শিক্ষাজীবনে প্রাথমিকের গন্ডি টপকাতে না পারলেও সরকারি জমি দখল , চাঁদাবাজি আর ক্ষমতাসীন দলের ব্যানারকে কাজে লাগিয়ে নিজের ফায়দা হাসিলে তার জুড়ি মেলা ভার। এ বিষয়গুলোতে যেন পেরিয়ে গেছেন দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রিও। দখলদারিত্বে, চাঁদাবাজি , ব্ল্যাকমেইলিং , মামলাবাজি যেন তার নিত্যদিনকার চলার সাথি। এলাকায় সবাই সব কিছু জানলেও ভয়ে মুখ খোলেনা।
রাজধানী ঢাকায় পা রেখে কর্মজীবনে তার সূচনা ঘটে গার্ডেনে পানি বিক্রি দিয়ে। জুলি সাম্রাজ্যের এই উত্থান অনেকটা গ্যাংস অব ওয়াসেপুর সিনেমার মতো। এ সিনেমাটিতে ওই এলাকার সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম তারা নিয়ন্ত্রণ করে। রাজনৈতিক নেতাসহ সাধারন মানুষ তাদের ভয়ে তটস্থ থাকে। থাকে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নিয়ে বাকরুদ্ধ। আর এই গ্যাংস অব ওয়াসেপুর সিনেমার আদলে গড়ে ওঠা জুলি সাম্রাজ্যের খোঁজ মিলে এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদক অনুসন্ধান করতে গিয়ে। বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব রহস্যময় তথ্য উপাত্ত। মিলে লোমহর্ষক সব ঘটনার সব ধারা বিবরণী।
জুলি সাম্রাজ্যেও নাটকীয় উত্থানঃ
প্রায় তিন দশক আগে দারিদ্রতার চরম কাষাঘাতে দু বেলা দুমুঠো অন্নের সন্ধানে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকার বুকে। ভর্তি হন কামাল মজুমদার স্কুলে। কিন্তু সংসারের টানা পোড়েনে ৮ম শ্রেনিতে ফেল করেই চুকিয়ে ফেলেন স্কুল যাত্রা। নেমে পড়েন ঢাকার মিরপুর এলাকার চিড়িয়াখানা রোডের বোটানিক্যাল গার্ডেনে পানি বিক্রিতে। মা, ভাই ও অপর আরেক বোনকে নিয়ে থিতু হয়ে জীবন যাত্রা শুরু করেন অচেনা এই ইট পাথরের নগরীতে। পানি বিক্রির সাথে চুরিসহ নানান ছোট খাটো অপরাধের মধ্য দিয়ে পা বাড়ান অপরাধ সাম্রাজ্যে । ইতোমধ্যে কেটে যায় কয়েকটি বছর। নাম লেখান পতিতাবৃত্তিতেও। শুরু করেন মাদক ব্যবসা। তৎকালীন সময়ে থাকা স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক মধ্যম সারির নেতার দিক নির্দেশনায় বাবা রানা মিয়ার নেতৃত্বে নিজ পরিবারের কয়েকজন আত্নীয় স্বজন ও কয়েকজন নারী অনুসারীদের নিয়ে গড়ে তোলেন ছোট খাটো কিশোর গ্যাং টাইপ একটি গ্যাং। গ্রামের জীবন যাত্রার ছোঁয়া পাল্টিয়ে লাগান শহুরে জীবনের আবেশ। পোশাক পরিচ্ছদেও নিয়ে আসেন মধ্যবিটাইপ আভিজাত্য। এভাবেই কাটে “জুলি সাম্রাজ্যের” প্রধান জুলির দিনকাল।
জুলি গ্যাং থেকে জুলি সাম্রাজ্যঃ
বিয়ে হয় শহুরে এক মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীর সাথে। বিয়ে শর্তে হাতিয়ে নেন টাকা ও স্বর্ণালংকার। বিচ্ছেদও ঘটে কয়েক বছর পর। দ্বিতীয় বারের মতো এক প্রকৌশলীর সাথে বিয়ে হয় তার। ওই প্রকৌশলীর সরলতাকে পুঁজি করে রাজধানীর আরামবাগে হাতিয়ে নেন একটি আলিশান ফ্লাট। রাজধানীর মিরপুরের রূপ নগরে হঠাৎ করেইে সন্ত্রাসের এক পত্র পল্লবের দৌঁড় দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটান নিজের। বাগিয়ে নেন রূপনগর থানার মহিলা আ’লীগের একটি পদ। তৈরি করেন রূপনগর থানার পুলিশের সোর্স জনৈক এক ব্যক্তি , জনৈক অপর আরেক ব্যক্তি ও তৃতীয় জামাই , (যিনি নিজেকে পরিচয় দেন দেশের একজন প্রথম সারির নাট্য অভিনেতা ও দেশের কয়েকটি প্রথম সারির নিউজ ও দেশের প্রথম একটি বিজনেস টেলিভিশনের কর্মকর্তাদের বন্ধু এবং ঘনিষ্ঠজন) সহ অন্তত আরো ২০ জন নিয়ে গড়ে তোলেন তার অপরাধ সাম্রাজ্য । তৈরি করেন বিস্তৃত একটি অপরাধ কার্যক্রমের এলাকা ভিত্তিক নেটওয়ার্ক। শুরু হয় জুলির নেতৃত্বে তার অনুসারীদের দখলবাজি, ব্ল্যাকমেইলিং ও চাঁদাবাজি ।
এ ব্যাপারে জনৈক ওই ব্যক্তির সাথে সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান ” আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি কোথাও বাজার বসাই না। আপনার যদি এত প্রয়োজন থাকে তাহলে আপনি গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করে তা প্রসাশনের কাছে দিয়ে জুয়ার বোর্ড গুলো বন্ধ করে দেন। তবে জুলি নামে একজনের সাথে আমার রাজনৈতিক সম্পর্ক আছে। এর বাহিরে কিছুই নেই।”
