TadantaChitra.Com | logo

৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা দিতে হবে: ফখরুল

প্রকাশিত : জুন ১৪, ২০২৩, ১৬:০৬

নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা দিতে হবে: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলেন আর নিরপেক্ষ সরকার বলেন, যে নামেই ডাকুন, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দ্রুত নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের নতুন দায়িত্ব দিন। তারা নতুন পার্লামেন্ট, নতুন সরকার গঠন করবেন।

বুধবার (১৪ জুন) বিকেলে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি মোড়ে ‘দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষণা উল্লেখ করে তিনি এ কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের জন্য আর বিশ্বাস করা যায় না। বিশ্বাস করতে পারি না। সেজন্য আমাদের কাজ করতে হবে। সবাইকে এক করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলগুলোকে এক করতে হবে। সবাইকে এক করতে হবে দেশকে রক্ষা করার জন্য, মানুষকে রক্ষা করার জন্য।

তারেক রহমানকে তারুণ্যের প্রতীক উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারুণ্যের প্রতীক তারেক রহমান, তারুণ্যের চোখের মণি হচ্ছে তারেক রহমান। তরুণরা তার দিকে তাকিয়ে আছেন। তাকেও মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। একটা দুটো নয়, অসংখ্য মামলা। আজকে ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা আছে। যে দেশের একটি গণতান্ত্রিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর ৪০ লাখ মিথ্যা মামলা হয়, সেখানে গণতন্ত্র থাকতে পারে?

সামনের বাংলাদেশ সাম্যের বাংলাদেশ হবে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ম্যাডাম ঘোষণা দিয়েছিলেন মানুষ বাঁচাও, দেশ বাচাঁও। আমাদের নেতা তারেক রহমান ‘ফায়সালা হবে রাজপথে। টেক ব্যাক বাংলাদেশ।’ এ বাংলাদেশ হচ্ছে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশে আমরা কথা বলতে পারবো। আমার ভোট আমি দিতে পারবো। আমি চাকরি পাবো। আমার সন্তানদের ভবিষ্যত তৈরি হবে। আমার শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। আমার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। সেই বাংলাদেশ আমরা চাই। যেখানে মানুষ চাকরি পাবে, রুটি রুজির ব্যবস্থা করতে পারবে। সবাই শান্তিতে থাকবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে। গরিব গরিব হবে না। বড়লোক বড়লোক হবে না। কোটিপতি হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করবে না। একটি সাম্যের বাংলাদেশ তৈরি হবে।

খালেদা জিয়া জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের তরুণরা ভাইয়েরা, দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের। আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি। আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এরশাদের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে লড়াই সংগ্রাম করে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। সেই আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়াকে তারা অন্যায়ভাবে বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে, সাজা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। তাকে কারাগারে অনেকদিন আটক করে রাখা হয়েছিল। আমরা জানি না, কারাগারে তাকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কি না! কারণ তিনি এখন যে অসুস্থ হয়েছেন, তার এমন অসুস্থ হওয়ার কথা নয়। তাকে আবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে। তিনি এখন জীবনমৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।

চট্টগ্রামের মাটি স্বাধীনতাকামী ও আলেম ওলামাদের মাটি উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তরুণ-যুবকদেরই বাংলাদেশকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের স্বাধীনতা আজকে বিপন্ন। আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন। বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যৎ আজ বিপন্ন। সেই বাংলাদেশকে রক্ষা করতে তরুণ-যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকার জোর করে, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে ভাউতবাজি করে পরপর দুটো নির্বাচনে একেবারে জোর করে ভোট নিয়ে ক্ষমতায় বসে আছে। বন্দুক পিস্তল ধরে, পুলিশ, প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। এ সরকার জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালাচ্ছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছিলেন ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন, কিন্তু আমাদের তরুণ ছেলেদের চাকরি হচ্ছে না।

