বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্রগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার নুর আনোয়ার হোসেন রঞ্জুর বিরুদ্ধে সীমাহীন আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম কেন্দ্রে বদলী হয়ে গেলেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের “সুখী পরিবার‘‘ অনুষ্ঠানটি চলতি জুন ২০২৩ মাস পর্যন্ত প্রযোজনা ও সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন দেখিয়ে প্রায় ৩ কোট টাকা তুলে নিয়েছেন।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ে মোটা অংকের টাকা মেরে ৩ জন সিনিয়রকে ডিঙ্গিয়ে চট্রগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঢাকা কেন্দ্রে অডিয়েন্স রিসোর্স অফিসার পদে থাকার সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ পথে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। উদহরণ স্বরুপ: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা (এইচপিএনএসপি) প্রকল্পের সুখী পরিবার অনুষ্ঠানটির কথা উল্লেখযোগ্য। এই প্রকল্পের তিনি ফোকাল পয়েন্ট এবং প্রযোজক। অনুষ্ঠান বাবদ প্রতিদিন বিটিভির তহবীল থেকে ৬৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। অভিযোগ উঠেছে যে, নিজে প্রযোজনা না করে অন্য এক ব্যক্তির দ্বারা এই অনুষ্ঠানটি নির্মাণ করে প্রচার করা হচ্ছে। পারিশ্রমিক স্বরুপ ওই ব্যক্তিকে প্রতিদিন মাত্র ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। বাকী ৫৫ হাজার টাকা তিনি নিজে আত্মসাত করেন। এভাবে প্রায় এক দশক ধরে এই প্রকল্পের অনুষ্ঠানের টাকা হরিলুট করা হচ্ছে।
এ ছাড়া তিনি তার বিধি বর্হিভুতভাবে তার সিনিয়র ৩ জন কর্মকর্তার জৈষ্ঠতা লংঘন করে জেনারেল ম্যানেজার পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়েছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে। জেনারেল ম্যানেজার পদে পদোন্নতি পেতে হলে অবশ্যই তাকে অনুষ্ঠান বিভাগের দক্ষ কর্মকর্তা হতে হবে। কিন্তু তিনি অনুষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তা নন। এ বিষয়ে তার পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতাও নেই। আর এ জন্য নাকি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে তিনি ৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। তার সিনিয়র ৩ জন কর্মকর্তা হলেন: মোহাম্মদ হাসান মোল্লা,আবু তৌহিদ ও মাহবুবা ফেরদৌস।
সুত্রগুলো আরো জানায়, তিনি ২০০৪ সালে ৪ দলীয় জোট সরকার (বিএনপি-জামায়াত) সরকার আমলে সাবেক প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিস চেীধুরীর সুপারিশে বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা বিভাগে রিপোর্টার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। এরপর ২০০৪-২০০৫ সাল পর্যন্ত রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে নানা কৌশলে মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বোতন কর্মকর্তাদের খুশি করে একটার পর একটা অবৈধ পদোন্নতি বাগিয়ে নেন। বর্তমানে তিনি বিটিভির নানা খাতের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে কোটিপতি বনে গেছেন। তার চাল চলন দেখলে ও কথা বার্তা শুনলে মনে হয় তিনিই বিটিভির মহাপরিচালক। তিনি গত এক দশক ধরে বিটিভির অনুষ্ঠান বিভাগ সহ অন্যান্য বিভাগে অবৈধ হস্তক্ষেপ করে কয়েক কোটি টাকা ও সম্পদের মালিক হয়েছেন। আর এসব টাকায় ঢাকা,চট্রগ্রাম,সিলেট এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট ক্রয় করেছেন। রামপুরার বনশ্রীতেই আছে দুটি প্লট। এ ছাড়া রাজউকের উত্তরা এ্যপার্টমেন্ট প্রকল্প, ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প ও পূর্বাচল প্রকল্পে আছে ৩ টি প্লট।
একাধিক সুত্রে আরো জানা গেছে, তিনি,বিটিভি ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার হতে প্রায় ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রায় এক ডজন অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন থাকায় তিনি সে লক্ষ্যে সফল হতে পারছেন না। তবে হাল ছেড়ে দেন নি। এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এ জন্য বিটিভির সদ্য যোগদান করা জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তারের পেছনে দুদকের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কিছু সাংবাদিকদের লেলিয়ে দিয়েছেন। তাদের পেছনে অর্থও ব্যয় করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিভির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারি জানিয়েছেন, চট্রগ্রাম কেন্দ্রের এই জেনারেল ম্যানেজার নুর আনোয়ার হোসেন রঞ্জু বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছিলেন। তিনি এখানে থাকতে সীমাহীন দাপট প্রদর্শন করতেন। মহাপরিচালককেও মান্য করতেন না। নিজের ইচ্ছা খুশি মত বিটিভির অনুষ্ঠান ও কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি প্রকৌশল বিভাগেও অবৈধ হস্তক্ষেপ করতেন। কেবল পারতেন না নিউজ বা বার্তা বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে। তার সময়ে বিটিভি সুন্দরী নারীদের আঁখড়ায় পরিণত হয়। তিনি সব সময় সুন্দরী বহিরাগত নারী বেষ্টিত থাকতেন। তাদের নিয়ে আমোদ ফর্তি করতেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অ-তালিকাভুক্ত শিল্পীদের সুযোগ করে দিয়ে তাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিতেন। একমাত্র তার কারণেই বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের আজ এই দুরাবস্থা।
তারা আরো জানান, জুন মাসের মধ্যেই বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তারকে সরিয়ে তিনি বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার পদ দখল করবেন বলে চ্যারেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। এবং সেই মিশন বাস্তবায়ন করতে দুদকে বেনামে অভিযোগ ও সাংবাদিকদের কাছে সরকারী দলিলপত্রের ফটোকপি সরবরাহ করেছেন। এটি একটি সরকারী দাপ্তরিক গোপন তথ্য ফাঁসমুলক অপরাধ হলেও তিনি স্বজ্ঞানে সেটি করছেন এবং দুদক ও মিডিয়া পাড়ায় দৌড়ঝাঁপ করছেন।
বিটিভির দেশ প্রেমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী জননেতা হাসান মাহমুদ ও সচিব মহোদয় ও বিটিভির সদ্য যোগদানকারী মহাপরিচালকের সতর্ক পদক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্রগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার নুর আনোয়ার হোসেন রঞ্জুর মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি অভিযোগগুলো শুনে বলেন,আমি পরে আপনাকে ফোন ব্যাক করছি। কিন্ত আর তিনি ফোন ব্যাক করেন নি।
‘ভোলায় নদী ভাঙ্গনে হুমকির মুখে এলাকাবাসী’
ফয়জুল বারী (রুবেল), ভোলা: ভোলা শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক......বিস্তারিত