স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এর ভোলা সদর উপজেলা শাখার আহবায়ক কমিটির মেয়াদ দুই বছর অতিবাহিত হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি সদর উপজেলা ছাত্রদল। এর সাথে হয়নি ১৩টি ইউনিয়নেরও ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। গত ২০২০ইং সাল থেকে এখন পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করার পাশাপাশি ইউনিয়ন কমিটিগুলো না হওয়ায় কমিটিতে পদ-পদবী প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি কে বাদ দিয়ে নতুন করে উপজেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার দাবিতে প্রতিনিয়ত দলীয় কার্যালয় দেখা দেয় পরস্পর পরস্পরের সাথে বাকবিতন্ডা। অবিলম্বে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিকে বাদ দিয়ে নতুন করে উপজেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার দাবি করছেন পদ প্রত্যাশী নেতাদের পাশাপাশি দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। এতে করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নতুন কমিটিতে আসা নেতাকর্মীদের মাঝে ফিরে আসবে প্রাণচাঞ্চল্য।
দেখা গেছে, ২০২০ইং সালের ১৭ই ডিসেম্বর ছাত্রদল নেতা আব্দুল্লাহ আল রাসেলকে আহবায়ক ও সাজ্জাদ হোসেন মুন্নাকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন ভোলা জেলা ছাত্রদল। একই সাথে আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে গঠন করা হবে ১৩টি ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এরপর আহ্বায়ক কমিটি ও ইউনিয়ন কমিটির সমন্বয়ে পরবর্তীতে কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে গঠিত হবে উপজেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এই মর্মে জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি কে বেঁধে দেওয়া ৬০ দিনের মধ্যে উপজেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। অথচ ৬০ দিনতো দূরের কথা, দুই বছর অতিবাহিত হলেও ১৩ টি ইউনিয়ন ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দূরের কথা এখনো উপজেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটিতে আসা নেতৃবৃন্দরা।
অভিযোগ রয়েছে, দলের অভ্যন্তরীণ ক্রন্দল, নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও একতরফা কমিটি দেওয়ার প্রচেষ্টা সহ নানা অনিয়মের কথা উঠে এসেছে ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে।
সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর শরীফ বলেন , আমাদের আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ দুই বছর অতিক্রম করলো অথচ এখন পর্যন্ত এ কমিটিতে থাকা আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব দলের কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা কোন ধরনের কর্মকান্ডের বিষয়ে আমরা যারা যুগ্ন-আহবায়ক আছি আমাদের সাথে মোটেও সমন্বয় করেনি। ওই কমিটিরই আরেক যুগ্ন আহ্বায়ক আরিফ হোসেন বলেন, আমাদের কমিটিতে থাকা ২১ সদস্যের মধ্যে ১৯ জন যায় যদি একদিকে শুধুমাত্র আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব যাবে আরেকদিকে, দলের সকল সিদ্ধান্ত আমাদের কারো সাথে কোন ধরনের আলোচনা না করেই নিজেদের ইচ্ছে মতো বাস্তবায়ন করে। যুগ্ন-আহবায়ক , মোহাম্মদ গিয়াস, আরিফ পঞ্চায়েত, মোহাম্মদ সোহেল, তারাও জানান বর্তমানে সদর উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। এছাড়া এই কমিটিতে আহবায়ক রাসেল ও সদস্য সচিব মুন্না ছারা আমি ও আমরা যারা যুগ্ন আহবায়ক আছি আমাদের কারো সাথেই রাসেল ও মুন্না কোন প্রকার যোগাযোগ ছাড়াই দলীয় সকল সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। তারা আরো বলেন, ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে তারা দুজন নিজেদের ইচ্ছামত নিয়ম বহির্ভুত পন্থা অবলম্বন করে সংগঠন পরিচালনা করে। যার ফলে বর্তমানে ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রদল পূর্বের মতো ভূমিকা রাখতে ব্যার্থ হচ্ছে এবং কর্মীশূন্য হয়ে গিয়েছে।
