারেও তিনি সেরা ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। প্রথম স্ত্রীর ছিলেন পুতুল নামের এক নারী। তার নারী কেলেঙ্কারীর কারণেই স্ত্রী পুতুল তাকে তালাক দেন বলে জানিয়েছেন তার নিকটতম এক আত্মীয়। স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে সম্পর্ক গড়েন ভাবী নামীয় রক্ষিতা জেসমিনের সাথে। এই ঘরে একটি সন্তানও রয়েছে নূর মোহাম্মদের। অভিযোগ রয়েছে, খিলগাঁও, রামপুরা, বনশ্রী, দক্ষিণ বনশ্রী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট বাসা নিয়ে বিভিন্ন মেয়েদেরকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করান। এছাড়াও সৃষ্টি মাদকাসক্তি নিরায়ম কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে নতুন কৌশল অবলম্বন করে নাম দিয়েছেন এক্টিভ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। তার এমন অপকর্ম নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব লিখেছেন আবু নাছের মোহাম্মাদ পিলুঃ
যার মধ্যে ভূতের বসবাস সে নাকি মানুষের ভূত ছাড়ায়। নাম তার নূর মোহাম্মদ রাতুল। খিলগাঁও সিপাহীবাগ এলাকার মাদক সম্রাট হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। সম্প্রতি মাদক বিরোধী অভিযানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোঁখের আড়ালে ছিলেন কিছুদিন। আবারো প্রকাশ্য মাঠে এসেছেন কয়েকদিন ধরে। নিজেই একজন মাদক ডিলার ও সেবনকারী আবার তিনি নিজেই মাদক নিরাময় কেন্দ্র করে মাদকাসক্ত মানুষের চিকিৎসা করেন। তবে তিনি এ কাজের চিকিৎসকও নন। এ পেশায় তার নাই কোন ডিগ্রি বা সনদ। তবুও তিনি খুলে বসেছেন সৃষ্টি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নামের একটি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানের মাদক ব্যবসা করছেন এমন সংবাদ বা বিভিন্ন মহলে আলোচনার ঝড় উঠলে তিনি তার এই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে বর্তমানে নাম দিয়েছেন এক্টিভ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। খিলগাঁও জোনের পুলিশের কর্তা এসি নাদিয়া আক্তার জুই এর সাথে রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। মাদক সম্রাট নূর মোহাম্মদ রাতুল নিজেই বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্য বলে বেড়ান এসি নাদিয়া আক্তার জুইয়ের বাসার ফার্নিচার থেকে শুরু করে রান্না করার হাড়িপাতিলও কিনে দিয়েছেন। তার এমন কথাবার্তায় অনেকেই চমকে উঠেন। আর এই জন্যই অনেক সাধারন মানুষ তার ভয়ে কথাও বলতে পারেন না।

মাদকাসক্তির আড়ালে মাদক-জুয়ার নীলা খেলা!!
রাজধানীর অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা মাদক কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থার ধরণ রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো। সেগুলোতে মাদকাসক্তদের সুস্থ করার নামে চলে নানা অপচিকিৎসা। নিবন্ধণহীন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীরা প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন। অনেক কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদকাসক্তি নিরাময়ের নামে মাদকদ্রব্য বেচাকেনার অভিযোগ। বিধিমালা ভঙ্গ করে অধিকাংশ মাদক নিরাময় ও পুর্ণবাসন কেন্দ্র কথিত চিকিৎসার প্রয়োজনের কথা বলেও ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক। খোজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরে অবৈধ প্রায় পাঁচ শতাধিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে। রাজধানীর বাইরে রয়েছে আরো প্রায় তিনগুন। এগুলোকে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়ে কেউ কেউ সমাজসেবা অধিদপ্তর বা ঢাকা সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে সনদ নিয়ে কেন্দ্র পরিচালনা করছেন। এসব কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা/সুবিধা বলতে কিছুই নেই, আছে অভিযোগ আর অভিযোগ। রোগীর ওপর শারীরিক নির্যাতন, মাদকের ব্যবসা পরিচালনা ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো অর্থ আদায় করার অভিযোগ তো রয়েছেই। