TadantaChitra.Com | logo

১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বগুড়ায় স্বামী-স্ত্রী ও বান্ধবীর প্রতারণা; সিঙ্গাপুর প্রবাসী লালচানের টাকা আত্মসাৎ

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪, ১৬:৪৭

বগুড়ায় স্বামী-স্ত্রী ও বান্ধবীর প্রতারণা; সিঙ্গাপুর প্রবাসী লালচানের টাকা আত্মসাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতারণা করাই তাদের পেশা। বিত্তশালী লোকজনের সাথে পরিচয় হলে প্রথমে স্বামী তাকে বন্ধু বানান। এরপরে নানা কৌশলে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন। বছর না ঘুরতেই পারিবারিক বন্ধন গড়ে তুলেন। এরপর শুরু হয় নানা অযুহাতে প্রতারণা। এই দুই প্রতারকের নাম মেহেদী হাসান ও তার স্ত্রী নাজমা আক্তার। বেশ সুন্দরী নাজমা আক্তার। এই সৌন্দর্য্যকে পুঁজি করে বেশ কিছু মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছেন। আবার কারো কাছে জমি বিক্রির প্রস্তাব দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শেষমেশ জমি বা টাকা ফেরত না দিয়ে নাজমা আক্তার টাকা পাওনাদারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে ব্ল্যাকমেইল করেছেন। তার এমন কাজে সহযোগিতা করেন মেহেদী হাসান। তেমনি সিঙ্গাপুর প্রবাসী লালচান এর সাথে প্রতারণা করেন এ প্রতারক দম্পতি। বগুড়া নামুজা ভান্ডারী পাড়া এলাকায় তাদের দুইজনকে প্রতারক হিসেবে সবাই চিনেন। আত্মীয় স্বজনও তাদের এমন প্রতারণায় লোক সমাজে মুখ দেখাতে পারেন না। তাই অনেকে তাদেরকে আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিতে চান না। তাদের প্রতারণা নিয়ে আদালতে একটি মামলা করেন লাল চান। এতে আসামী করা হয়, মেহেদী হাসান, তার স্ত্রী নাজমা আক্তার ও সিন্ডিকেট সদস্য সায়মা বিবিকে। নাজমার আরেক প্রতারক বান্ধবী মনিরা। এই মনিরা কাছেও টাকা পাঠান প্রবাসী লালচান। প্রমাণ থাকলেও টাকা না দেওয়ার জন্য এসব অস্বীকার করেন মনিরা। এই প্রতিবেদকের সাথে প্রতারক মনিরার ফোনে কথা হয়। নাজমাকে বান্ধবী হিসেবে পরিচয় না দিলেও তিনি জানান নাজমা তার স্কুলের শিক্ষিকা। লালচানের সাথে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাই এখন ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন প্রতারক মনিরা। এর পর একে একে নাজমার ব্যবহার করা চারটি ফোন নাম্বারে ফোন করে তিন টি ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। একটি নাম্বার খোলা থাকলেও সেটি তার এক আত্মীয় রিসিভ করেন। নাজমার অপকর্ম সম্পর্কের জানতে চাইলে তিনি বলেন নাজমার সাথে কথা বলে জানাবেন। এরপর তিনিও ফোন কেটে দেন।

