TadantaChitra.Com | logo

৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হারবাল ডাক্তার থেকে মহাজ্যোতিষী! ভন্ড জ্যোতিষ ফারুক ভাইয়ের প্রতারণা!

প্রকাশিত : জুলাই ২৭, ২০১৮, ১৬:৪৩

হারবাল ডাক্তার থেকে মহাজ্যোতিষী! ভন্ড জ্যোতিষ ফারুক ভাইয়ের প্রতারণা!

তদন্ত চিত্রঃ হারবাল ডাক্তার থেকে মহা জ্যোতিষী। দীর্ঘদিন ধরে চলছে তার মহা প্রতারণা। অথচ রয়েছেন ধরাছোয়ার বাহিরে। পুলিশের চোঁখ ফাকি দিয়ে এ ব্যবসা থেকে ও ব্যবসায় পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। এর আগে ছিল ইন্ডিয়া হারবালের ডাক্তার। সেই সময়ে র‌্যাব তাকে গ্রেফতারও করেন। বেশ জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার শুরু করেন নতুন প্রতারণার ধান্দা। জানা গেছে, নিজস্ত্রী অধিকার ফিরে পেতে ঘুরছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। বসছে বিচার-শালিস তিনিই আবার তদ্বীর করছেন অন্যে ‘বশ না মানা’ স্ত্রীকে বশে আনবার। ভন্ডামীর শিরোমনি প্রতারক ফারুক পরশমনি জেমস্ হাউজের ব্যানারে প্রকাশ্যেই করছে প্রতারণা। র‌্যাবের কাছে ধরা পড়লেও বুক ফুলিয়ে বলছেন আমার টিকিটিও ছুতে পারবে না কেউ। বিয়ের একাধিক নারীর সর্বনাশ করা এই প্রতারক মাদারীপুরের শিবচরের গোলাম ফারুক হাওলাদার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে একাধিকবার গ্রেফতার হলেও প্রতারণার পথ ছাড়েনি। র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে কানমলা খেয়েও ফের জোরেসোরে শুরু করেছে ভন্ডামী আর প্রতারণা। প্রতারণার আখড়া এবার বসিয়েছে রাজধানীর অভিজাত বিপণীবিতান যমুনা ফিউচারপার্কের গ্রাউন্ড ফ্লোরের বি ব্লকের ১৩নং দোকানে পরশমনি জেমস্ হাউজ নামে। ফুটপাথের ফারুক পিতৃপ্রদত্ত নাম বদলে হয়েছেন হাওলাদার ভাই। এই হাওলাদার ভাই ওরফে ভন্ড ফারুক এক সময় হারবাল চিকিৎসার আড়ালে প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত এক অভিযানে গোলাম ফারুককে তার মগবাজার মোড়ে কলিকাতা হারবাল থেকে গ্রেফতার করে দুই বছর কারাদন্ড দেন এবং ফারুকের ভূয়া প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়া হয়। জামিনে বের হয়ে এসে কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়ে আবার পুরানো ব্যবসায় যোগ দেন। গোলাম ফারুকের মত প্রতারকদের ধান্দা ফিকিরের অভাব হয় না। চকচকে সাইনবোর্ড। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিপাটি কেবিনের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী-সাংসদের সঙ্গে তোলা ছবি। ছবির নিচে লেখা, ‘হারবাল চিকিৎসক হিসেবে বিশেষ অবদানের জন্য মন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন হাকিম গোলাম ফারুক হাওলাদার। টেবিলের পাশে থরে থরে সাজানো ডজনখানেক ‘শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকের’ ট্রফি। ‘ইন্ডিয়া হারবাল মেডিকেল কেয়ার’ নামের কথিত চিকিৎসালয়ের আড়ালে ফারুক প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। রাজধানী মগবাজার মোড়ে রাস্তার এপার-ওপারে অবস্থিত ইন্ডিয়া হারবাল ও কলিকাতা হারবাল নামের দুটি কতিত ভেষজ চিকিৎসালয়ের মালিক ছিল গোলাম ফারুক। দুটি চিকিৎসালয়ের কোনটিরই চিকিৎসা সেবার ন্যূনতম অনুমোদন ও সরঞ্জাম ছিল না। গোলাম ফারুক ও তার সহযোগী কারোরই চিকিৎসা সেবা দেয়ার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অনুমোদনও নেই। অথচ তাঁরা সব ‘কঠিন ও জটিল’ রোগের চিকিৎসা করছিল দীর্ঘদিন ধরে। চোরের দশ দিন সাধুর একদিন, ঠিকই সাধুর হাতে চোর ধরা পড়লো-২০১২ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ফারুকের দুটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে গোলাম ফারুক সহ চারজন কথিত ভেষজ চিকিৎসককে হাতেনাতে ধরে দুই বছর করে কারাদন্ড দিয়েছেন। দন্ড পাওয়া অন্যরা হলেন, সাহেব আলী (৩০), মাসুদ ইসলাম (৩১) ও মশিউর রহমান (৩২)। ঐ সময় র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা আদালত পরিচালনা করেন। তার সাথে ছিলেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম ও র‌্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা।
আজকের প্রতারক জ্যোতিষ হাওলাদার ভাই সেদিনের প্রতারক হারবাল চিকিৎসক গোলাম ফারুক হাওলাদার র‌্যাব ও সাংবাদিকদের সামনে নিজের দোষ স্বীকার করে বলেছিলেন, আমি অপরাধ করেছি। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছি। ১০ টাকার ওষুধ ১০ হাজার টাকায় বেচেছি। প্রতারণা প্রক্রিয়া সম্পর্কে ফারুক বলেন, তাঁর কাছে কোন পুরুষ রোগী এলে প্রথমেই তিনি রোগীর প্রস্রাব পরীক্ষা করতে বলেন। কিন্তু তাঁর এখানে প্রস্রাব পরীক্ষার কোনো উপকরণ নেই। শুধু কয়েকটি টেস্টটিউব রয়েছে। রোগীর সামনে তাঁর প্রস্রাব একটি টেস্টটিউবে ঢালা হয়। তাঁর সামনে কয়েক ফোটা তারপিন তেল ও ফিটকারী ঢালা হয় টেস্টটিউবে। কিছুক্ষণ পরই টেস্টটিউবের ওপর একটা সাদা স্তর তৈরি হয়। তখন ফারুক রোগীকে শঙ্কিত হয়ে বলেন, তাঁর যৌবন হুমকির মুখে, জীবনের সুখ-স্বাচ্ছদ্য সব শেষ, টাকা পয়সার আর কোন দামই থাকলো না ইত্যাদি ইত্যাদি। রোগীকে ভড়কে দেওয়ার জন্য আরও বলা হয়, সাধারণ অ্যালোপেথিক চিকিৎসায় এর নিরাময় সম্ভব নয়। একমাত্র সমাধান ভেষজ চিকিৎসা, তবে চিকিৎসাপদ্ধতি অনেক জটিল। মৃগনাভী, কস্তুরী, জাফরান, মাঝবিলের পদ্মের রেণু ইত্যাদি লাগবে। এসবের জন্য অনেক টাকা লাগবে। রোগী তখন উপায়ান্তর না পেয়ে টাকা দিতে রাজি হন। সে সময়ের র‌্যাবের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই বাটপার চক্র সর্বনিম্ন তিন হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রোগীদের কাছে আদায় করেছে। এ রকম প্রতারণার মাধ্যমে ৬ থেকে ৭ বছরের মধ্যেই কোটিপতি হয়েছেন গোলাম ফারুক।
গোলাম ফারুক র‌্যাবের হাতে ধরা পরার পর বলেছিলেন, মূলত বিভিন্ন ধরনের বাজারে প্রচলিত অ্যালোপেথিক ওষুধের গুঁড়া মিশিয়ে কথিত মহৌষধ তৈরি করা হয়। যেমন- বাতনাশক ওষুধ হিসেবে ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথানাশক, এলার্জির জন্য এলাট্রল, মোটা হওয়ার জন্য স্টেরওয়েড হরমোন আর যৌন রোগের মহৌষধ হিসেবে সিনেগ্রা জাতীয় ট্যাবলেটের গুঁড়া মেশানো ‘গুলি’, ‘হালুয়া’ তৈরি করা হয়। এ রকম ওষুধ ১০ থেকে ১২ টাকা প্রতি ফাইল বিক্রি করা হয়। প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার জন্য সে সময় বিভিন্ন পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ও ক্যাবল লাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়াও হতো। আবারও একই কায়দায় ফারুক প্রতারণা চালাচ্ছে। তবে এবার পাল্টেছে পদ্ধতি আর টাইটেল। সেই প্রতারক ফারুক এবার আস্তানা গেড়েছে রাজধানী অভিজাত বিপণীবিতান যমুনা ফিউচারপার্কের গ্রাউন্ড ফ্লোরের বি ব্লকের ১৩ নং দোকানে পরশমনি জেমস্ হাউজ নামে। নামধারণ করেছে হাওলাদর ভাই। চাকচিক্য ও আর চমক দেখানোর জন্য পূর্বেকার দেয়ালছবিগুলো এখানেও ঝুলিয়েছে বাহারী ঢংএ। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে প্রায় অক্ষরজ্ঞানহীন প্রতারক ফারুক ২০১৭ সালে একটি পত্রিকায় রাশিফল লিখেছেন! আরো বিস্তারিত পরবর্তী সংখ্যায়।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।