ফোনালাপ চলার এক পর্যায়ে এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে গালি দিয়ে ফোনটি রেখে দেন অভিযুক্ত এই ব্যক্তি ।
জুলির দখলবাজিঃ
সরেজমিন অসুসন্ধান বলছে, ঢাকার মিরপুরের রূপনগর বস্তির ২৩ নম্বর রোডের শেষ মাথার বোটানিক্যাল গার্ডেনের সীমানা প্রাচীরের পাশে থাকা একটি জমি দখল করে রেখেছেন জুলি ও তার অনুসারীরা । সম্প্রতি মোস্তাক নামের জমির দালালকে নিয়ে ওই জায়গাটি দখল করেন জুলি ও অনুসারীরা। যার নেতৃত্বে ছিল তৃতীয় জামাই নিজেই। সরেজমিন অনুসন্ধানে এই প্রতিবেদক যায় জুলির দখল করা রূপনগর বস্তির ওই জায়গাটিতে। দেখা যায় জায়গাটিতে রয়েছে ২০ টি ভাড়াটিয়া ঘর। কাজ চলমান রয়েছে আরো ১০ টি ঘরের। প্রত্যেকটি ঘরে রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ । পানির লাইনটিও অবৈধ। তথ্য সংগ্রহের এক পর্যায়ে এই প্রতিবেদককে একটি ঘরে ডেকে নিয়ে যায় জুলির তৃতীয় জামাই । আলাপচারিতার এক ফাঁকে নিজেকে গোপালগঞ্জের ছেলে হিসেবে পরিচয় দিয়ে নানান কথা জুড়ে দেন। তার জমিতে কেন আসছি? কার অনুমতি নিয়ে আসছি? জানতে চান এসব। দেশের একটি প্রথম বিজনেস টেলিভিশনে কর্মরত একজন তার ভাইবন্ধু। আরো দুটি নিউজ ভিত্তিক টেলিভিশনের অপরাধ বিভাগে কর্মরতরা তার বন্ধু। খ্যাতিমান একজন নাট্য অভিনেতা তার ঘনিষ্ঠ জন। আলাপচারিতার এক ফাঁকে তিনি বলেন কোন এক সময় কয়েকজন সাংবাদিক ও একজন ম্যাজিস্ট্রেট কে পিটিয়েছে তার রূপনগর বস্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ নিয়ে অভিযান চালানো ওই অংশের তার অনুসারীরা। অবৈধ বিদ্যুৎ বা দখলকৃত জমি নিয়ে কাজ করলে এখান থেকে ফিরে যেতে পারবনা বলেও অনেকটা ঠান্ডা মাথায় হুমকি দেন এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদককে।
জুলি সাম্রাজ্যের অপরাধকান্ডঃ
জুলির বাবা রানা মিয়া কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন বনে গেছেন একটি দোতলা বাড়ির মালিক। স্থানীয় এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিশেষ আর্শীবাদে চালান তার এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞ এমনাটাই দাবি করছেন বিশ্বস্ত সূত্র গুলো। সূত্র বলছে, রূপনগর এলাকার ৩০ নম্বর সড়কে থাকা একটি নীল রং এর বাড়ি ও বাড়ির মালিককে হঁটিয়ে করে নিয়েছেন নিজের নামে। রূপনগর থানার পুলিশের সোর্স। যাকে ওই সাম্রাজ্যের ব্লাকমেইলিং মাষ্টার ও অজ্ঞাতনামা আসামী মাষ্টার বলা চলে। জনৈক অপর আরেক ব্যক্তি জায়গা দখল করে ৩০ নম্বর রোডে গড়ে তুলেছেন অন্তত ৫ টি দোকান। সরকারি সড়ক দখল করে প্রতিনিয়ত বসান একটি বাজার। যে বাজার থেকে উঠে মাসে লক্ষ টাকার মাসওয়ারা । যার ভাগ নেন প্রশাসন ও স্থানীয় একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর । তাদের অনুসারী অপর একজন জুয়া মাষ্টার রোহিঙ্গা বস্তিতে চালান লক্ষ টাকার চালান জুয়ার আসর। রূপনগরের ৩০ নম্বর সড়কে চালান স্কুলগামী শিক্ষার্থী , কলেজপড়ুয়া ও উঠতি বয়সের তরুনদের নিয়ে অপর আরেকটি নৈশকালীন জুয়ার আসর। জুলির তৃতীয় জামাই মিরপুর বেড়িবাঁধে সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছেন “দেশ বাংলা ” নামে একটি দেশীয় খাবার হোটেল। সূত্র আরো বলছে, আরেক নারী সহোযোগী যিনি “ভ্যানিটি” ব্যাগ নিয়ে সারানদিন ঘূর্ণায়মান অবস্থায় টাকা খাটান সুদে। করেন মাদক সরবরাহ ।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে জুলির ব্যক্তিগত মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি সাপ্তাহিক তদন্ত চিত্র কে বলেন, আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে এক শ্রেণির মানুষ মাঠে নেমেছে। এসব মিথ্যা। আমি কোন চাঁদাবাজি, দখলবাঁজির সাথে জড়িত নই।
‘সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে: ফায়ার সর্ভিস’
সুন্দরবনে অগ্নিনির্বাপণ অভিযানের ৪৮ ঘণ্টার মাথায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে......বিস্তারিত