লাল চানের মামলায় বলা হয়েছে, আসামীরা প্রতারক, ভন্ড, পরধনলোভী এবং পরস্পর যোগসাজসে অন্যের অর্থ আত্মসাতকারী, আইন আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনকারী প্রকৃতির বটে । বাদী অত্র মামলার ৩নং আসামীর সাথে বাদী ২০০৭ সাল থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ সিঙ্গাপুরে চাকুরী করার সুবাদে আসামীদের পরিবারের সাথে বাদীর পরিবারের পারিবারিকভাবে সুসম্পর্ক গড়িয়া উঠে। একে অপরের বাসায় আসা যাওয়া করিত এবং খাওয়া দাওয়া করিত। ৩ নং আসামী দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে চাকুরী করার পর অর্থ উপার্জন করিয়া দেশে আসিয়া গাড়ীর ব্যবসা শুরু করে। গাড়ীর ব্যবসা খারাপ হওয়ায় পুনরায় সিঙ্গাপুরে চাকুরী করার উদ্দেশ্যে বাদীর সাথে যোগাযোগ করে এবং ৩ নং আসামীর মালিকানাধীন বগুড়া সদর থানার মাটিখালিস্থ প্রেস মিলের পাশে ৩৬ শতাংশ নাল জমি ৪০,০০,০০০/- (চল্লিশ লক্ষ) টাকা মূল্য নির্ধারন করিয়া বাদীর নিকট বিক্রয়ের প্রস্তাব করিলে উক্ত জমি বাদী ক্রয়ে সম্মত হয়। অত্র মামলর বাদী ও আসামীদের সাথে পারিবারিক ভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধুত্বপূর্ণ ও পারিবারিক সম্পর্ক থাকার সুবাদে এবং সরল বিশ্বাসে ১ নং আসামীর আশ্বাসে আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করিয়া এবং ৩ নং আসামী বাদীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় ২ নং আসামী সায়মা বিবির পরামর্শে বাদী কোন প্রকার ডিড ডকুমেন্ট ছাড়া গত ১৩/০৯/২০২১ ইং তারিখ ১ নং আসামী নাজমা আক্তার এর অগ্রণী ব্যাংক লিঃ বগুড়া রোড শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নং-০২০০০১৭১৯১৩৭৫-তে গত ১৩/০৯/২০২১ ইং তারিখ সিঙ্গাপুর হইতে ৩২৩ ডলার যাহা বাংলাদেশী টাকায় ৩২,০০০/- (বত্রিশ হাজার) টাকা, গত ১৩/০২/২০২২ ইং তারিখ সিঙ্গাপুর হইতে ৫৫১ ডলার যাহা বাংলাদেশী টাকায় ৪৮,০০০/- (আটচল্লিশ হাজার) টাকা, গত ১৬/০২/২০২২ ইং তারিখ সিঙ্গাপুর হইতে ৮৬৮ ডলার যাহা বাংলাদেশী টাকায় ৭৫,০০০/- (পঁচাত্তর হাজার) থানা ১৮/০৪/২০২২ ইং তারিখ রাজবাড়ী টাকা, গত আলাদীপুর অগ্রণী ব্যাংক শাখায় ৬০,২৯০/- (ষাট হাজার দুইশত নব্বই) টাকা, গত ০৬/০৩/২০২২ ইং তারিখ ১নং লিগ্যাল নোটিশ গ্রহীতার বান্ধবী সিরাজুম মনিরা নিপার এর মাধ্যমে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা, গত ০৭/০৪/২০২২ ইং তারিখ আমার মোয়াক্কেল এর নিকট হইতে ঢাকায় আসিয়া ১-৩ নং লিগ্যাল নোটিশ গ্রহীতা নগদ ৪,৩৫,০০০/- (চার লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার) টাকা, গত ২০/০৪/২০২২ ইং তারিখ ১ ও ২ নং নোটিশ গ্রহীতার কথামত রাশেদুল (চুয়াডাঙ্গা) কে সিঙ্গাপুরে ৩৭৭৬ ডলার, যাহা বাংলাদেশী টাকায় ৩,২০,০০০/- (তিন লক্ষ বিশ হাজার) টাকা, গত ১৩/০৯/২০২১ ইং থেকে ০৭/০৬/২০২২ ইং তারিখ এর মধ্যে বিভিন্ন সময় বিকাশ নং- ০১৭৮৬-৪৯০১৭০ ও ০১৭২২-৭৮৪১৯৩ এর মাধ্যমে ১,৭৬,০০০/- (এক লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার) টাকা, বগুড়া তিরব বাজার সাদেক সেনেটারী দোকান এর মালিক আঃ ছালাম এর বিকাশ নাম্বর- ০১৭১২-৪৩৭১৯৫ এর মাধ্যমে ২,৪০,০০০/- (দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার) টাকা, গত ১৩/০৪/২০২২ ইং তারিখ বগুড়া সাত মাথার পাশে এস আই শাহীন ভাই (বর্তমান থানার কর্মরত) এর মাধ্যমে নগদ ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা, গত ১১/০৬/২০২২ ইং তারিখ এস.আই শাহীন সাহেব এর ভায়রা ভাই বি.জি.বি কনস্টেবল মঞ্জুরুল এর মাধ্যমে ৫০,০০০/-(পঞ্চাশ হাজার) টাকা ২১/১২/২০২২ ইং তারিখ সিঙ্গাপুর হইতে ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে ফরওয়ার্ড ৪৫৮.৫৩ ডলার যাহা বাংলাদেশী টাকায় ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) টাকা সহ সর্বমোট ১৭,৭৬,২৯০/- (সতের লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার দুইশত নব্বই) টাকা, এবং ১নং আসামীকে সিঙ্গাপুরী বিভিন্ন স্বর্ণালংকার বাবদ ৬,৮০,০০০ /- (ছয় লক্ষ আশি হাজার) টাকা সর্বমোট- (১৭,৭৬,২৯০+৬,৮০,০০০= ২৪,৫৬,২৯০/- (চব্বিশ লক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার দুইশত নব্বই) টাকা প্রদান করার পর বাদী ৩নং আসামীকে বক্রী টাকা গ্রহণ করিয়া জমি রেজিষ্ট্রি করিয়া দিতে বলিলে ৩ নং আসামী ১ ও ২ নং আসামীর প্রত্যক্ষ পরামর্শ ও সহযোগীতায় বাদীকে নানা তালবাহানা পূর্বক বাদীর পাওনা ২৪,৫৬,২৯০/- (চব্বিশ লক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার দুইশত নব্বই) টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে প্রতারণামূলক ভাবে ঘুড়াইতে থাকে। এবং ৩ নং আসামী বাদীকে না জানাইয়া গত ২৬/০৪/২০২২ ইং তারিখে সিঙ্গাপুর চলিয়া যান। বাদীর ৩নং আসামীকে সিঙ্গাপুরে বাদী বাকী বাদীর পাওনা ২৪,৫৬,২৯০/- টাকা ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করিলেও ৩ নং আসামী এতে কোন প্রকার কর্ণপাত করে নাই। অতঃপর বাদী ১নং আসামীর সাথে মোবাইলে বাদীর পাওনা টাকা দাবী করিলে ১নং আসামী বাদীর পাওনা ২৪,৫৬,২৯০/- টাকা দেই দিচ্ছি বলিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ঘুরাইতে থাকে। মোবাইলের কথোপকথনের ভয়েসে রেকর্ড বাদীর মোবাইলে সংরক্ষিত আছে। অতঃপর বাদী দেশে আসিয়া আম-মোক্তার ও আইনজীবী নিয়োগ করিয়া গত ২০/০৬/২০২৬ ইং তারিখে তার পাওনা ২৪,৫৬,২৯০/- (চব্বিশ লক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার দুইশত নব্বই) টাকা বাদী বরাবরে পরিশোধের নিমিত্তে ১৫(পনের) দিনের সময় দিয়া লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেন। ১ ও ২নং আসামী উক্ত লিগ্যাল নোটিশ প্রাপ্ত হন। প্রাপ্তি স্বীকার পত্র ফেরৎ আসে। অতঃপর পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাদীর নিযুক্তীয় আম-মোক্তার আলামিন শেখ এর সাথে অত্র মামলার ঘটনাস্থলে গত ১৫/০৯/২০২৩ ইং তারিখ বিকাল ৫.০০ ১ ও ২ নং আসামী অত্র মামলা ঘটনাস্থলে অজ্ঞাতনামা ২ জন সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক সহ উপস্থিত হইলে তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ২-৫ নং স্বাক্ষীগণ সহ এক নালিশী বৈঠকে বসেন। ঘটনাস্থলে স্বাক্ষীদের সম্মূখে ১ ও ২ নং আসামী বাদী পাওনা টাকার কথা ও ঘটনা স্বীকার করেন এবং উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে ১নং আসামী ৩ নং আসামীর সাথে মোবাইলে হোয়াটসএ্যাপে কথা বলে এবং বাদীর পাওনা টাকা পরিশোধের বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করে ৩ নং আসামী বাদীর টাকা ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা করিয়া ২ (দুই) মাস অন্তর সমান কিস্তিতে পরিশোধের কথা বলেন তখন বাদীর নিযুক্তীয় আম-মোক্তার অদ্যই টাকা পরিশোধ করিয়া দিতে হবে বলিলে ১ ও ২ নং আসামী উপস্থিত ২- ৫ নং স্বাক্ষীগণ এর সম্মুখে উত্তেজিত হইয়া বলে বাদী কোন টাকা পরিশোধ করিবে না পারলে টাকা আদায় করিস বলিয়া অজ্ঞাতনামা দুই জন সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকসহ ঘটনাস্থল হইতে চলিয়া যায়। যারা উপস্থিত সকল স্বাক্ষীরা দেখিয়াছে ও সমস্ত কথাবার্তা শুনিয়াছে।

