TadantaChitra.Com | logo

২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

একাধিক নামে ভয়ংকর প্রতারক তানিয়া!

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৫, ২০১৮, ১৩:৫৬

একাধিক নামে ভয়ংকর প্রতারক তানিয়া!

তানিয়া শিকদার (২৬)। তার একেকটি প্রতারণার কাহিনী নাটক কিংবা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। নিপুণ কৌশলে প্রতারণাকে তিনি নিয়ে গেছেন শিল্পের পর্যায়ে। আর এমনটা হবেই না বা কেন? তিনি অভিনয়ে অনেকটাই পারদর্শী। পার্শ্বনায়িকার কাজও করেছেন সিনেমায়। সেই অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে দীর্ঘদিন বুনেছেন প্রতারণার ফাঁদ। সেই ফাঁদে পা দিয়েছেন লন্ডন ও আমেরিকাপ্রবাসীরা বেশি। তাছাড়া প্রবাসে অবস্থান করছেন- এমন ব্যক্তির ঢাকায় বসবাসরত স্বজনরাই তার টার্গেট। তাদের কাছ থেকে অভিনব কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। প্রতারণার টাকায় করেছেন নিজের স্বপ্নপূরণ। বসবাস করছেন আলিশান ফ্ল্যাটে। চলছেন বিলাসবহুল গাড়িতে। অবশেষে তেজগাঁও থানার একটি মামলায় তানিয়া শিকদারকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে প্রতারণার চাঞ্চল্যকর কাহিনী।

তানিয়ার ছদ্মনামের অভাব নেই। কখনও সাবিয়া সানি। কখনও সাবিয়া, ডালিয়া। কখনো তানিয়া। ২৬ বছর বয়সী এই তরুণী ভয়ংকর প্রতারক। নিজেকে কখনও ডাক্তার, কখনও আইনজীবী, কখনও মডেল, কখনও নায়িকা পরিচয় দিতেন। এসব পরিচয়ে ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে গড়ে তুলতেন সখ্য। ইমু, ভাইভারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলত আলাপন। বিশ্বস্ততা অর্জনের একপর্যায়ে পৌঁছে যেতেন একেকজনের বাসায়। বাসা থেকে নাটকীয়ভাবে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে সটকে পড়তেন তিনি।

২৯ জুলাই তেজগাঁও থানায় একটি মামলা হয় তানিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু তার হদিস পাচ্ছিল না পুলিশ। পরে ১৯ অক্টোবর ভোরে উত্তরার ১৩নং সেক্টরের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার এসআই মোশারফ হোসেন চৌধুরী বলেন, তানিয়া জানিয়েছে এ পর্যন্ত চল্লিশটিরও বেশি প্রতারণা সে করেছে।

১৬ জুলাই দেশে এসে পশ্চিম নাখালপাড়ার শ্বশুরের বাসায় উঠেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী নুরুজ্জামান শাহ। পরদিন দুপুরে এই তরুণী ওই বাসায় আসেন। নিজেকে ইংল্যান্ডপ্রবাসী ডা. ডালিয়া পরিচয় দেন। নুরুজ্জামান শাহের স্ত্রীর বড় বোনের স্বামী হাসানুল হক শুভ ইংল্যান্ডপ্রবাসী। তাকে ওই তরুণী চেনেন বলে দাবি করেন। নাখালপাড়ায় গরিব মানুষকে সাহায্য ও একটি বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছেন- এমনটাই জানান নুরুজ্জামান শাহ ও তার শ্বশুরকে। অল্প সময়ে কথাবার্তায় তাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন আন্তরিকতা। এলাকার গরিব মানুষকে সহায়তা করতে চান তিনি। একপর্যায়ে ১০০ ডলার বের করে ভাঙতি চান নুরুজ্জামান শাহের কাছে। ডলার ভাঙতি করে দিতে নুরুজ্জামান শাহ তার রুম থেকে নিয়ে আসেন টাকার ব্যাগ। নুরুজ্জামান শাহ যখন ব্যাগ থেকে টাকা বের করে গুনছিলেন, ঠিক তখনই পানি খেতে চান ওই তরুণী। এ সুযোগে তিনি টাকার ব্যাগ নিয়ে কৌশলে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় নুরুজ্জামান শাহ তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, পরে তিনি খবর নিয়ে জেনেছেন, তাদের স্বজন শুভ ডাক্তার ডালিয়া নামে কাউকে চিনেন না। রেন্ট-এ-কারের যে গাড়িতে করে ওই তরুণী এসেছিলেন, সেই কারের চালকের সূত্র ধরে উত্তরা থেকে গ্রেফতার করা হয় তানিয়াকে।

