TadantaChitra.Com | logo

২৬শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাজউকের পরিচালক তাজিনা সরোয়ারের কাছে জিম্মি ভবন মালিকরা!

প্রকাশিত : আগস্ট ০৮, ২০২৪, ১০:০৩

রাজউকের পরিচালক তাজিনা সরোয়ারের কাছে জিম্মি ভবন মালিকরা!

* পরবর্তী প্রতিবেদনে ইমারত পরিদর্শক থেকে প্রতিমাসে ৫ লক্ষ টাকা করে মাসোয়ারা ও তাজিনা সরোয়ারের অবৈধ সম্পদ, পারিবারিক তথ্য নিয়ে থাকছে বিস্তারিত প্রতিবেদন….

তদন্ত চিত্র রিপোর্ট: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক (জোন-৩) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিনা সরোয়ারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বৈধভাবে বাড়ী নির্মাণ করা মালিকরা। কারণে-অকারণে নোটিশ দিয়ে বেশিরভাগ বাড়ীর মালিককে হয়রানি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব বাড়ীর মালিকরা আরো হয়রানির শিকার হওয়ার ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তবে অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাজিনা সরোয়ারের বিরুদ্ধে মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন এ প্রতিবেদকের কাছে। টাকা না দিলে নানা বাহানা দিয়ে ভবনের অংশ ভেঙ্গে দিবেন বলে হুমকি দেন তাজিনা সরোয়ার। তার এমন বেআইনি কর্মকান্ডে হয়রানি হওয়া এক ব্যক্তি বেশকিছু দিন আগে তাজিনা সরোয়ারকে হুমকি দেন।

তাজিনা জানিয়েছেন, মানুষের অবৈধ ভবন ভাঙ্গার নির্দেশ দেয় চেয়ারম্যান আমি শুধু দায়িত্ব পালন করি। এতে মানুষ আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়। আমাকে নানামুখী হয়রানী করে। মিরপুর একবার আমাকে কাফনের কাপড় পাঠিয়েছে। সেই হুমকি পেয়ে বাসা পরিবর্তন করি। বর্তমানে উত্তরা বসবাস করছি। তবে তার এক সহকর্মী বলছেন, এটা তার বানানো গল্প, এ যুগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে কেউ কাফনের কাপড় পাঠানোর সাহস নাই। মূলত সেদিন আমি তার একটা ভবনের অভিযানে ছিলাম, বাড়ীর মালিকদের সাথে টাকা লেনদেন নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। স্থানীয় লোকজন আমাকে জানিয়েছে তাজিনা ওই ভবন থেকে ১ কোটি টাকা দাবী করেছে, বাড়ীর মালিক না দিতে অস্বীকৃত জানালে তখনই বাজে বিপত্তি। এরপর বাড়ীর মালিক তাজিনাকে দেখে নিবে বলে হুমকি দেন। তাজিনা সেই ভয়ে মিরপুর এলাকা ছেড়ে উত্তরা বসবাস শুরু করেন। বসবাসের স্থান পরিবর্তন করেই মিরপুর এলাকা ঘুষের ভয়াবহতা বাড়িয়ে দিয়েছেন।

জানা গেছে, গত তিন মাস তার এলাকায় উল্লেখযোগ্য কোন অবৈধ ভবনে অভিযান না হলেও একাধিক ভবনে নোটিশ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। রাজধানীর বেইলী রোডে রেষ্টুরেন্টে অগ্নিকাণ্ডের পর তাজিনা সরোয়ারের ভাগ্য বেশ পরিবর্তন হয়েছে। এ ঘটনার পর পরিচালক (জোন-৩) এলাকার প্রতিটি রেষ্টুরেন্ট ও অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করেন।

এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন না ভেঙে অবৈধভাবে সুবিধা ও উত্তরায় পেট্রোল পাম্প দখল করেছেন। নিজের প্রভাব বিস্তার করে নানামুখী অপরাধ ও অপকর্ম করে প্রতিনিয়ত পার পেয়ে যাচ্ছেন। অনিয়ম ও আইনবর্হিভূত কাজের বিষয়ে তদন্ত হলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে অনিয়ম-দুর্নীতির সকল তদন্ত ধামাচাপা দেন।

রাজউকের অনেকেই বলেন, অফিসের কর্মচারীদের সাথে তার দূর্ব্যবহার চরম। এমন আচারন কোন মানুষ চাকর-বাকরের সাথেও করে না। কর্মচারীদেরকে তিনি মানুষই মনে করেন না। শুধু রাজউকে তার আচার-আচারন উগ্র তা-ই নয়। মন্ত্রণালয়েও একই অবস্থা বলে জানান তার কয়েকজন সহকর্মী।

জানা গেছে, চলতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসে তাজিনা সরোয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি অতিরিক্ত বল প্রয়োগের বিষয়ে বিচার চেয়ে একটি অভিযোগ করেন আতাউর রহমান নামে এক ব্যক্তি। এ অভিযোগ তদন্ত করতে ২৮ শে ফেব্রুয়ারী পরিচালক (প্রশাসন) মমিন উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) রাজউক, ঢাকাকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন। ওই আদেশে তাজিনা সরোয়ারের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধান করে তদন্ত কর্মকর্তাকে ৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তাজিনা সরোয়ারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগটি তদন্ত করেন তৎকালীন সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) বর্তমান সদস্য (পরিকল্পনা, যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। তিনি বলেন, অভিযোগটি ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট এবং যার নাম ব্যবহার করে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে মূলত সে ব্যক্তি নিজেই স্বীকার করেছেন এ অভিযোগ তিনি দেননি।

