দুই মাস ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগর দিয়ে চলাচলকারী একাধিক জাহাজে হামলা চালানোয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ সমুদ্রপথটি অনেকটাই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের আমদানি-রপ্তানি খাতেও। ঝুঁকি এড়াতে বিশ্বের বড় বড় শিপিং কোম্পানি বিকল্প পথে পণ্য পরিবহণ করছে। এতে বেশি সময় ব্যয় হওয়ায় শিপিং এজেন্টরা জাহাজ ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। এর ফলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে দেশের রপ্তানি খাত। জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানি পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে লিড টাইম (ক্রয় আদেশের পর থেকে ক্রেতার কাছে পণ্য পাঠানোর সময়) বেড়ে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক সময়মতো বিদেশি ক্রেতার কাছে পাঠাতে হিমশিম খাচ্ছেন গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা। ক্রয় আদেশ বাতিলের শঙ্কায় কেউ কেউ এরই মধ্যে অধিক ব্যয়ে আকাশপথেও পোশাক রপ্তানি শুরু করেছেন।
এশিয়া থেকে ইউরোপের পথে লোহিত সাগর হলো সবচেয়ে সহজ পথ। লোহিত সাগর থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে সুয়েজ খাল হয়ে মূলত বাণিজ্যিক জাহাজগুলো চলাচল করে। কিন্তু হুথি বিদ্রোহীদের হামলার কারণে বিশ্বের বড় শিপিং কোম্পানিগুলো লোহিত সাগরের পথ এড়াতে সাময়িকভাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার নটিক্যাল মাইল বাড়তি ঘুরে আফ্রিকার ভেতর দিয়ে উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে চলাচল করছে। এতে যেমন ১১ দিন বাড়তি সময় লাগছে, একই সঙ্গে ঘুরপথে পরিবহণের কারণে জাহাজ ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। সময় ও খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানি দুই খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন জানিয়েছেন, লোহিত সাগর শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের আরও অনেক দেশ ব্যবহার করছে। তাই এ চ্যানেল অস্থির হয়ে ওঠায় আমদানি-রপ্তানি দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আসা-যাওয়ায় ২২-২৬ দিন সময় অতিরিক্ত যাচ্ছে একেকটি জাহাজের। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬১ শতাংশ পণ্য লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল ব্যবহার করে রপ্তানি হয়। তাই রপ্তানিতে ক্ষতি হচ্ছে বেশি। বিজিএমইএ-এর সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরীও জানিয়েছেন, ক্রেতাদের কাছে সময়মতো পণ্য পৌঁছে দিতে আকাশপথে রপ্তানির চালান পাঠাতে হচ্ছে। তা না হলে রপ্তানি আদেশ বাতিলসহ নানা সমস্যায় পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে ব্যয় বেশি হচ্ছে।
জাহাজ ভাড়া সাধারণত বিদেশি ক্রেতারা বহন করলেও শেষ পর্যন্ত তা গার্মেন্ট মালিকদের ওপরই এসে পড়ে। কারণ, তারা এ খরচ উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে দেন। আবার বিদেশি ক্রেতাদের ধরে রাখতে শ্রমিকদের ওভার টাইম দিয়ে অল্প সময়ে অনেক পোশাক তৈরি করাতে হচ্ছে গার্মেন্ট মালিকদের। এতে একদিকে পরিবহণ খরচ, অন্যদিকে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সাময়িক হলেও দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের প্রধান এ খাতটি বিপাকে পড়েছে, সন্দেহ নেই। সংকটটি আন্তর্জাতিক হওয়ায় আমাদের আসলে উদ্বেগ ও দুঃখপ্রকাশ ছাড়া গত্যন্তর নেই। তবে এ সংকট উত্তরণে সরকার সাময়িক হলেও গার্মেন্ট খাতে বিশেষ প্রণোদনা কিংবা শুল্কছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। রপ্তানি শিল্পের ধারা চলমান রাখতে এ খাতে সরকার বিশেষ দৃষ্টি দেবে, এটাই প্রত্যাশা।
যুগান্তর
‘সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখায় সম্মাননা পেলেন চুয়াডাঙ্গার সন্তান এইচ এম হাকিম’
স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন শির্ষক আলোচনা শেষে সারা বাংলাদেশ......বিস্তারিত