ফয়জুল বারী (রুবেল), জেলা প্রতিনিধি, ভোলাঃ পাসপোর্ট করতে নিয়মমাফিক আবেদন করবেন, তারপর ফিঙ্গার প্রিন্টসহ অন্যান্য কাজ সম্পাদন শেষে নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট সংগ্রহ করবেন। এটাই সাধারণ নিয়ম। কিন্তু ভোলার পাসপোর্ট অফিসে এই নিয়মে পাসপোর্ট পেতে আপনাকে বিরল সৌভাগ্যবানদের একজন হতে হবে। কারণ ভোলার পাসপোর্ট অফিসের সর্বত্রই দালালদের দৌরাত্ম্য। দালালের মাধ্যমে চুক্তিতে কাজ করলে আপনি পাসপোর্ট সহজেই পেয়ে যাবেন, এমনকি নির্ধারিত সময়ের আগেও পেয়ে যেতে পারেন। দালালদের বাইরে গেলে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ভোলার পাসপোর্ট অফিস যেন দালালদেরই নিয়ন্ত্রণে।
ভোলার এসব চিহ্নিত দালাল নিজেদের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের রেজিস্ট্রার্ড এজেন্ট বলে পরিচয় দেয়। বেশির ভাগ পাসপোর্টপ্রত্যাশী ই-পাসপোর্টের ফরম পূরণ করতে গিয়ে এই দালালদের ফাঁদে পড়ছেন। ফরম পূরণ শেষ হলেই দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট করার অফার দেয় তারা।
এখানে দুর্নীতির ব্যতিক্রমী পন্থা অবলম্ভন করা হয়। পাসপোর্ট অফিসের দালালরা স্বশরীরে অফিসে না এসেই পাসপোর্ট ফরমের সাথে সংযুক্ত নাগরিকত্ব সনদে সাংকেতিক কোড দিয়ে দেয় যার ফলে এখানে দালালদের দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ার মতো। তবে যে সকল আবেদনকারী ব্যক্তিরা দালালের মাধ্যম ছাড়া আসে এবং নাগরিকত্ব সনদে সাংকেতিক কোড না পেলে তাদের নিশ্চিতভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়।
ভোলা পাসপোর্ট অফিসে আবেদনকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাসপোর্ট আবেদনের নির্ধারিত ফি এর চেয়ে দুই হাজার টাকা বেশি দিতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দালালদের ভাষ্যমতে, অফিস ১৫০০ টাকার কমে কোন ভাবেই নাকি সন্তুষ্ট হয় না.এদিকে পাসপোর্ট রিনিউ করতে গেলে বর্তমান ভোটার আইডির সাথে নাম, বয়স, জন্ম তারিখে সামান্য পরিমাণ গরমিল থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর পাসপোর্ট না পাওয়ার কথা বলে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। মদনপুর ইউনিয়নের ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আকবর হোসেনের পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রে মায়ের নাম রাহিমা বেগমের জায়গায় রাহিমা খাতুন থাকায় ৩০ হাজার টাকার মতো দিতে বাধ্য হয়েছে। প্রতিনিয়ত পাসপোর্ট অফিসে এ ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় আবেদনকারীদের। দালালের মাধ্যম ছাড়া আবেদনের বিষয়টি আমলে নিতেই চায়না পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা। আবেদনপত্র যাচাইয়ের ক্ষেত্রে দালালের মাধ্যম ছাড়া সাধারণ আবেদনকারীদের এক-একদিন একটি করে সংশোধনের কথা বলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কখনো তারিখ বাংলায় লেখা কেনো, আইডি কার্ডের ফটোকপি ছোট কাগজে কেনো, আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্তি সকল কাগজ থাকা সত্ত্বেও নিয়ম মাফিক সাজানো নেই কেনো এমন যতসব ঝামেলা দেখানো হয়। একজন আবেদনকারীকে এইভাবে ফিরিয়ে দিলে তার পক্ষে ঐদিন আর সংশোধন করে লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদনপত্র জমা দেওয়া সম্ভব হয়না। আবেদনকারী দুই-তিনবার এভাবে অফিস থেকে ফিরে আসার পরে একপর্যায় বাধ্য হয়েই দালালদের শরণাপন্ন হতে হয়।
সম্প্রতি ভোলা পাসপোর্ট অফিসের সামনে যান এই প্রতিবেদক। সাথে সাথেই কয়েকজন যুবক তাকে ঘিরে ধরেন। পাসপোর্ট করবেন কি না জানতে চান। এ সময় পরিচয় গোপন রেখে ওই প্রতিবেদক জানান, তিনি নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন। একাধিক দালাল চক্র তখন এই প্রতিবেদককে নিজেদের জিম্মায় নেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে এক দালালের সাথে কথা বলা শুরু করেন ওই প্রতিবেদক। পরে আজ নয়, আগামী সপ্তাহে পাসপোর্ট আবেদন করব- এমন তথ্য জানালে সাথে সাথে মানিব্যাগ থেকে একটি কাগজের টুকরা বের করেন। সেখানে তার নাম ও মোবাইল নম্বর লেখা রয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের সামনে দালাল চক্রের উপস্থিতিও লক্ষ্যণীয়। এ দালাল বলেন, আপনে যেকোনো সময় এসে ফোন দিলেই আমি কাজ করে দেব। আমাদের মাধ্যম ছাড়া পাসপোর্ট করতে গেলে আপনাকে বিড়ম্ভনার শিকার হতে হবে।
একাধিক ভুক্তভোগী জানান, দালাল ছাড়া আবেদন জমা দেয়া হলে সার্ভার নষ্ট, অফিসার আসেননি, ছবিতে সমস্যা, জন্মতারিখ ভুল- এমন হাজারও সমস্যা তুলে হয়রানী করা হয়। মাসের পর মাস আটকে রাখা হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দেশের প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দালালদের যোগসাজশ রয়েছে। বাইরে থেকে দালালরাই নিয়ন্ত্রণ করে পাসপোর্ট অফিসগুলো। দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করতে গেলে পড়তে হয় নানা হয়রানিতে।
মদনপুর ইউনিয়নের আকবর হোসেন নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, পাসপোর্ট রেনিউ করার ক্ষেত্রে মায়ের নাম রাহিমা বেগমের জায়গায় রাহিমা খাতুন থাকায় ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। দালালদের মাধ্যম ছাড়া এসব বিষয় আমলে নিতে চান না পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা। আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমি গত বছর দালাল চক্রের সদস্য ছাড়াই পাসপোর্ট করেছি। কিন্তু পাসপোর্ট পেতে প্রায় ছয় মাস লেগেছে। তাই এবার ছোট ভাইয়ের পাসপোর্ট করার জন্য দালাল চক্রের মাধ্যমে আবেদন করতে বলেছি। এতে বাড়তি টাকা গেলেও সময়মতো পাসপোর্ট পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে ভোলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, দালাল নির্মূলে অফিসের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য জেলা পুলিশের সহায়তায় মাঝেমধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হয়। আগের তুলনায় বর্তমানে কিছুটা হলেও দালালদের দৌরাত্ম্য কম।
‘গাজীপুরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ, যানজট’
গাজীপুরের চান্দন এলাকায় টি এন্ড জেড অ্যাপারেল লিমিটেড পোশাক কারখানার......বিস্তারিত