নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাগল কাণ্ডে আলোচিত সমালোচিত কাস্টমস কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে সংসার ভেঙেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব (মূসক মনিটরিং, পরিসংখ্যান ও সমন্বয়) আরজিনা খাতুনের। একবার নয় বেশ কয়েকবার মতিউর রহমানের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় আরজিনাকে হাতেনাতে ধরে পেলেন আরজিনা খাতুনের স্বামী। বারবার সতর্ক করা হলেও মতিউর রহমানের সাথে চলা অনৈতিক সম্পর্ক থেকে বের হতে পারেননি আরজিনা খাতুন।
জানা গেছে, মতিউর রহমানের সাথে এমন অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আরজিনা। হাতিয়ে নেওয়া এসব টাকা দিয়ে নামে-বেনামে সম্পদ গড়েছেন। করেন বিলাশী জীবন-যাপন। মতিউর রহমান সম্পর্ক বিচ্ছেদ করতে চাইলে আরজিনা তাঁকে ব্ল্যাকমেইল করতেন। ভয় দেখিয়ে বলতেন শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও আছে তা ফাঁস করে দিবেন। ভিডিও ফাঁসের ভয়ের কারনে মতিউর রহমান চাইলেও আরজিনার কাছ থেকে বের হতে পারেন নি। তবে এসব বিষয়ে সংসার ভাঙ্গেনি বলে অস্বীকার করেন আরজিনা খাতুন। এদিকে তার অঢেল সম্পদের তদন্ত ও বিচার চেয়ে দুদকে অভিযোগ দিয়েছেন এক ব্যক্তি।
গত ১ এপ্রিল ফেয়ার অ্যান্ড সন্স কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে মো. ইসতিয়াক আহমেদ রেজা এ অভিযোগটি করেন। অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে ঢাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, সেনানিবাস ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক, সেগুনবাগিচায় এনএসআইয়ের মহাপরিচালক, মালিবাগ ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের প্রধান, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বরাবরে।
অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কর্মরত থাকাকালীন আমদানি পণ্য খালাসের নামে একশ্রেণির ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের থেকে হাতিয়ে নিতেন মোটা অংকের টাকা। অনেক সময় পণ্য খালাসের কাজ না হলেও ফেরত দিতেন ঘুষের টাকা। এভাবে দুর্নীতির টাকায় তিনি গড়েছেন কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। একইসঙ্গে তিনি স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশে হাতিয়েছেন প্রায় ছয় কোটি টাকার স্বর্ণ। চট্টগ্রামে এসব ঘুষের টাকা লেনদেনের বাহক ছিলেন তার এক বাল্যবন্ধু, অফিসের পিয়ন ও গাড়িচালক।
কাস্টমস কর্মকর্তা আরজিনা খাতুন এর আগে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার (ডিসি) ছিলেন। এক বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে বদলি করা হয়। আরজিনা রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি থানার মধুপুর গ্রামের তালুকপাড়ার আহমেদ আলীর মেয়ে।
অভিযোগে বলা হয়, আরজিনার বিভিন্ন অনিয়মের সহযোগী ছিলেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পিয়ন মো. ইলিয়াস ও গাড়িচালক শাহাজাহান আকতার। এছাড়া বাল্যবন্ধু হিসেবে পরিচিতি মো. আবু তাহের এবং তার আপন ছোট ভাই রবিউল ইসলাম এবং বাবা আহমেদ আলীও দুর্নীতির কাজে সহযোগিতা করেছেন।
অবৈধ অর্থে ৫০০ ভরি স্বর্ণ
দুদকে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অবৈধভাবে উপার্জন করা অর্থে ৫০০ ভরি স্বর্ণ কিনেছেন আরজিনা খাতুন। তার বার্ষিক আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন, বিয়ের সময় ১০০ ভরি স্বর্ণ উপহার পেয়েছেন। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তার বিয়ের কাবিননামায় এসব স্বর্ণের কথা উল্লেখ নেই।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আরজিনা ১০০ ভরি স্বর্ণ কিনেছেন রয়েল ঢাকার মালাবার দোকান থেকে। রয়েল মালাবাল স্বর্ণের দোকানের অনলাইন চেক করলে এই তথ্য পাওয়া যাবে। বাকি ৩০০ ভরি স্বর্ণ কিনেছেন ঢাকার আপন জুয়েলার্স ও ডায়মন্ড ওয়াল্ড দোকান থেকে। নিজের প্রভাব খাঁটিয়ে, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এসব স্বর্ণ কেনা হয়। বর্তমানে এসব স্বর্ণের মূল্য অন্তত ৬ কোটি টাকা। দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের লকারে ও ক্রয়কৃত দোকানে স্বর্ণগুলো বন্ধক রেখেছেন তিনি।