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেশ কয়েকটি অবৈধ কেন্দ্রের সন্ধান মেলে। আবাসিক বাড়ির একটি ফ্ল্যাট। ছোট ছোট কয়েকটি কক্ষ। নেই আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, ঘরের জানালা বলতে সামান্য ফোকর। তার মধ্যেই রান্না ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। চিকিৎক নেই, নেই চিকিৎসা সরঞ্জাম। অবিশ্বাস্য হলেও এটি একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। জানা যায়, এখানে মেঝোতে ঢালা বিছানার ২০-৩০ জন ও কেবিনের মাধ্যমে নিয়মনীতি না মেনে চিকিৎসা দেয়া হয়। হাদীর কর্মকর্তা লিটন অনুমোদনের ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দেননি। তার মতে, লাইসেন্সের দরকার নেই। এ বিষয়ে গোড়ান সিপাইবাগের প্রশান্তির কো-অর্ডিনেটর ফারুক রহমান মিন্টু বলেন, সরকারকে নিয়মিত ট্যাক্স ভ্যাট দিয়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। বাণিজ্য নয়, আমাদের মূল লক্ষ্য সেবাদান। তবে সিপাইবাগের সাবেক নাম সৃষ্টি বর্তমানে এক্টিভ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র অন্যান্য মাদক নিরাময় কেন্দ্রের মালিকরা সাংবাদিক আগমনের খবর জেনেই নিরাময় কেন্দ্র ছেড়ে পালিয়ে যান। সাবেক সৃষ্টি নিরাময় কেন্দ্র ও বর্তমান নতুন নাম এক্টিভ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের মালিক নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে কথিত মাদক নিরাময় কেন্দ্র’র নামে মাদকের পাইকারী বেচাকেনা ও রমরমা জুয়ার আসর পরিচালনার অভিযোগ আছে। তার নেতৃত্বেই মাদক ব্যবসায়ীরা চাঁদা তোলে প্রায় ত্রিশ লাখ টাকার তহবিল বানিয়েছে। নূর মোহাম্মদ সে তহবিলের টাকা খরচ করেই মাদক বিরোধী আন্দোলনকারীদের নানাভাবে হয়রানী ও মামলার ফাঁদে ফেলছে। রাজধানীর খিলগাঁও থানার উত্তর গোড়ান সিপাইবাগের “পুরানো নাম সৃষ্টি মাদকাসক্তি নিরাময় নতুন নাম এক্টিভ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ” নামক কথিত মাদক নিরাময় কেন্দ্রটি রীতিমত অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন নির্বাণ, খিলগাঁও চৌরাস্তা আইডিয়াল কলেজ সংলগ্ন রূপান্তর, খিলগাঁও মেরাদিয়া ভূইয়াপাড়ায় প্রান্তি, দক্ষিণ গোড়ান শান্তিপুরে স্বপ্ন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক অবৈধ কেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে বহু মামলার আসামী নূর মোহাম্মদের গড়ে তোলা নিরাময় কেন্দ্র সাবেক সৃষ্টিতে বর্তমান নাম পরিবর্তন করে এক্টিভ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের হরদম মাদক কেনাবেচা, সেবন আর রমরমা জুয়ার আসর। প্রতারণার বাণিজ্য ফেঁদে বসা নূর মোহাম্মদ তার সাবেক সৃষ্টিতে বর্তমান নাম পরিবর্তন করে এক্টিভ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে নামক গুদাম ঘরটির বাইরে তালাবদ্ধ করে এর ভেতরে অপরাধ অপকর্মের নিরাপদ আখড়া বানিয়েছেন। সেখান থেকেই সমগ্র খিলগাঁও এলাকায় ইয়াবার পাইকারী সরবরাহ যায়, নিয়মিত চলে লাখ লাখ টাকার জুয়ার আসর। নিজেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে অবাধে অপরাধ করে বেড়ালেও তার বিরুদ্ধে টু শব্দটি করার সাহস কারো নেই। এসব ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, সাবেক সৃষ্টিতে বর্তমান নাম পরিবর্তন করে এক্টিভ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নামে মাদক নিরাময় কেন্দ্র’র লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল কিন্তু বহুবিধ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই তার আবেদন বাতিল করা হয়েছে। সেখানে কোন ধরনের কর্মকান্ড চালানো সম্পূর্ণ বেআইনী। খুব শিগগির এ কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নূরের ভাই হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক!!
অর্থের বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিলেন মাদক সম্রাট নূর মোহাম্মদঃ


খিলগাঁও থানা পুলিশ সম্প্রতি সিপাইবাগ এলাকা থেকে মাদক সম্রাট নূর মোহাম্মদের ভাই শের মোহাম্মদ সোহেলকে প্রায় এক হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ঐদিন তাকে ছেড়ে দেয়া নিয়ে দর কষাকষি হয়। এবং পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে নেন মাদক সম্রাট নূর মোহাম্মদ রাতুল। এ ব্যাপারে থানায় যোগাযোগ করা হলেও ইয়াবা উদ্ধারের বিষয়ে কোনো তথ্য দেন নি পুলিশ। তবে অসমর্থিত সূত্রে পাওয়া সর্বশেষ খবর হচ্ছে, পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে গভীর রাতে শের মোহাম্মদ সোহেলকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তার স্থলে অন্য এক আসামিকে কিছু পরিমাণ ইয়াবা দিয়ে চালান দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে!! নূর মোহাম্মদ রাতুলের ডানহাত খ্যাত শের মোহাম্মদ সোহেল ভাইয়ের মাদক বিক্রি ও মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। চলাফেরা ঠিক ভাই নূর মোহাম্মদ রাতুলের মতই। হাতে সোনার বেইজলাইট, আংটি, গলায় সোনার চেইন ও কানে সোনার দুল। নিয়ন্ত্রণ করেন বড় ভাই মাদক সম্রাটের মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট ও সন্ত্রাসী বাহিনী।
খিলগাঁও জুড়েই মাদকের হাট!
কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে মাদকের পাইকারী চালান নিয়ে বেচাকেনা করছে সোর্সরা মাদককে ঘিরেই নানা বিরোধ হচ্ছে, চলছে খুনোখুনি সি ব্লকে সিসি ক্যামেরা ও শান্তিপুরে এলার্ম বসিয়েই চলছে মাদক কেনাবেচা থানার বিশেষ সিন্ডিকেট চালায় এ মাদক বাজার। রাজধানীর খিলগাঁও থানা ঘেঁষেই রাজিবের মাদক ¯পট। বারবার গ্রেফতার করেও থামানো যাচ্ছে না তার মাদক বাজারটি। সেখানে রাত দিন চলছে ইয়াবা, ফেন্সিডিল আর গাঁজা বেচাকেনা। থানা ভবনে দাঁড়িয়েই রাজিবের স্পটে মাদক কেনাবেচা ও নেশার দৃশ্যাবলি দেখতে পান পুলিশ কর্মকর্তারা। কিন্তু এসি, ওসির নির্দেশ না থাকায় সেখানে অভিযান চালাতে সাহস করেন না থানা পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা। থানার পেছন পাশে মাদক আখড়া গড়ে তোলার মূল হোতা রাজিবের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রুজু আছে। তাকে পাঁচ-সাতবার গ্রেফতার করে জেলেও পাঠানো হয়েছে। তার সহযোগী শুক্কুর, সোহেলসহ ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়া আছে। পুলিশি অভিযানও চালানো হয়েছে অনেকবার। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। তবে গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে অন্য কথা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থানার বিশেষ একটি সিন্ডিকেট এ মাদক বাজারটি পরিচালনা করছে। তাই এটি বন্ধ হচ্ছে না। অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে রাজধানীর খিলগাঁও থানা এলাকা। এখানে অহরহ ঘটছে ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড। মাদক ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে, প্রায়শ হচ্ছে খুনাখুনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, মূলত মাদক ব্যবসাকে ঘিরেই অন্যসব অপরাধের বিস্তার ঘটছে এখানে। আর এ মাদক ব্যবসা চলছে সমঝোতার ভিত্তিতে। পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারী অন্তত ২০ জন সরাসরি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে আছে। তারাই ম্যানেজ করছে থানা পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের। এদিকে দিন দিন নিরাপত্তাঝুঁকি বাড়ছে এলাকাবাসীর। রাজধানীর খিলগাঁও থানা এলাকার অধিকাংশ স্থানেই রয়েছে মাদক বিক্রির স্পট। স্থানীয়রা জানান, সোসর্রাই দৈনিক প্রায় অর্ধকোটি টাকার মাদক বাণিজ্য সচল রেখেছে। তাদের অনেকের নামে রয়েছে একাধিক মাদক ও ছিনতাই মামলা। গ্রেপ্তারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে কয়েকজন ঘুরছে থানার চত্ত্বরে। এদিকে মাদক ও জুয়ার স্পটগুলো থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে মোটা চাঁদা পাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী, সংশ্লিষ্ট থানার কয়েকজন পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট জোনের কয়েকজন কর্মকর্তা। সূত্র জানায় কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে হাজার হাজার বোতল ফেন্সিডিল ও চট্টগ্রাম এবং টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে হাজার হাজার পিস ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক সহ গভীর রাতে এ্যাম্বুলেন্স ও বিলাসবহুল গাড়িতে খিলগাঁও এ পৌছায়। সেগুলো নামানো হয় খিলগাঁও থানার পাশেই ফরমা খালেক ও রাজিবের বাড়িতে। তিলপাপাড়া কালভার্ট রোড, ভূইয়া ঝিলপাড়, ৫নং রোড, বেদেনার বাড়ি, নন্দীপাড়া রিফিউজি ক্যাম্প, সিপাহিবাগ আইসক্রীম গলির বড় মোকাম। ইয়াবা ও ফেন্সিডিলের বন্টন ও সরবরাহ নির্বিঘেœ রাখতে নন্দীপাড়া ব্রিজে রাতভর থাকে পুলিশের ভ্যান। একেই সঙ্গে থাকে পুলিশের বিশেষ টিম। পুলিশ ভ্যান নিয়ে ডিউটিরত টিমকে প্রতিরাতে তিন হাজার ও টিমের ইনচার্জ কে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়। সময় সুযোগ বুঝে দিনের বেলায় মাদকদ্রব্য গুলো নারি-পুরুষ-কিশোর এবং মাদকসেবীদের মাধ্যমে বিভিন্ন ¯পটে পৌছে দেওয়া হয়। এদিকে অনেক স্পটে আছে এলার্ম সিস্টেম। