শিবগঞ্জ থানার এসআই সাইফুর রহমান, প্রতারক নাজমা ও লালচানকে গ্রেফতারের পর হাজতখানায় পুলিশের তোলা ছবি!
নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ার প্রতারক নাজমা বেগম ও তার সিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর পুরো জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কেউ কেউ প্রতারক নাজমা, তার স্বামী মেহেদী হাসান ও বান্ধবী মনিরা আক্তার মনির বিচারের দাবী তুলেছেন। আরেকদিকে নাজমা আক্তার ও তার সিন্ডিকেটের অপকর্মের সংবাদ দেখে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন প্রতারক নাজমা বেগম। পত্রিকা অফিসের নাম্বারে ফোন করে মামলা করার হুমকি দেন প্রতারক নাজমা বেগম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লালচানের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত না দিতে প্রবাসী লালচান, নাজমার আপন খালাও খালাতো বোনকে আসামী করে একটি পর্নোগ্রাফী আইনে মামলা করেন। এই মামলায় শিবগঞ্জ থানা পুলিশ লালচান কে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেন। লালচানকে গ্রেফতার করে থানা হাজতে রাখার পর সেই হাজতবাসের ছবি তুলে তা নাজমা বেগমকে দেন শিবগঞ্জ থানার এসআই সাইফুর রহমান। এ ছবিটি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন প্রতারক নাজমা বেগম সিন্ডিকেট। কোন আসামীকে থানা হাজতে আটক রেখে ছবি তুলে তা প্রচার করা বেআইনী। তবে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ এমন ছবি প্রচার না করলেও নাজমাকে দিয়ে প্রচার করে অপরাধ করেছেন এসআই সাইফুর রহমান। এ বিষয়ে সাইফুর রহমান বলেন, আসামী গ্রেফতার করে ডিউটি অফিসারকে বুঝে দেয়া পর্যন্ত তার দায়িত্ব শেষ। এরপর কে বা কারা আসামীর ছবি তুলেছে তা ফেসবুকে প্রচার করেছেথানাপুলিশের এই এসআই। তবে সেদিন থানায় দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য জানান, ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আসামী গ্রেফতার করে শিবগঞ্জ থানায় এনে প্রথমে ভবনের সামনে ছবি তুলেন এসআই সাইফুর রহমান। এরপর থানা হাজতখানায় ঢুকিয়ে আরো কয়েকটি ছবি তুলেন তিনি। পরে রাতে বাদী নাজমা আসলে তার সাথে একা কথা বলেন এসআই সাইফুর রহমান। সে সময় হয়তো ছবি আদান প্রদান করা হয়েছে। সাবেক ওসি অন্যত্রায় বদলী হওয়ার কারনে বর্তমান ওসির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টা আমি জানি না সুতরাং এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। হাজতখানার ছবি বাহিরে যাওয়ার কথা না বলে জানান তিনি। এটা যে করেছে, সে অন্যায় করেছে বলেও যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে পরিত্রাণ চেয়ে প্রবাসী লালচান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শক এর কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি লিখিত অভিযোগে জানান, আমি ২০০৭ সালে চাকুরীর উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুরে আসি। এখানে কাজের সুবাদে মোঃ মেহেদী হাসান (৪১) পিতা-মৃত মকবুল হোসেন, মাতা-রহিমা বিবি, সাং-নামুজা (ভান্ডারী পাড়া) থানা ও জেলা-বগুড়া এর সাথে বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমাদের সম্পর্কের কারনে আমাদের দুই পরিবারের মধ্যেও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। উক্ত মেহেদী হাসান দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে থেকে দেশে গিয়ে গাড়ীর ব্যবসা শুরু করে। গাড়ীর ব্যবসা খারাপ হওয়ায় পুনরায় সিঙ্গাপুরে আসার জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং