দেশের প্রথম সারির ৪০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা ভ্যাটের পরিমাণ ১৩৯ কোটি ২২ লাখ ১৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও ভ্যাট পরিশোধ করেনি, ‘দিচ্ছি আর দেব’তেই সীমাবদ্ধ ছিল।
গত মার্চে বকেয়া আদায়ে এনবিআর এই ৪০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব জব্দ করার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পরও আদায় হয়েছে মাত্র ১৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এনবিআর ১০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব খুলে দিলেও বাকিদের হিসাব জব্দই রেখেছে।
এনবিআরের প্রতিবেদন থেকে এসব জানা যায়;
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাওনা ১৮০ কোটি ৫০ লাখ ৯৪ হাজার ৫৬৪ টাকার একটি টাকাও পরিশোধ করেনি। ফলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব এখনো জব্দ আছে। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কাছে পাওনা রাজস্ব ৮০ কোটি ১০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৮০ টাকার একটি টাকাও পরিশোধ করেনি। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব জব্দ আছে। ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাওনা ৩০ কোটি ৩ লাখ ১৯ হাজার ৯৭৩ টাকার ১০ কোটি টাকা পরিশোধ করায় হিসাব খুলে দেওয়া হয়েছে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাওনা ২৩ কোটি ৮০ লাখ ২ হাজার ৪৮৫ টাকার ৮ কোটি টাকা পরিশোধ করায় ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হয়েছে। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কাছে পাওনা ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮৭ হাজার ৮০৮ টাকার কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি। ব্যাংক হিসাব জব্দ আছে। অতীশ দীপংকর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কাছে পাওনা ৫৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৩৫ টাকার ১ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ব্যাংক হিসাব জব্দ আছে। সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাওনা ৪৫ কোটি ৫ লাখ ৪ হাজার ৮৪৩ টাকার কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়নি।
এভাবে প্রথম সারির ৪০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে আদায় হয়েছে মোট পাওনার ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। প্রতিবেদন বিশ্লেষণে জানা যায়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রাজস্ব পরিশোধের তথ্য খতিয়ে দেখতে ১৪ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ টাস্কফোর্সে ভ্যাট, আয়কর ও শুল্ক শাখা, ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) কর্মকর্তারা আছেন।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা পর্যায়ক্রমে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়, ব্যয়, কর-শুল্ক-ভ্যাট পরিশোধের তথ্য খতিয়ে দেখেন। বিশেষভাবে ব্যাংক লেনদেনের তথ্য, শিক্ষার্থী ভর্তির পরিমাণ এবং এ খাতে আদায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপকরণ ক্রয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনের আয়-ব্যয় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হয়। সব তথ্যপ্রমাণ যাচাই-বাছাই করে এই ৪০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রাজস্ব পরিশোধের তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এনবিআরের কাছে দাখিল করা তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শিক্ষার্থী ভর্তির তথ্যে মিথ্যা হিসাব দেওয়া হয়েছে। রেজিস্ট্রারে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা ও ভর্তি ফির ক্ষেত্রে যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, ব্যাংক লেনদেনে তার থেকে বেশি। আবার বিভিন্ন উপকরণ কেনা, সেমিনার, শিক্ষামূলক কার্যক্রম আয়োজন, প্রশিক্ষণ, বেতন-ভাতাসহ সব ক্ষেত্রেই হিসাবের রেজিস্টারের সঙ্গে ব্যাংক লেনদেনের কোনো মিল নেই। বিনা বেতনে অনেক শিক্ষার্থীকে পড়ানো হচ্ছে এমন তথ্য দেওয়া হলেও তা সঠিক না। স্কলারশিপের তথ্যেও রয়েছে গরমিল।
শুধু তাই নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ ব্যয়েও মিথ্যা হিসাব দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আয়কর আইন ২০২৩-এর ২১৪ ধারা অনুসারে গত ৪ মার্চ কর অঞ্চল-১১ থেকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠিয়ে ২০০২-০৩ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ১৬ অর্থবছরে ১৮০ কোটি ৫০ লাখ ৯৪ হাজার ৫৬৪ টাকা রাজস্ব পাওনা দাবি করা হয়। চিঠিতে এ অর্থ ২৫ মার্চের মধ্যে পরিশোধের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয় এবং সময়মতো রাজস্ব পরিশোধ না করলে ২০২৩-এর ২৭৫ ধারা অনুযায়ী জরিমানা আরোপসহ অন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়।
এ বিষয়ে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, এনবিআর থেকে চিঠি পাঠিয়ে রাজস্ব পাওনার কথা বলা হয়েছে। আমরা আইনজীবীকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’ শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফকরুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে রাজস্ব আদায়ে এনবিআর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। বকেয়া পরিশোধ করলে জব্দ হিসাব প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।’
‘চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে গণমাধ্যম কর্মিকে ইউএনওর হুমকি, স্থানীয় সাংবাদিক মহলে আতঙ্ক’
এইচ এম হাকিমঃ চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাস......বিস্তারিত