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আসার খবরে বেজে উঠে সেই এলার্ম। সঙ্গে সঙ্গে গোপন পথে পালিয়ে যায় মাদক বিক্রেতারা। সম্প্রতি খিলগাঁও এর শান্তিপুর ৫নং গলির বেদেনা নামের এক মাদক ব্যবসায়ীর বাসায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সে সময় এলার্ম বাজিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের পালানোর দৃশ্য দেখে অভিযানকারীরাই রীতিমত অবাক বনে যান। মাদকের যত ঘাঁটি খিলগাঁও থানা এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করছে বিশটিরও বেশি সিন্ডিকেট। অর্ধ-শতাধিক প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ী। এসব সিন্ডিকেট রয়েছে দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ও মাদক ব্যবসায়ী আছে ভিন্ন ভিন্ন নামে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, পেথিডিন, গাজাঁর স্পট দেখা গেছে সন্ধ্যা নামতেই বাসা বাড়ি এমনকি মহল্লার গলিতে লাইনে দাঁড় করিয়ে এবং ভবন থেকে প্লাস্টিকের বালতিতে পেলে চাহিদামত সরবরাহ করা হয়। খিলগাঁও থানার পিছনের গলির ২০০ গজ দুরে তিনটি মাদকের স্পট আছে। থানার পিছনের গলিতে ইয়াবার বড় মোকাম হিসেবে পরিচিত স্পটটি নিয়ন্ত্রণ করে রাজিব ও ডিবি সোর্স হুমায়ুন। তাদের সিন্ডিকেটে রাজিবের ম্যানেজার শুক্কুর আলী, সোহেল, সুন্দর জনি, মাসুদ, জংসিন, রাসেল ওরফে কাঁনা রাসেল, রনি, মিরু, সাগর ওরফে ইয়াবা সাগর, কথিত বাবা সুজন, জোবায়ের, তুশার, আনোয়ার, টোকাই জয়নাল, তন্ময়, রাজিবের স্ত্রী বৃষ্টি ও রাজীবের রক্ষিতা রেহেনা এবং ফরমা খালেকের মেয়ে নাজমা, শাবানা, ফাতেমা, কুলসুম, কানা রাসেল, শুভ, খালেকের ছেলের বউ পাখি, তালতলা মার্কেটের মাছ বাজারের দোতলায় ও নীচ তলায় তপন, বধু, দই মাছুম, গোয়াইল্লা লাভু। খিলগাঁও ভূইয়ার ঝিলপাড়ে ফেন্সিডিল ও ইয়াবার ¯পটটি নিয়ন্ত্রন করে বেদেনা ও কসাইয়ের ছেলে ইব্রাহিম। তাদের সিন্ডিকেটে আছে আরিফ, খায়েরের ছেলে সুজন, আনোয়ার, সোহেল, রমজান। শান্তিপুর ৩নং ও ৪নং, ৫ ও ৬নং গলির ¯পটটি নিয়ন্ত্রণ করে সোহাগ ও খিলগাঁও থানার সোর্স সেলিম, সাগর, বিল্লাল, রনি, চান্দি ইকবাল, জাফর। কুমিল্লা বস্তিতে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রন দাতা ইউনুছ, কনক, পোলক, লিঙ্কন। সি ব্লকের বড় স্পট অবস্থিত। এ স্পটি নিয়ন্ত্রণ করে জেনারেটর রিপন ও নেসার, তাদের সিন্ডিকেটে তুহিন, জাহাঙ্গীর, ভুট্টু, লিজু, কালু, নুরু, বাদল, রানা তাছাড়া আরও পনের জনের সহযোগী বাহিনী রয়েছে। সি ব্লক, টিএন্ডটি কলোনীর পিছনে ইয়াবার বড় স্পট এবং জুয়া নিয়ন্ত্রণ করে তছলিম, সিপাহীবাগ মদন গলিতে গাজার স্পট নিয়ন্ত্রন করে হেলু, সাইদা, মুন্নি, মিলন, কুতুব, সুমী, ইয়াবা সীমা, শিশির, রাব্বি, রাজা, তাছাড়া সিপাহীবাগ আইসক্রীম গলিতে গাজা ও ইয়াবার স্পট চালায় জুনায়েদ উরফে জুনা, নুরুজ্জামান, মাইচ্ছা মিলন, টিউমার-আলামিন, গাজা মিন্টু নাডা সুমন, মিল্টন এবং তিলপাপাড়া কালবার্ড বাজার ও একতা সড়কে মাদক নিয়ন্ত্রণ করে সুন্দরী রুমা ওরফে ফেন্সি রুমা, কালি পারভিন, লতিফ ওরফে লইত্ত্বা, লাইলী, মেহেদী, পিচ্ছি বাবুল, মান্নান পিতাঃ জামাল, ফরমা মাইদুল, মাদক সম্রাজ্ঞী মাফিয়া সুন্নির ছেলে মিলন, রনি, চোরা মিন্টু, মাফিয়ার ভাই বাবুল, তানিয়া, দুনিয়া, মৌ, পারভিন, বিল্লাল। সিপাহিবাগ কবরস্থান গলিতে মাদক স্পট চালাচ্ছে এম্পল বাবুল ওরফে গরু বাবুল, মুরগী স্বপন, ফরমা মিজান। খিলগাঁও তিলপাপাড়া একতা সড়কে মাদক স্পট চালাচ্ছে কাজী সিরাজ। খিলগাঁও ঈদগাহ মসজিদ ফাতেমা আক্তার রেখা, বাছির, ভূয়া ডিবি বাদল, নবীনবাগ বালুর মাঠে স্পট