তার মালিকানাধীন বগুড়া সদর থানার মাটিটালি সহ প্রেস মিলের পাশে ৩৬ শতাংশ নাল জমি ৪০,০০০০০ (চল্লিশ লক্ষ) টাকায় বিক্রয় করার প্রস্তাব দিলে আমি রাজি হ্ই। মেহেদীর পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের সুসম্পর্ক থাকায় এবং মেহেদীর স্ত্রী নাজমা বেগম একজন এনজিও কর্মী হওয়ায় তাদের প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করে কোন প্রকার ডিড ডকুমেন্ট ছাড়া আমি গত ১৩/০৯/২০২১ ইং তারিখে মেহেদীর স্ত্রী নাজমা বেগমের অগ্রাণী ব্যাংক লিঃ বগুড়া থানা রোড শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নং-০২০০০১৭১৯১৩৭৫ তে সিঙ্গাপুর হইতে ৩২৩ ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ৩২,০০০/- (বত্রিশ হাজার) টাকা, গত ১৩/০২/২০২২ইং তারিখে সিঙ্গাপুর হইতে ৫৫১ ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ৪৮,০০০/- (আটচল্লিশ হাজার) টাকা, গত ১৬/০২/২০২২ইং তারিখে সিঙ্গাপুর হইতে ৮৬৮ ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ৭৫,০০০/- (পঁচাত্তর হাজার) টাকা, গত ১৮/০৪/২০২২ইং তারিখ রাজবাড়ী আলাদীপুর অগ্রানী ব্যাংক শাখায় ৬০,২৯০/- (ষাট হাজার দুই শত নব্বই) টাকা, গত ০৬/০৩/২০২২ইং তারিখে নাজমা বেগমের বান্ধবী সিরাজুম মনিরা নিপার মাধ্যমে ২,০০০০০ (দুই লক্ষ) টাকা. গত ০৭/০৪/২০২২ইং তারিখে ঢাকায় আমার নিকট থেকে মেহেদী,মেহেদীর স্ত্রী নাজমা বেগম এবং মেহেদীর শাশুরী সায়মা বিবি নগদ ৪,৩৫,০০০ ( চার লক্ষ পয়ত্রিশ হাজার) টাকা, গত ২০/০৪/২০২২ইং তারিখে নাজমা বেগমের কথামত রাশেদুল (চুয়াডাঙ্গা)কে সিঙ্গপুরে ৩৭৭৬ ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ৩,২০,০০০/- (তিন লক্ষ বিশ হাজার) টাকা,গত ১৩/০৯/২০২২ ইং থেকে ০৭/০৯/২০২২ ইং তারিখের মধ্যে বিভিন্ন সময় বিকাশ নং-০১৭৮৬-৪৯০১70 ও 01722-৭৮৪১৯৩ এর মাধ্যমে ১,৭৬,০০০/-(এক লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার) টাকা, বগুড়া পীরব বাজার সাদেক সেনেটারী দোকান এর মালিক আঃ ছালাম এর বিকাশ নং-০১৭১২-৪৩৭১৯৫ এর মাধ্যমে ২,৪০,০০০/-(দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার) টাকা,গত ১৩/০৪/২০২২ ইং তারিখে বগুড়া সাত মাথার পাশে আমার পরিচিত পুলিশ সদস্য এসআই শাহিন ভাই এর মাধ্যমে নগদ ১,০০০০০/- (এক লক্ষ) টাকা, গত ১৩/০৬/২০২২ তারিখ এসআই শাহিন ভাইয়ের ভায়রা বিজিবি সদস্য মনজুরুল ভাই এর মাধ্যমে ৫০,০০০/-(পঞ্চাশ হাজার টাকা), গত ২১/১২/২০২২ইং তারিখে সিঙ্গাপুর হইতে ন্যশানাল ব্যাংকের মাধ্যমে ৪৫৮.৫৩ ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) টাকা সর্বমোট ১৭,৭৬,২৯০/-(সতের লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার দুই শত নব্বই) টাকা সহ মেহেদীর কথায় তার স্ত্রী নাজমা বেগমের জন্য সিঙ্গপুরী বিভিন্ন স্বর্নলংকার বাবদ ৬,৮০,০০০/(ছয় লক্ষ আশি হাজার) টাকা সর্বমোট ১৭,৭৬,২৯০+ ৬,৮০,০০০ = ২৪,৫৬,২৯০/-(চব্বিশ লক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার দুইশত নব্বই) টাকা প্রদান করার পর বাকী টাকা নিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করে দিতে বললে, তারা আমাকে জমি রেজিষ্ট্রি করে না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকে। তাছাড়া আমাকে না জানিয়ে গত ২৬/০৪/২০২২ ইং তারিখ মোঃ মেহেদী হাসান সিঙ্গাপুর চলে যায়। পরবর্তীতে আমি মেহেদীর স্ত্রী নাজমা বেগমের খালা এবং তার খালাতো বোনকে সম্পুর্ন ঘটনা অবগত করি। পরবর্তীতে আমি গত ২৮/০১/২০২৩ ইং তারিখে বিকাল অনুমান ০৩:০০ ঘটিকার সময় আমার স্ত্রী,আমার স্ত্রীর