
নুরে আলম পারভেজঃ ঢাকার দোহার উপজেলায় যৌতুকের জন্য স্বামী ও শ্বাশুড়ির হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে সন্তান সম্ভবা এক গৃহবধূ। গৃহবধূ অত্যান্ত দারিদ্র্য ঘরের সন্তান হওয়ায় ঘটনাটি স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারনে ধামাচাপা পড়ে গেছে। ফলে মামলা করে ওই নারী তার স্বামীর দেয়া প্রাণনাশের হুমকি মাথায় নিয়ে আত্মীয় স্বজনের আশ্রয়ে পলাতক জীবন কাটাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২৫ ডিসেম্বর দোহার উপজেলার দোহার খালপাড় গ্রামের আব্দুস সালামের পুত্র মো: ফারহান (৩২) এর সাথে পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতায় বিবাহ হয় পার্শ্ববতী নবাবগঞ্জ উপজেলার মোসলিমহাটি গ্রামের সফর মোল্লার কন্যা সাগরিকার। বিয়ে সময় সফর মোল্লা ও তার আত্মীয় স্বজন মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ফারহানকে ৫ ভরি স্বর্ণ, টিভি-ফ্রিজ, খাট-সুকেস ও নগদ ২ লাখ টাকা যৌতুক প্রদান করেন। বিয়ের পরবর্তী ২/৩ বছর ফারহান-সাগরিকার দাম্পত্য জীবন মোটামুটি ভালো কাটে আর তাদের কোলজুড়ে জন্মনেয় একটি পুত্র সন্তান সাজ্জাদ হোসেন ফাহিম। এদিকে ফারহান শ্বশুড়ের দেয়া ২ লাখ টাকা আর ৫ ভরি স্বর্ণালংকার মাধ্যমে ইয়াবা সেবন সহ অসৎ পথে খরচ করে অর্থ শূন্য হয়ে পড়ে। আর আস্তে আস্তে শুরু হয় পারিবারিক কলহ। ফারহান যখন তখন সাগরিকাকে বাপের বাড়ী থেকে টাকা আনার চাপ প্রয়োগ করে। সাগরিকা ১০/২০ হাজার করে বাপের বাড়ী থেকে টাকা এনে ফারহানের হাতে তুলে দিয়ে তার মন ভরাতে পারেনা। দিনে দিনে ফারহানের টাকা চাওয়ার মাত্রা বাড়তেই থাকে। এদিকে সাগরিকার মাও মারা যায়। কিন্তু ফারহানের যৌতুক চাওয়ার মাত্রা কোন অংশেই কমে না। এমনকি ফারহান সাগরিকার মিথ্যা অসুস্থতার কথা বলে তার খালা শ্বাশুড়ির নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবেই চলতে থাকে পারিবারিক কলহ। ফারহান তার স্ত্রী সাগরিকার নিকট টাকা চেয়ে না পেলে তাকে নিয়মিত চড়-থাপ্পর, কিল-ঘুষি ও অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ফারহান সাগরিকার কাছে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে বাপে বাড়ী থেকে আনতে বলে। কিন্তু সাগরিকা এসময় টাকা এনে দিতে অস্বীকৃতি জানালে ফারহান ও তার মা (সাগরিকার শ্বাশুড়ি) মিলে সাগরিকাকে বেদম মারধর করে। বিষয়টি উভয় পরিবারের মধ্যে শালিশ মীমাংসা মাধ্যমে একটি আপোষ নামা চুক্তি হয়। যেখানে শর্ত থাকে যৌতুক দাবী সহ কোন কারনেই ফারহান কখনো সাগরিকাকে মারধর করতে পারবেনা। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ২৯ নবেম্বর-২০১৮ ইং তারিখে ফারহান পূর্বে ন্যায় বাপের বাড়ী থেকে এবার ৫ লাখ টাকা আনার জন্য মারধর করে তাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিলে সাগরিকা তার নানা বাড়ীতে চলে আসে। এসময় ফারহানের মা সেলিনা বেগম সাগরিকার চার বছরের শিশু সন্তান সাজ্জাদ হোসেন ফাহিমকে জোড়পূর্বক নিজের কাছে ছিনিয়ে রাখে। কিন্তু ৫ ডিসেম্বর অর্থাৎ ৬ দিন পরে ফারহান সাগরিকার নানাবাড়ীতে গিয়ে পূর্বের ন্যায় তাদের কাছে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে এবং সাগরিকাকে মারধর করে রক্তাক্ত করিলে তাকে ৬ তারিখ সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাগরিকা ৬-১০ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে দোহার থানায় গিয়ে ঘটনার বিবরন দিয়ে ফারহানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে ফারহান আত্মগোপনে থেকে সাগরিকাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