নিয়ন্ত্রণ করে হোসেন কানা ও তার ছেলে তুহিন, তুষার, লেকার পোলা পলাশ। ভূইয়া পাড়ার মোড়ে স্পট নিয়ন্ত্রণ করে বিল্লাল, ইসমাইল, টুকু, মেরাদিয়া স্কুল গলির ইয়াবার মোকামের নিয়ন্ত্রণ করে বাটার ওরফে স্বপন সহ ১৫ জন। পোড়াবাড়ির মোড়ে গাজার স্পটটি নিয়ন্ত্রণ করে কল্পনা, গোড়ান টেম্পু স্ট্যান্ডে কসাই বাবুল, নেতা সাইফুল, মনা। গোড়ান ৭নং গলির জুয়েল, সোহেল, রুবেল এরা তিন ভাই গোড়ান ৮নং গলি পানির পাম্প ছেরে বনশ্রী পানির পাম্প এরং ঐ খানের বালুর মাঠ সংলগ্ন পরেন বাবু, রিপা। গোড়ান ছাপড়া মসজিদ সংলগ্ন হাওয়াই গলির ¯পটটির নিয়ন্ত্রণ করে সাইফুল ও সাইফুলের স্ত্রী সীমা, আকাশ, রনি, আরিফ, খোকন, বিল্লাল, হাবিব। দক্ষিণ বনশ্রী তিতাস রোডে সগীর, ফরহাদ, শাহানাজ, বাবু, দক্ষিণ বনশ্রীতে আরও আছে এনামুল হক রিপন, কাঠ ফারুক, পেসপেস শামীম, নয়ন, জাপানী বাবু, বক্সার বাবু এর সিন্ডিকেট আরও আছে ১৫ জন। খিলগাঁও পোড়াবাড়ি মোড়ের ব্যবসাটি নিয়ন্ত্রন করে রফিক, ইউসুফ, ইউসুফের বউ, গাফফার, ফরমা জাফর এদের সিন্ডিকেটে আরও দশ জন। রিফিউজি ক্যাম্পে মাদকের বড় স্পটটি নিয়ন্ত্রন করে সামছুন্নি, মিনু, রিপন, তাছলি, হযরত, তোফাজ্জেল, রুবেল, চোরা রিপন, মাছুম, টিটু, আনসার। ত্রিমোহনী শেখের জায়গার স্পটটি নিয়ন্ত্রণ করে জিন্নাহ, মনির, ডাকাত জলিল, মাইনুদ্দিন, জাহাঙ্গীর, নন্দীপাড়া ৬নং রোডে লাঙ্গল বাবু, রনি মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে। গোড়ান ৮নং সিঙ্গেল, ওয়াহিদ, নবাবীর মোড়ে সুজন, রুবেল, সাগর, হাবিবুর রহমান টিপু, নবীনবাগ বস্তিতে ইয়াসিন, তারা, মর্জিনা, মিয়ার পোলা রিদু, মেরাদিয়া লালমিয়ার গলি জুয়ার স্পট ও মাদক নিয়ন্ত্রন করে হালিম, মাইনু, শুক্কুর, ফয়সাল এছাড়া নিয়মিত বখরা দিয়েছে ভ্রাম্যমান ও খুচরা মাদক ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে নির্বিঘেœ এসব মাদক স্পট সচল রাখতে পুলিশের সোর্স পরিচয় দানকারীদের রয়েছে চুক্তি। খিলগাঁও থানা পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট জোনের কর্মকর্তার নামে তারা সাপ্তাহিক ও মাসিক এমনকি কোন কোন স্পট থেকে দৈনিক হারে আদায় করছে মোটা টাকা এবং থানার বিশেষ টিমের নামে ৬৫টি স্পট থেকে তারা স্ব-শরীরে অথবা বিকাশের মাধ্যমে সপ্তাহের টাকা আদায় করছে। স্পটপ্রতি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের খিলগাঁও জোনের কর্মকর্তার নামে মাদকের স্পট থেকে সপ্তাহে উঠানো হয় তিন থেকে চার হাজার টাকা করে ফরমা হুমায়ুন। খিলগাঁও থানার সোর্স পরিচয় দানকারী মাদক স্পট থেকে নির্ধারিত টাকা উঠায় দানকারী সেলিম, সাগর, রনি, বিল্লাল, ফরমা হুমায়ুন, আলমগীর, মিজান, গাফফার এলাকা থেকে টাকা তোলেন। মাদক বিরোধী আন্দোলন দমাতে অন্যরকম অভিযান রাজধানীর খিলগাঁওয়ে মাদক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরাই এখন মাদক ব্যবসায়ীদের হুমকির মুখে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়িরা কতিপয় পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) টিম নিয়ে আন্দোলনকারীদের বাড়ি বাড়ি চড়াও হচ্ছেন। তাদের হুমকি ধমকিতে হয়রানি নির্যাতনের অজানা শঙ্কায় আছেন মাদক বিরোধীরা। এদিকে মাদক উচ্ছেদের আন্দোলন বন্ধ থাকায় ফের মাঠ দখল করে নিয়েছে মাদক ব্যবসায়িরা। খিলগাঁওয়ে আবার সচল হয়েছে মাদক কেনাবেচার খোলামেলা হাটবাজার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান, গত এক মাস ধরে স্থানীয় যুবলীগ নেতা আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে মাদক বিরোধী আন্দোলন চলছিল খিলগাঁও এলাকায়। আন্দোলনকারীরা খিলগাঁও থানা ভবন ঘেষেই গড়ে ওঠা রাজিব-শুক্কুরের মাদক বাজারসহ ওই থানা এলাকার ৫৭টি মাদক স্পট অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ লক্ষ্যে প্রায় প্রতিদিনই