TadantaChitra.Com | logo

৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রশ্নফাঁসে যা কামাইছি সব আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছি: আবেদ আলী

প্রকাশিত : জুলাই ০৯, ২০২৪, ১১:৫৬

প্রশ্নফাঁসে যা কামাইছি সব আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছি: আবেদ আলী

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী এবং তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সোহানুর রহমান সিয়ামসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সম্প্রতি বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার একটি চক্র উন্মোচিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয় পিএসসির ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত। অভিযুক্তদের একজন সৈয়দ আবেদ আলী ওরফে জীবন। তিনি পিএসসি-এর চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক। গাড়িচালক হলেও মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার বাসিন্দা আবেদ আলী কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। জীবিকার তাগিদে মাত্র আট বছর বয়সে আবেদ আলী পাড়ি জমান ঢাকায়। সদরঘাটে শুরু করেন কুলির কাজ। রাতে থাকার মতো বাসস্থান না থাকায় ঘুমিয়েছেন ফুটপাতেও।

এরপর গাড়ি চালানো শিখে ভাগিয়ে নেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) গাড়িচালকের কাজ। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি আবেদ আলীকে। অর্জন করেন বিপুল সম্পদ, সঙ্গে ক্ষমতাও। আবেদ আলী পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত তা একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এ সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয় তার নিজ এলাকা মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মীরের ছেলে। আব্দুর রহমান মীরের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আবেদ আলী মেজ। রহমান মীরের বড় ছেলে জবেদ আলী কৃষি কাজ করেন। ছোট ছেলে সাবেদ আলী এখনো এলাকায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের ভাই আবেদ আলী জীবন। এলাকার মানুষের কাছে তিনি পরিচয় দিতেন শিল্পপতি হিসেবে। আবেদ আলীর ছেলে সোহানুর রহমান সিয়ামও ব্যবহার করতেন দামি গাড়ি। আবেদ আলী নিজেও দামি গাড়িতে চড়তেন। অথচ এলাকার কেউ জানতেনই না তিনি গাড়িচালক। তিনি ঢাকায় রিয়েল স্টেটের ব্যবসা করতেন বলে এলাকায় প্রচার ছিল। কয়েক বছর ধরে এলাকায় ব্যাপক দান-খয়রাতও করেন প্রশ্নফাঁস চক্রের এই হোতা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিত্ত-বৈভব ফুলে-ফেঁপে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আবেদ আলী মীর পদবি পাল্টে নামের আগে সৈয়দ পদবি ব্যবহার শুরু করেন। বাবার উত্থান নিয়ে ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামও সম্প্রতি একটি সমাবেশে বক্তব্য দেন। বাবার উত্থানের গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার বাবা একদম ছোট থেকে বড় হয়েছেন। আমার বাবার বয়স যখন ৮ বছর, তখন পেটের দায়ে তিনি ঢাকায় চলে গেছেন। ঢাকায় গিয়ে কুলিগিরি করে ৫০ টাকা রুজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এখন তিনি একটি লিমিটেড কোম্পানির মালিক। তিনি কষ্ট করে বড় হয়েছেন। কিন্তু চ্যানেল  বেসরকারি টিভি 24 এ উঠে আসে আবেদ আলীর ভয়ংকর তথ্য। প্রায় একযুগ আগে থেকে পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রের সঙ্গে জড়িত তিনি।

আবেদ আলী নিজ গ্রামে কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির পাশে করেছেন মসজিদ। এছাড়াও সরকারি জায়গা দখল করে তার গরুর খামার ও মার্কেট নির্মাণাধীন। উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামে কিনেছেন বিপুল সম্পদ। সরেজমিনে গিয়ে আরও জানা যায়, পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী। কিন্তু এলাকার মানুষ এসব কিছুই জানতেন না। গত কুরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনের মধ্যে এক কেজি করে মাংস বণ্টন করেন। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। আবেদ আলীর ছেলে সিয়াম শুধু একটি গাড়ি নয়, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। সবই দামি, ঝকঝকে। পড়েছেন ভারতের শিলংয়ে। দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি পড়ালেখা করেন। স্থানীয় আব্দুল হক নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় তিনি আসলে মানুষকে দান-খয়রাত করতেন। তার সঙ্গে আমাদেরও ভালো সম্পর্ক ছিল।

কিন্তু তিনি যে এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তা আমি জানতাম না। এখন তদন্ত করে দোষীর বিচার করা হোক। আমরা এলাকাবাসী হতবাক।’ এ ব্যাপারে মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘যারা অস্বাভাবিকভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন, তাদের নিয়ে সচেতন মহলের প্রশ্ন তোলা উচিত। সরকারের উচিত, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। প্রশ্ন ফাঁস করে বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার কারণে তার কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করব।’ সাক্ষাৎকারে পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী বলেন, গাড়ি চালিয়েছি ১৫ বছর আগে। এখন আমি ব্যবসায়ী। প্রশ্নফাঁসে কত টাকা ইনকাম করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‌‌‘প্রশ্নফাঁসে যত টাকা কামাই করেছি, সব খরচ করেছি আল্লাহর রাস্তায়।’ এসব ব্যাপারে জানতে আবেদ আলীর ছেলে সিয়ামের ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাদের গ্রামের বাড়িও তালাবদ্ধ।

সূত্র: চ্যানেল 24

 


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।