তীরে এসে তরী ডোবাতে ওস্তাদ তারা। নকআউট ম্যাচে ভেঙে পড়ার অভ্যাসের জন্য নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চোকার্স তকমা। তবে এবারের বিশ্বকাপে ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাইনালেও ভারতকে এক পর্যায়ে কোণঠাসা করে ফেলেছিল তারা। কিন্তু জাসপ্রীত বুমরাহ হাজির হলেন হন্তারক হয়ে। প্রোটিয়াদের আরও একবার স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পুড়িয়ে ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো ভারত।
শনিবার (২৯ জুন) ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।
এদিন টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান সংগ্রহ করে ভারত। জবাবে এক পর্যায়ে ম্যাচ নিজেদের হাতের মুঠোয় নিয়ে এলেও স্নায়ুচাপে ভেঙে পড়ে ম্যাচ হেরে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। নির্ধারিত ২০ ওভারে শেষ পর্যান্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান করতে পারে তারা।
শেষ চার ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য দরকার ছিল মোটে ২৬ রান। কিন্তু বুমরাহর করা ১৮তম ওভারে মাত্র ২ রান সংগ্রহ করতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখান থেকে আর রান-বলের ব্যবধান ঘুচাতে পারেনি প্রোটিয়ারা। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই শিরোপা জিতেছিল ভারত। ১৭ বছর পর দ্বিতীয় শিরোপা জিতল তারা।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে হেনরিখ ক্লাসেনের ঝড়ে এক পর্যায়ে ম্যাচ জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু হার্দিক পান্ডিয়ার করা ১৭তম ওভারে তার বিদায়ের পর ম্যাচ নাটকীয় মোড় নেয়। পরের ওভারে জাসপ্রীত বুমরাহ দুর্দান্ত বল করেন। সেই ওভারে ২ রানের বেশি নিতে পারেনি প্রোটিয়া ব্যাটাররা। এরপর ক্রমে বাড়তে থাকা রানরেটের চাপ আর সামলাতে পারেনি তারা। স্নায়ুচাপে ভেঙে পড়ে কাছে পৌঁছেও শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হলো না এইডেন মার্করামের দলের। ২০২৩ সালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বছরের শেষ দিকে নিজদেশের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও দুবারই অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বেদনায় বুক ভাসিয়েছিল ভারতীয়রা। আইসিসির টুর্নামেন্টে একের পর এক ব্যর্থতায় ভারতের নামের সঙ্গেও চোকার্স তকমা উচ্চারিত হওয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু অবশেষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এসে সাফল্যের মুখ দেখলো মেন ইন ব্লুরা।
রোহিত শর্মার নেতৃত্বেই কাটল তাদের শিরোপাখরা। ব্রিজটাউনে এদিন ভারতের দেয়া ১৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুতেই হারায় রিজা হেনড্রিকসের উইকেট। টুর্নামেন্টজুড়ে চলা ব্যর্থতা ফাইনালেও পিছু ছাড়েনি এই ওপেনারের। মাত্র ৪ রান করে বুমরাহর বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। পরের ওভারে আর্শদীপ শিকার করেন প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করামকে। ৫ বলে ৪ রান করেই ফিরে যান প্রোটিয়া অধিনায়ক। ত্রিস্তান স্ট্যাবসকে নিয়ে কুইন্টন ডি কক ইনিংস মেরামত করে ভালোই জবাব দিচ্ছিল। নবম ওভারের আগেই স্কোরবোর্ডে ৭০ রান তুলেও ফেলেছিল তারা। কিন্তু নবম ওভারের এক বল বাকি থাকতে বিদায় নেন স্ট্যাবস। ২১ বলে ৩১ রান করে অক্ষর প্যাটেলের শিকারে পরিণত হন তিনি। ডি ককের সঙ্গে জুটি বেঁধে হেনরিখ ক্লাসেন ঝড় তোলেন। এই জুটিতে ম্যাচ অনেকটাই প্রোটিয়াদের হাতে চলে আসে।
কিন্তু ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে আর্শদীপের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন ডি কক। ৩১ বলে ৪ চার ও ১ ছয়ে ৩৯ রান করেন তিনি। ডি ককের বিদায়ে অবশ্য প্রোটিয়াদের রান তাড়ায় কোনো প্রভাব পড়েনি। ক্লাসেন রীতিমতো ভারতীয়দের নাভিশ্বাস তুলে দেন। ধীরে ধীরে ম্যাচ ভারতের হাত থেকে ছুটে যাচ্ছিল। শেষ চার ওভারে প্রোটিয়াদের জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৬ রান। ক্রিজে ক্লাসেনের সঙ্গে তখন ডেভিড মিলার। ভারতের হার তখন প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু ১৭তম ওভারের প্রথম বলেই ক্লাসেনকে আউট করেন হার্দিক পান্ডিয়া। মাত্র ২৭ বলে ২ চার ও ৫ ছয়ে ৫২ রান করে বিদায় নেন তিনি। তার বিদায়ের পর ম্যাচটাও ছুটে যায় প্রোটিয়াদের হাত থেকে।
সেই ওভার ও তার পরের ওভারে বুমরাহ মিলে দেন মাত্র ৬ রান। তাতে শেষ ১২ বলে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ২০ রান। আর্শদীপের করা ১৯তম ওভারে ৪ রান নিতে পারে মিলার ও মহারাজ। ফলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রোটিয়াদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬ রান। কিন্তু পান্ডিয়ার ওভারে মাত্র ৮ রান নিতে পারে তারা। ভারতের পক্ষে হার্দিক পান্ডিয়া ৩ ওভারেমাত্র ২০ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন। বুমরাহ ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন। ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন আর্শদীপও। এছাড়া অক্ষর প্যাটেল ১ উইকেট শিকার করেন। এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বিরাট কোহলির ৫৯ বলে ৭৬ ও অক্ষর প্যাটেলের ৩১ বলে ৪৭ রানে ভর করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান সংগ্রহ করেছিল ভারত। ফাইনালে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠে ম্যান অব দ্য ফাইনালের পুরস্কার জিতেছেন বিরাট কোহলি। আর টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ বোলিং করে ভারতকে শিরোপা এনে দেয়ায় টুর্নামেন্টসেরা হয়েছেন জাসপ্রীত বুমরাহ।
‘চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে গণমাধ্যম কর্মিকে ইউএনওর হুমকি, স্থানীয় সাংবাদিক মহলে আতঙ্ক’
এইচ এম হাকিমঃ চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাস......বিস্তারিত