সেখানে মাদক বিরোধী প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, থানা ঘেরাওসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছিলেন তারা। মাদক বিরোধী এ আন্দোলনে স্কুল-কলেজের শিার্থীরাসহ সর্বস্তরের লোকজন অংশ নেন। তাদের ধারাবাহিক আন্দোলনের মুখে মাদকের খোলামেলা বেচাকেনা অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। ডাকসাইটে মাদক ব্যবসায়িরাও অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলো। এদিকে সবকিছুর জন্য মাদক বিরোধী আন্দোলনকারীদের দায়ী করে কতিপয় কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তায় পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার কৌশলে নামে মাদক ব্যবসায়িরা। গত বছর ২৭ জুলাই, বৃহ¯পতিবার দিবাগত গভীর রাতে এলাকার মাদক সম্রাট হিসেবে চিহ্নিত ১৯ মামলার আসামি রাজিব ও ফর্মা হুমায়ুনকে সঙ্গে নিয়ে ডিবির একজন এসি ও রাত সাড়ে তিনটায় যুবলীগ নেতা আব্দুল আজিজের খিলগাঁও রেলগেটস্থ বাসায় গিয়েও পরিবারের সবাইকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তটস্থ করে তোলার অভিযোগ করেছেন ও খিলগাঁও থানার মাদক ব্যবসায়ীর লিস্টেট বানাবে বলে হুমকি প্রদান করেন। এছাড়াও মাদক বিরোধী মানববন্ধনে অংশ নেওয়া তিলপাপাড়ার শাহীন, আব্দুর রহমান, গোড়ানের চঞ্চল, আলী হোসেন, মোমিন খাঁনসহ খিলগাঁও এলাকার বেশ কয়েকজনের বাড়িতেও ডিবির ওই এসির নেতৃত্বে ৮/৯ জনের টিম হানা দেয় বলে জানা গেছে। ডিবি টিমের সঙ্গে থাকা মাদক ব্যবসায়ি রাজিব আলী, ফর্মা হুমায়ুন, শুক্কুরআলী সহ কয়েকজন প্রকাশ্যেই হুমকি দিয়ে গেছে, মাদক নিয়ে আন্দোলনের শখ মিটিয়ে দেয়া হবে ও ম্যাসেজের মাধ্যমে হুমকি প্রদান করে আবার মাদকের বিরুদ্ধে নিউজ করলে। রাজিব মোবাইল ফোনে হুমকি প্রদান করে জানে মেরে ফেলবে অথবা মোটা অংকের টাকা দিয়ে মাদক দিয়ে ধরিয়ে দিবে। এ ব্যাপারে আব্দুল আজিজ খিলগাঁও থানায় জিডি করেন, যাহার ডাইরী নং-১৬০০। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং আইজিপির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, মাদক সম্রাটদের কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খিলগাঁও থানার কেউই কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। থানার এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযান একটি রুটিন ওয়ার্ক। এক্ষেত্রে কাউকেই অহেতুক হয়রানি করার সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে রাজিব আলীর মাদক বানিজ্যঃ


রাজধানীর কয়েকটি থানা এলাকা মাদকে ভাসছে এর মধ্যে খিলগাঁও থানা অন্যতম। জানা যায়, এলাকার মাদক ব্যবসায়ী আবার তার ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোক হিসেবেও জাহির করতে দ্বিদাবোধ করছে না। আর সেই মাদক ব্যবসায়ীর নাম মো. রাজিব আলী। সে এলাকার অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী। এদিকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পাশের কক্ষ থেকে ভেসে আসছিল কারো আর্তনাদের শব্দ। পাশের ঘরে গিয়েই মিলল আর্তনাদের উৎস। চোখ আটকে যায়, পুলিশ কর্তৃক এক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্যে বল, বাকি মাল কই রাখছস, আর কে আছে গ্যাংয়ে বলতে বলতে মোটা একটি লাঠি দিয়ে এক যুবককে পেটাচ্ছিলেন এক এসআই। তথ্য মিলে জিজ্ঞাসাবাদকারী পুলিশের বক্তব্যে। পিটুনি থামিয়ে এসআই বলেন, আর বইলেন না ভাই, এইটা (যুবক) বাবা তো খায়ই, ব্যবসাও করে। অনেক কষ্টে বাবাসহ ধরেছি, কিন্তু ব্যাটা এখন সাধুর ভাব নিচ্ছে, মুখ খুলছে না। তাই একটু। অতঃপর পুরো ঘটনা শুনে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে থানা থেকে বেরিয়ে আসেন এই প্রতিবেদক। ২০১৫ সালের শেষ ভাগের কোনো এক রাতে রাজধানীর খিলগাঁও থানার ঘটনা এটি। সম্প্রতি ফেসবুকে বিট