মামাতো বোন,আমার ভাগ্নে, এবং নাজমার তিন খালা এবং খালাতো বোনদের সাথে নিয়ে নাজমার বাবার বাড়ীতে যাই কিন্তু নাজমা বা তার পরিবার সবাই পালিয়ে থাকে, তাদেরকে না পেয়ে আমরার সবাই স্ব স্ব বাড়ীতে চলে যাই। তারপর আমার ছুটি শেষ হওয়ার সময় হয়ে যাওয়ায় পরিবার সহ সিঙ্গাপুর চলে আসি। গত ০৫/০৫/২০২৩ইং তারিখে আমি,আমার স্ত্রী সন্তান সহ সিঙ্গাপুর হতে বাংলাদেশে যাওয়ার পথে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। তখন আমি জানতে পারি গত ০১/০২/২০২৩ইং তারিখে মেহেদীর স্ত্রী নাজমা আমার নামে পর্নোগ্রাফির এ্যক্টে মামলা করেছে।
মামালা নং-০২/৪১ শিবগঞ্জ থানা বগুড়া । তারপর ঐ মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই সাইফুর রহমান (বিপি নং-৯২২১২৩৮৯৩৯) আমাকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হইতে শিবগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়। এসআই সাইফুর রহমান স্যার থানার মধ্যে আমার বেশ কিছু ছবি তুলে এবং পরবর্তীতে বাদীনি নাজমা বেগমদের কাছে দেয়। কারন, ঠিক সেই ছবি গুলোই বাদীনিরা আমাদের আত্মীয় স্বজন এলাকাবাসীকে মেসেন্জারে সরবরাহ করে নানা হেয় প্রতিপন্ন ও বিভ্রান্তমুলক তথ্য ছড়ায়। এছাড়াও ঠিক সেই ছবিগুলো দিয়ে মোঃ মেহেদী হাসান সিঙ্গাপুরে আমার নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানে আমার সহকর্মী এবং আমার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সরবরাহ করে। তারপর তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুর রহমান স্যার আমাকে আদালতে প্রেরন করে ০৫(পাঁচ) দিনের রিমন্ডের আবেদন করেন। গত ১৬/০৫/২০২৩ইং তারিখে আদালত ০১(এক) দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করিলে ১৭/০৫/২০২৩ইং তারিখে বগুড়া জেলখানা থেকে থানাহাজতে নেয়। পরে ঐ রাতে আমার আত্মীয় স্বজনের কাছে আমাকে মারধরের ভয় দেখিয়ে টাকা দাবী করে। আমাকে যেন মারধর না করে তার জন্য আমার ভগ্নীপতি আবদুস সালাম শেষে বাধ্য হয়ে দুজন পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে (একজন কং আহম্মেদ বগুড়া কোর্টে কর্মরত অন্যজন ঐ থানার সেকেন্ড অফিসার পরিচয় দিয়েছিল) এসআই সাইফুর রহমান স্যারকে নগদ ৮০,০০০/-(আশি হাজার) টাকা প্রদান করি। পরবর্তীতে আমি গত ০৬/০৬/২০২৩ ইং তারিখে বগুড়া জজ আদালত থেকে জামিন পাই। আমি সিঙ্গাপুর কোম্পানীর ম্যনেজার হওয়ায় গুরত্বপূর্ন ডকুমেন্ট আমার কাছেই ছিল বিধায় মহামান্য হাইকোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে সিঙ্গাপুরে আসি। এমন নিরাপত্তা বেস্টিনী থানার হাজতখানার ভিতরে আমার ছবি ও হেন্ডকাপ পরিহিত আমার ছবিসমূহঃ এবং রিমান্ডে মারধরের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নেওয়া সুশৃখংল বাহিনীর দ্বারা হবে এটা আমি প্রবাসি হিসাবে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। যাহার জন্য আমি এবং আমার পরিবার শারীরিক মানসিক সমস্যায় ভুগতেছি।
উপরোক্ত বিষয় বিবেচনা করে ছবি সরবরাহকারী ও রিমান্ডে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়কারী এসআই সাইফুর রহমান (বিপি নং-৯২২১২৩৮৯৩৯) শিবগঞ্জ বগুড়া সদর থানা সহ উক্ত ছবি সোসাল মিডিয়ায় দেওয়া দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে আমার পাওনা টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে আর্জি জানান লাল চান।
‘নেত্রকোনায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বসুন্ধরা শুভ সংঘের সবজির বীজ প্রদান’
এ বছর এক একর জমিতে ব্যাংক লোন করে সবজি চাষ......বিস্তারিত