ঢাকায় কোটি টাকার ফ্ল্যাট
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ক্রয়মূল্য গোপন করে ঢাকার মিরপুরে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন কাস্টমস কর্মকর্তা আরজিনা খাতুন। ফ্ল্যাটটি কিনেছেন ২ কোটি টাকায়। কিন্তু কেনার চুক্তিনামায় উল্লেখ করেছেন ১ কোটি ২১ লাখ টাকা। এছাড়া ফ্ল্যাট কেনার পর সেখানে ইনটেরিয়র ডিজাইনের পেছনে খরচ করেছেন ২৭ লাখ টাকা, ফ্ল্যাটের ইলেক্ট্রনিক্স ও ফার্নিচারের পেছনে ব্যয় করেছেন ৩৫ লাখ টাকা।
এছাড়া আরজিনার নিজস্ব একটি প্রাইভেট কার রয়েছে, যার নম্বর গ-১৬-৭৪৫৮। ওই কারটি নিজের অর্থ দিয়ে কেনা হলেও প্রচার করে বেড়ান ভাড়া নিয়েছেন। তদন্ত সংস্থার চোখ এড়াতে ওই কারটি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান ‘আনবি লজিস্টিক লিমিটেড’র নামে রেজিস্ট্রেশন করেন। ওই সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীও কাস্টমস কর্মকর্তার সঙ্গে দুর্নীতিতে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয় অভিযোগে।
গ্রামে কোটি টাকার আলিশান বাড়ি
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কাস্টমসের চাকরির আগে আরজিনা খাতুনের বাড়ি ছিল ২০ ফিটের টিনের ঘর। ওই টিনের ঘরের একটি অংশটি পাটিশন দেওয়া ছিল। সম্প্রতি তার গ্রামের বাড়িতে ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন আলিশান বাড়ি। ফার্নিচার ও ইলেক্ট্রনিক্স ব্যয় করা হয়েছে আরও অন্তত ৩৫ লাখ টাকা। বর্তমানে তার পরিবারের প্রত্যেক লোকজনের হাতে রয়েছে আইফোন ব্র্যান্ডের মুঠোফোন।
দুই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঘুষের টাকা
অভিযোগে আরো বলা হয়, কাস্টমস কর্মকর্তা আরজিনা খাতুনের গ্রামের বাড়ির বাল্যবন্ধু হিসেবে সবার কাছে পরচিতি মো. আবু তাহের। তিনি এয়ারপোর্ট সংলগ্নে কাওলায় ব্যবসা করেন। আরজিনা চট্টগ্রাম কাস্টমসের থাকাকালীন পিয়ন ইলিয়াস ও তার গাড়িচালক শাহজাহান আকতারকে দিয়ে টাকা পাঠাতেন বন্ধুর দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এরমধ্যে একটি হলো নিরো এন্টারপ্রাইজ, হিসাব নম্বর ৫১৫৩৩৩০০০০১২৪০, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড। অপরটি বেঙ্গল ট্রেডিং, হিসাব নম্বর ০১২১০১০০০২৭২৬। গত কয়েক বছরের ব্যাংক হিসাবের স্টেটমেন্ট বের করলে এসব তথ্য পাওয়া যাবে।
অভিযোগে এও বলা হয়, আরজিনা তার বাবা আলী আহমেদের রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি এলাকায় সোনালী ব্যাংক, হিসাব নম্বর ২২০২২০৩৪০৬৭৭-এ অবৈধ অর্থ পাঠাতেন। এছাড়া আলী আহমেদের বিকাশ নম্বর (০১৭৮৮৮৭৩৯৬৪) এবং মা মতি বেগমের বিকাশ নম্বরেও (০১৩০৮৬৯২২০৪) টাকা পাঠাতেন তিনি।
ভাইদের নামে ৪০ বিঘা জমি
বাবার বাড়ির পাশে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে তার আপন দুই ছোট ভাইয়ের নামে ৪০ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন আরজিনা। বর্তমানে সেখান থেকে ৩০ বিঘা জমি বন্ধক রাখা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় অভিযোগে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের পিয়ন মো. ইলিয়াসকে একাধিবার মুঠোফোনে কল করা হলেও সংযোগ তুলেননি তিনি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে এসএমএস পাঠানো হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
এদিকে সম্পদের বিষয়ে আরজিনা খাতুন কোন মন্তব্য করেননি।
‘পর্ব -১ আশুলিয়ায় আঙুল ফুলে কলাগাছ তাজুল, সম্পদের উৎস নিয়ে জনমনে প্রশ্ন’
নিজস্ব প্রতিবেদক:তাজুল ইসলাম,আশুলিয়ার পলাশবাড়ীতে গিলডান অ্যাকটিভওয়্যার নামে একটি পোশাক কারখানার......বিস্তারিত