এমতাবস্থায় আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে সহযোগিতা করার জন্য যুগ্ম আহ্বায়কসহ কমিটির অন্যন্য সদস্যদের দিয়ে ইউনিয়ন ভিত্তিক যাচাই বাছাই করার জন্য ২০২২ইং সালের দিকে বিভাগীয় টিমের সমন্বয়ে গঠন করা হয় একটি টিম। কিন্তু যুগ্ন আহ্বায়কদের সাথে সমন্বয় ছাড়াই গঠন করা হয় ১৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে রাজাপুর, বাপ্তা, কাচিয়া, চরসামাইয়া, শিবপুর ও ভেদুরিয়া সহ ৬টি ইউনিয়নের কমিটি। ব্যাক্তিগত পছন্দের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে কমিটি করায়, এতে করে দলের পদ প্রত্যাশী ত্যাগী ও নিয়মিত ছাত্র নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটির মূলপদে ঠাঁই হয়েছে অযোগ্য, অনিয়মিত ও বিবাহিত কর্মীদের।
বিবাহিত কর্মীদেরকে ছাত্রদলের মূল পদে না আনার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও রাসেল ও মুন্নার কাছে যেন পুরোপুরিই উপেক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নির্দেশনা। তাছাড়া অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কমিটি ঘোষণার কারনে একক সিদ্ধান্তে কমিটি ঘোষণার অভিযোগ ওঠে রাসেল ও মুন্নার বিরুদ্ধে।
এদিকে রাসেলও মুন্নার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিভাগীয় টিমের কাছে তুলে ধরা হলে বিভাগীয় টিমের নেতৃবৃন্দরা ইউনিয়ন কমিটিতে আসা বিবাহিত ছাত্র নেতাদের পদ স্থগিত করার পাশাপাশি ৭টি ইউনিয়নেই গঠিত হাওয়া কমিটি স্থগিত করার নির্দেশনা প্রদান করলেও পরবর্তীতে আবার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকেই স্থগিত কমিটি গুলোকে পুনরায় পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। অথচ সেই নির্দেশনার কথাও জানায়নি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সহ অন্যান্য সদস্যদেরকে। এমতাবস্থায় উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটিতে থাকা নেতৃবৃন্দদের অনৈতিক কার্যকলাপের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১০ জুন শনিবার জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এক জরুরি বৈঠকের মধ্য দিয়ে ১৩ টি ইউনিয়নের ছাত্রদলের কমিটি সহ সকল ধরনের কমিটি করা থেকে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটিকে স্থগিত রাখার নির্দেশ প্রদান করেছেন ভোলা জেলা ছাএদলের সভাপতি ও সম্পাদক।
এদিকে উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল রাসেল ও সদস্য সচিব সাজ্জাদ হোসেন মুন্নার বিরুদ্ধে আনীত সকল ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে দাবি করেন তারা। এছারাও ১৩ ইউনিয়নের কমিটি গঠন প্রসংগে উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়কের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিকরা হঠাৎ করে ছাত্রদল নিয়ে পরলেন কেন, কে আপনাদেরকে আমাকে কল দিতে বলছে বলুনতো! এছারাও তার কাছে ছাএদলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইলে তার ঊত্তরে রাসেল আরো অনেক অপ্রাসঙ্গিক ও বিব্রতকর কথা বলেন তিনি।
এ বিষয়ে ভোলা জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ জসিম জানান, ইতিমধ্যে ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের থেকে অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তারা কারো সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় ছারা নিজেদের ইচ্ছামত কমিটি গঠন ও অন্যন্য কার্যক্রম পরিচালনা করে, যা অনৈতিক। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব শীঘ্রই সাংগঠনিক পদক্ষেপে যাব।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন হাওলাদার বলেন, যে কোনো দলের মধ্যেই গ্রুপিং-লবিং থাকবেই, এর মধ্য দিয়েই দলকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। যদিও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি সদর উপজেলা কমিটির কিছু কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আসছে । তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রদলের প্রতিটি অঙ্গ সংগঠনকে নতুন রূপে সাজাতে উপজেলা আহবায়ক কমিটির পাশাপাশি কলেজ, পৌর সহ ছাত্র দলের প্রতিটি স্তর নিয়েই নতুনভাবে চিন্তা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
‘গাজীপুরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ, যানজট’
গাজীপুরের চান্দন এলাকায় টি এন্ড জেড অ্যাপারেল লিমিটেড পোশাক কারখানার......বিস্তারিত