তিনি বলেন, দেশে কোন কর্মসংস্থান নেই, ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে না। সবচেয়ে করুণ অবস্থায় আছে আমাদের তরুণরা। তাদের সামনে ভবিষ্যত নেই। তাদের সামনে অন্ধকার। আজ সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, কৃষক, যুবকেরা বাজারে যেতে পারেন না। বাজারে আগুন। চালের দাম বেড়ে গেছে, তেলের দাম বেড়েছে, সবজির দাম বেড়েছে, লবনের দাম বেড়েছে, চিনির দাম বেড়েছে, ডিম-মুরগির দামও বেড়ে গেছে। তারা মানুষের পকেট কেটে যত অর্থ উপার্জন করেছে, সব বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। তারা অর্থ পাঠিয়ে দিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদেরও পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর আমরা বাংলাদেশের মানুষ এ সরকারের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে নির্যাতনে নিপীড়িত হয়ে দিনযাপন করছি।

মোবাইল বিল, গ্যাস, বিদ্যুতে মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা (সরকার) বিদ্যুৎ দিতে পারে না। বিদ্যুৎ নেই। টাকাতো নিয়েছেন। তিনবার, চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে টাকা নিয়েছেন। সরকার আমাদের পকেট থেকে টাকা কেটে নেয়। তারা মোবাইল ব্যবহার করে, মোবাইলে ১০০ টাকা রিচার্জ ৩০ টাকা নেয়। বিদ্যুতের এক হাজার টাকার কার্ড ঢুকালে ৩০০ টাকা নেই। এসব টাকা আওয়ামী লীগের ঘরে গেছে। তারা নাকি উন্নয়ন করেছে! কিসের উন্নয়ন? কার উন্নয়ন? এ জনগণের টাকা নিয়ে তারা নিজেদের উন্নয়ন করেছে।

তিনি বলেন, সরকার মেগা প্রজেক্ট করছে। এখন চট্টগ্রামে টানেল করে ঢাকডোল পেটাচ্ছে। টানেলের দরকারও আছে। কিন্তু আগেতো আমার বাঁচার দরকার আছে। আগে আমার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া নিশ্চিত করার ব্যাপার আছে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ব্যাপার আছে। আগের আমার চাকরি পাওয়ার ব্যাপার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এখন নতুন কলকারখানা তৈরি হচ্ছে না। যেগুলো আছে তাও কমে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের উদ্বৃত করে দেশে ৪২ ভাগ গার্মেন্টস কারখানা বন্ধের উপক্রম হয়েছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, আজ গার্মেন্টস শিল্পের ৪২ ভাগ কারখানা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। চট্টগ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ব্যবসায়ী, আমদানি করেন। এখন ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছেন না। ডলার নেই। ডলার সব পাচার হয়ে যাচ্ছে। শুধু ভোট চুরি নয়, তারা আমাদের সম্পদ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক চুরি করে নিয়ে গেছে। এরকম লুটেরা, এরকম চোর আর যদি একদিনও থাকে, তাহলে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে। বিদেশি পত্রিকাতেও একই কথা বের হচ্ছে। ভারতীয় পত্রিকায় লিখছে, যেই বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল, তাতে এখন মরীচিকা বের হচ্ছে।

দেশে গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সুশৃঙ্খলভাবে, দেশের কথা মনে করে, দেশকে ভালোবেশে, যারা কষ্ট পাচ্ছেন, যারা আমাদের কাছ থেকে চলে গেছেন এ সরকারের নির্যাতনের কারণে, তাদের রক্তকে মূল্য দেওয়ার জন্য এ আন্দোলনে আমাদের একত্রিত হতে হবে। এ আন্দোলনে আমাদের যুবদল, ছাত্রদলের ১৭ জন নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছেন। তাদের রক্তকে যদি আমরা সম্মান দিতে চাই, তাহলে আমাদের দেশকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।

যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মো. নাছির উদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন।

সমাবেশ পরিচালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম লিটন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান এবং ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।