রিমান্ডে তানিয়া পুলিশকে জানিয়েছে, সে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন সূত্রে বিত্তশালী লোকজনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলত। বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে স্বজনদের তথ্য সংগ্রহ করত। সুযোগ বুঝে তাদের কাছের লোক কিংবা স্বজন পরিচয় দিয়ে বাসায় আসত। ডলার ভাঙানোর ফাঁদ ব্যবহার করে কখনও পানি খাওয়ার বাহানা, কখনও অন্য কোনো বাহানায় অর্থকড়ি নিয়ে সটকে পড়ত। মালিবাগের গুলবাগ এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ খলিলুর রহমান ৩ জুলাই শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা করেন। তার বাসায় গিয়ে তানিয়া নিজেকে ছেলের বন্ধুর স্ত্রী পরিচয় দেন। বলেন, ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনবেন, তাই অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন। খলিলুর রহমান বলেন, তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন ওই নারী। একপর্যায়ে বাসায় থাকা অন্যদের নানা ছুতোয় বাইরে পাঠিয়ে দেন। এরপর কৌশলে ৫ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যান। তানিয়ার প্রতারণার শিকার হয়েছেন ২৯ জানুয়ারি মিরপুর পাইকপাড়ার আবদুল হালিম। তার বাসায় ঢুকে নিজের নাম ডা. নওশীন বলে জানান তানিয়া। প্রতারণার জাল ছড়িয়ে প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করেন তানিয়া।

উত্তরা থানায় তানিয়ার বিরুদ্ধে ২৯ আগস্ট একটি মামলা হয়। এরপর র‌্যাব-১ তাকে গ্রেফতার করে। আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে তানিয়া আবারও শুরু করেন প্রতারণা। ওই মামলার বাদী তারেক হায়দার বলেন, ৯ আগস্ট তার নানা-নানির কাছে গিয়েছিলেন এই তরুণী। তারেক হায়দারের মামা অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী। ওই ফ্ল্যাটে শুধু তার নানা-নানি ছিলেন। তারেক হায়দার বলেন, মামার বন্ধু রিজভীর বোন পারভীন পরিচয় দিয়ে আন্তরিকতা গড়ে তোলেন ওই নারী। একপর্যায়ে ওই নারী তার কাছে থাকা কিছু অস্ট্রেলিয়ান ডলার রাখার অনুরোধ করেন। এভাবে ওই বাড়ি থেকেও প্রায় আট লাখ টাকার মালামাল চুরি করে পালিয়ে যান তানিয়া। গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার রাজেন্দ্রপুরের গজারিয়া গ্রামের হাসান শিকদারের মেয়ে তানিয়া শিকদার। পড়াশোনা এইচএসসি। থাকেন উত্তরায় বাসা ভাড়া নিয়ে। বছরকয়েক আগে তার স্বামীর মৃত্যু হয়। এরপর তানিয়া তার দেবর ওয়ালিদ রহমানকে বিয়ে করেন। ওয়ালিদ ইয়াবায় আসক্ত। সে নেশায় বুঁদ হয়ে বাসায় পড়ে থাকে। শুক্রবার তানিয়ার সঙ্গে ওয়ালিদকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রতারণার টাকায় আলিশান ফ্ল্যাটে থাকতেন। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তার লাইফস্টাইল দেখলে কেউ ভাবতেও পারবে না সে এত ভয়ংকর চোর। চার বেডরুমের বাসাটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। তানিয়ার বিরুদ্ধে উত্তরা, মিরপুর, কাফরুল, শাহজাহানপুরসহ বিভিন্ন থানায় এক ডজন প্রতারণার মামলা রয়েছে। গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে বনানী ও মোহাম্মদপুর থানায় আরও দুটি মামলা হয়েছে।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।