এলাকাবাসী বলেন, নাজমা ও মেহেদী একজন প্রতারক। এদের মানসম্মান নাই, এই টাকার জন্য প্রয়োজনে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিতে পারে। কিন্তু টাকা ফেরত দিবে না। নাজমা বিয়ের আগে এমন বহু ঘটনা ঘটিয়েছে। টাকা না দিতে যা করনীয় নাজমা সব করতে পারে। বেশিরভাগ প্রেমের অভিনয় করে ভিডিও করে পাওনাদারকে ফাঁসিয়ে দেয়।

নাজমার এক আত্মীয় বলেন, নাজমা বাল্যকাল থেকেই বেপরোয়া। সুন্দরী হওয়াতে যে কাউকে ব্ল্যাকমেইল করতে ভালোই পারে। মেহেদীকে বিয়ে করে আরো বেশি বেপরোয়া হয়েছে। এদের এ ধরনের কুকর্মে আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারি না। মানুষজন আমাদেরকে এসে যখন তাদের এসব বিষয়ে বলে তখন আমাদের খুব খারাপ লাগে। একদিকে টাকা আত্মসাৎ, অন্যদিকে প্রেম করে ব্ল্যাকমেইল। এসব বিষয়ে কারো কাছে তাদের পরিচয় দিতে পারি না। পরিচয় দিতেও চাই না।
আগামী পর্বে তাদের আরো প্রতারণার কাহিনী নিয়ে আসছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।