পুলিশিং সমাবেশের একটি মিছিলের ছবিতে ফের আটকে যায় এই প্রতিবেদকের দৃষ্টি। মিছিলের প্রথম সারিতেই দেখা যায় থানায় পিটুনির শিকার সেই যুবককে। বিট পুলিশিং সমাবেশ সফল হোক, খিলগাঁও থানার বিট নং-১ লেখা ব্যানার হাতে তিনি। পুলিশের ভাষ্যমতে, যিনি একাধারে মাদকসেবী এবং ব্যবসায়ী, তিনি কীভাবে পুলিশের লোগোসংবলিত ব্যানার হাতে মিছিলের অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেন? বিষয়টির আরও গভীরে যেতে ওই যুবকের ফেসবুক পেজ গফ জধলরন ঘেঁটে প্রতিবেদকের চোখ রিতিমতো চড়কগাছে। তার প্রোফাইল পিকচারে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই যুবকের নাম মো. রাজিব আলী। বয়স ৩০। বাবার নাম মো. জয়দর আলী। থাকেন রাজধানীর খিলগাঁওয়ের সি ব্লকে। রাজিব নিজেকে কখনো পরিচয় দেন ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা, কখনো বনে যান ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ নেতা। যদিও ক্ষমতাসীন দলের ওই তিন সংগঠনের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, রাজিব আলী চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এই নামে তাদের কোনো নেতাকর্মী নেই। শুধু মাদকসেবীই নন, রাজধানীর মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম ডিলার রাজিব। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ব্যবসা, হত্যাচেষ্টা, ছিনতাই-চাঁদাবাজি, দস্যুতা, জবরদখলের অভিযোগে ২০টিরও বেশি মামলা। তা ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর, ডিএমপি কমিশনারের দপ্তরেও রয়েছে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ। সূত্র জানায়, রাজিব আলীর রয়েছে নারী-পুরুষের সমন্বয়ে ৭৪ সদস্যের একটি বিশাল বাহিনী। তাদের কেউ মাদক ব্যবসা দেখভালের দায়িত্বে আছেন, কেউ দেখেন নারীঘটিত অনৈতিক ব্যবসা, কেউ বুঝে নিয়েছেন ভূমি-ফুটপাত দখলের দায়িত্ব। বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকেই ভাগ করে দেওয়া আছে মহল্লা-গলি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব পালন করে তার কাছের লোকজন। এসব অবৈধ কর্মকান্ডে কেউ বাগড়া দিলে বা প্রতিবাদ করলে তাদের সায়েস্তা করার জন্যও রাজিবের রয়েছে ক্যাডার বাহিনী। ছোট ঘটনায়ও তারা হামলে পড়ে নিরীহ মানুষের ওপর। মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় গত বছর ১০ জুলাই রাতে বনশ্রীর ঝুমুর গলিতে মোহর আলী নামে এক যুবককেও কুপিয়েছে রাজিব আলী ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড শুক্কর আলীসহ কয়েকজন। পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে মাদক ব্যবসা, হত্যাচেষ্টাসহ রাজীবের বিরুদ্ধে মতিঝিল, রামপুরা, খিলগাঁও থানায় হয়েছে ১৩টি মামলা। গত বছর ২০ মার্চ মতিঝিল ও ২ জুলাই রামপুরা থানায় পৃথক দুইটি মাদক মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। পুলিশ আরও জানায়, বিভিন্ন অভিযোগে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কয়েকটি থানায়ও তার বিরুদ্ধে রয়েছে ছয়টি মামলা। এ ছাড়া র‌্যাব, ডিবি পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও মাদকসহ গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে করেছে আরও মামলা। বর্তমানে প্রায় সবকটি মামলায় জামিনে এসে দুর্ধষ মাদক এই ব্যবসায়ী দিব্বি চালিয়ে যাচ্ছেন মাদকের বিস্তার। এদিকে রাজীবের ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে অনেক ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে সাহস পাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসি ও পরিদর্শক পদমর্যাদার ৩ জন, র‌্যাব-৩ এর দুই সদস্য, খিলগাঁও-রামপুরা থানার ৫ জন এসআই, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ২ জন জোনাল কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের ৮ জন নেতার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে বেপরোয়া রাজিব। প্রকাশ্যেই চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ৪ বছর আগেও রাজিব আলী ছিলেন নিতান্তই একজন কসাই। খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে ছিল তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এই ৪ বছরেই বহু জমি ও একাধিক ফ্ল্যাট ছাড়াও বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন। মরণঘাতী ইয়াবা, ফেনসিডিল বাণিজ্যই তার আয়ের উৎস। কোটিপতি হওয়া ছাড়াও ঢাকা শহরের মাদকের বড় ডিলারের খেতাবও ইতোমধ্যে অর্জন করেছেন এই রাজিব। ফলে রামপুরা-খিলগাঁও তো বটেই, রাজধানীর বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীরাও তাকে সমীহ করে চলে। জানা গেছে, খিলগাঁও থানার ২০০ গজের মধ্যে নোয়াখালী গলিতে এখন মাদকের বড় মোকাম গড়ে তুলেছেন রাজিব আলী। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সপ্তাহে দুই দিন মাদকের চালান আসে তার স্পটে। গভীর রাতে মাইক্রোবাস এবং অ্যাম্বুলেন্সে আসে এসব চালান। এখান থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয় ফেনসিডিল ও ইয়াবা। তার মাদক সাম্রাজ্যের সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হলো শুক্কর আলী, তুষার, সুন্দর জনি, সোহেল, আদনান, সামস, সাইফুল, রিফাত, সাদ, মাসুদ, জংসিন, রাসেল ওরফে কানা রাসেল, রনি, মিরু, সাগর ওরফে ইয়াবা সাগর, ইয়াবা মামুন, বাবা সুজন, জোবায়ের, তুষার, রেহানা, বৃষ্টি, ফাতেমা, কুলসুম ও পাখি। থানার পেছনের গলিতে ইয়াবার বড় মোকাম হিসেবে পরিচিত ¯পটটি নিয়ন্ত্রণ করে জাহাঙ্গীর, ফাতেমা, নাজমা, খালেক ও কুলসুম। কুমিল্লা বস্তিতে মাদক ব্যবসার নিয়ন্তা ইউসুফ, কনক ও পুলক। এই বস্তির উল্টো পাশেই একতা সড়কে অ্যা¤পলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সিরাজ ওরফে ফেনসি সিরাজ ও অ্যা¤পল জামাল। সি-ব্লকের ফেনসিডিলের বড় স্পটের নিয়ন্ত্রক জেনারেটর রিপন ও নেসার। সিন্ডিকেটে তুহিন, জাহাঙ্গীর, ভুট্টো, লিজু, কালু, বাদল, রানা ছাড়া ১৪ জনের একটি সহযোগী বাহিনী রয়েছে। এদের কেউ কেউ সম্প্রতি আটক হয়েছেন বলে জানা গেছে। নির্বিঘেœ রাজিবের মাদক ¯পটগুলো সচল রাখতে খিলগাঁও থানার সোর্স পরিচয় দানকারী রহমান, সেলিম, সাগর, লুঙ্গি ফারুক, আলমগীর, মজিবর, প্রদীপ, মোরতেজা, কাঞ্চন, মুরাদ, রনি, গাজী, মিজান, গাফফার, হিরুইনচি বাবু, আজাহার ওরফে আজাদ, নাসির, রহিম, জাফর, কুট্টি ও লিয়াকত কাজ করছে। দৈনিক-সপ্তাহিক-মাসিক ভিত্তিতে এসব সোর্সের সঙ্গে রাজিবসহ স্থানীয় অন্য মাদক ব্যবসায়ীদের মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের চুক্তি আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রাজিব আলী বলেন, মাদক ব্যবসার সঙ্গে কখনোই তিনি জড়িত ছিলেন না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুলিশ তার বিরুদ্ধে এতগুলো মামলা দিয়েছে। আর প্রকৃত মাদক ব্যসায়ীরাই তার বিরুদ্ধে এখন অপপ্রচার চালাচ্ছে। খিলগাঁও থানার ওসি বলেন, মাদক ব্যবসায়ী রাজিব আলীর বিরুদ্ধে এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। রাজিব ও তার সহযোগী কয়েকজনকে মাদকসহ পাঁচ-সাতবার গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছিল কিন্তু জামিনে বেরিয়ে তারা ফের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে বলে তথ্য রয়েছে। অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে রামপুরা থানা পুলিশকে মোটা অংকের মাসোহারা দিয়ে প্রকাশ্যেই মাদক ব্যবসা করছে, মিরু জংসিন, মাসুদ, তুষার, রনি, রাজিবের স্ত্রী বৃষ্টি ও রক্ষিতা রেহেনা,তম্ময়, লাল্লা, জয়দর আলী মাদক বগনকারী, ও শুক্কর আলীর দুলাভাই মাদক বহনকারী অন্যতম।

সংবাদটি শেয়ার করুন...