অভিযোগ উঠেছে, তাজিনা সরোয়ার এ অভিযোগ থেকে দায়মক্তি নিতে প্রভাব ও মোটা অংকের টাকা ব্যয় করেছেন। মন্ত্রনালয়ের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদ্বীর করিয়ে দায়মুক্তি নেন। ওই কর্মকর্তার চাপে পরে তাজিনা সরোয়ারের পক্ষে প্রতিবেদন দিতে বাধ্য হন তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগের সত্যতা থাকলেও মিলেমিশে অভিযোগকারীকে চাপ প্রয়োগ করে এ অভিযোগ তিনি দেননি তা স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়। তাজিনা এতই ক্ষমতাধর তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পান না।
অভিযোগ রয়েছে, তাজিনা সরোয়ার যে এলাকায় অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙ্গতে অভিযানে যান সেই এলাকায় অনেক ভবন মালিক থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে ভবন না ভেঙে চলে আসেন। এসব ভবন মালিক থেকে তাজিনা সরোয়ার নিজস্ব লোক দিয়ে ঘুষ লেনদেন করেন। যে ভবন মালিক টাকা না দেন সেই ভবন সবার আগে অভিযান দিয়ে ভেঙ্গে দেন তিনি। রাজধানী মিরপুর এলাকায় তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের শেষ নাই। আবার কিছু ভবনের ক্ষেত্রে পুলিশ ও যথেষ্ট জনবল নাই বলে অভিযানে যান না তাজিনা সরোয়ার। অর্থাৎ এই ভবন থেকে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন করার কারনে অভিযান পরিচালনা করেন না মর্মে জানা গেছে। তেমনি রাজধানী কাফরুল এলাকায় সিমপ্লেক্স ডেভেলপারস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এমন নজির ঘটিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, আইন অমান্য করে সিমপ্লেক্স ডেভেলপারস লিমিটেড নামের এ প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর কাফরুলে একের পর এক ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ করে চলছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগ উঠেছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউকের) পরিচালক (জোন-৩) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিনা সরোয়ার এ প্রতিষ্ঠানটিকে গোপনে সহায়তা করছেন। প্রতিষ্ঠানটি বেশ কয়েক বছর ধরে নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, আদালত এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়ার এক বছর পার হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করেনি রাজউক। ২০২১ সালে কাফরুল থানাধীন দক্ষিণ কাফরুলের সেনপাড়া পর্বতা মৌজার ৪৪৬ নম্বর হোল্ডিং রাজউক অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভবন নির্মাণ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। জানতে পেরে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় রাজউক। কিন্তু এ নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে সিমপ্লেক্স। পরে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর রাজউকের পক্ষে রায় দেন। এতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি এক মাসের মধ্যে নিজ খরচে নির্মাণাধীন ভবনটি ভেঙে ফেলবে। যদি তা না হয় রাজউক ভবনটি ভাঙবে। এ ভাঙার খরচ দেবে সিমপ্লেক্স। কিন্তু আদালতের এ নির্দেশ অমান্য করা সিমপ্লেক্স আন্ডারগ্রাউন্ড বেজমেন্ট ছাড়াও ৯তলা ভবন নির্মাণ করে।

এ ভবনে ২৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে একটি ছাড়া বাকি ফ্ল্যাটগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। এ ছাড়া উত্তর কাফরুল এলাকার ৫৪৯, ৫০৭ ও ৪৪৪ নম্বর হোল্ডিং, ইব্রাহিমপুর কাফরুল ৭৬৭ নম্বর হোল্ডিং, দক্ষিণ কাফরুলে ২৯৬/১ হোল্ডিং, একই এলাকার ৪৫২ ও ৫৪১ নম্বর হোল্ডিংয়ে রাজউকের অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ ছাড়া ২০২২ সালে কাফরুলে ২২৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে অনুমোদিত নকশা ছাড়া ভবন নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠানটি। রাজউকের লোকজন সেখানে গেলে সিমপ্লেক্স তাদের নকশা দেখাতে ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় রাজউক নোটিশ দিলেও তাতে কর্ণপাত করেনি সিমপ্লেক্স।

এসব বিষয়ে রাজউক পরিচালক (জোন-৩) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিনা সরোয়ার বলেন, সমস্ত অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোতিত। এর সাথে আমার কোন সম্পৃকততা নেই। আতাউর আমার অফিসের স্টাফ। কে বা কারা তার নাম ও ফোন নাম্বার ব্যবহার করে বানোয়াট, মিথ্যা অভিযোগটি দিয়ে আমাকে হয়রানী করেছে। মিরপুর একটি জনবহুল এলাকা। এখানের অবকাঠামো অনেক দুর্বল সেই সাথে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা অধিক। অধিকাংশ ভবন রাজউকের অনুমোদন ব্যতিত নির্মাণ করা হয়েছে। পার্শপারিক কোন্দলের কারনে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযোগ দিয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে আমি বা রাজউক কোনভাবেই সম্পৃক্ত না। সিমপ্লেক্স ডেভেলপারস কোম্পানীর নির্মিত বিভিন্ন ভবনে প্রতিনিয়তই অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং তাদের সাথে আমার কোন আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নাই।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।