* মুগদা হাসপাতাল; ভুয়া ভাউচারে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ
* মদ-নারীতে আসক্ত গণপূর্ত নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস
তদন্ত চিত্র রিপোর্ট: গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম-৬ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) অন্তজা শময়িতা পাল টানা কয়েক বছর ধরে এই দপ্তরের কর্মরত। ই/এম-৬ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাসের অধিনস্থ কর্মকর্তা তিনি। একই দপ্তরের কর্মরত থাকার সুবাধে সহকর্মী থেকে সম্পর্ক গড়ায় অনৈতিক সম্পর্কে। এমন ঘটনায় পবিত্র কুমার দাসের বাসায় বেঁধেছে হণ্ডগোল। একাধিকবার পারিবারিক অশান্তি মোকাবেলা করতে হয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাসকে। পরিবার থেকে অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত গড়িয়েছে তাদের প্রেমালাপের ঝামেলা। প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে বার বার সতর্ক করা হলেও থেমে নেই তাদের অনৈতিক সম্পর্ক। এছাড়াও বরিশাল থাকাকালে সেখানকার অফিস সহকারী সেজুতি বিশ্বাসের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে ভয়বাহ এক কাণ্ড ঘটে। পরে এ ঘটনা মিমাংসা করে দেন প্রধান প্রকৌশলী। সে সময় সেজুতি বিশ্বাস আত্মহত্যা করতে যান। এতো ঘটনার পরেও উপ সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) অন্তজা শময়িতা পালকে ছাড়তে নারাজ পবিত্র কুমার। সব সময় বিভিন্ন নারী নিয়ে পবিত্র দাস অফিসেই আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত থাকেন। অন্তজা পালের সাথে নির্বাহী প্রকৌশলী তার নিজ কক্ষে একান্তে সময় কাটানোর চিত্র দেখেছেন অনেক অফিস সহকারী। যা নিয়ে বিভিন্ন সময় রীতিমতো সবার মধ্যে আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। জানা গেছে, অন্তজাকে কয়েকবার এ দপ্তর থেকে বদলীর উদ্যোগ নেন প্রধান প্রকৌশলী। তাকে বদলী করা হবে এমন খবর জানতে পেরে নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস তদ্বীর করে তা বাতিল করেন। সে থেকে অন্তজা শময়িতা পাল তার দপ্তরেই রয়েছেন।
তবে গনপূর্তের ই/এম-৬ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাসের সাথে অফিসিয়াল সম্পর্ক ছাড়া অন্য কোন সম্পর্ক নাই বলে জানান অন্তজা শময়িতা পাল। তিনি বলেন, যে কেউ অভিযোগ করতেই পারে, তা যে সঠিক হবে এমন না। যাছাই-বাছাই করে দেখতে বলেন তিনি। এমন মিথ্যা অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ করলে হাইকোর্ট দেখিয়ে ছাড়বেন বলেও হুমকি দেন অন্তজা শময়িতা পাল। তিনি বলেন, আমাকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হলে আমি মামলা করে দিবো।
এদিকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম-৬ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট ও আলাদা বলয়। দীর্ঘ সময় একই স্থানে থেকে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তার করে অপকর্ম- দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছেন তিনি। অনেকেই তাকে বলেন মদ-নারীবাজি ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড। সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি পাকাহস্ত। তার বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপকর্ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকার পরও তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন। অধিদপ্তরের কেউ কেউ বলেন, নাম তার পবিত্র হলেও সব কাজকর্ম তার অপবিত্র। দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর যাবৎ একই বিভাগে থাকার কারণে তিনি পুরো ই/এম-৬ বিভাগটি দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিনত করেছেন। পবিত্র কুমার দাসের গ্রামের বাড়ি নড়াইল। সাধারণ পরিবারের সন্তান পবিত্র কুমার। কিন্তু তিনি কথায় কথায় প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গান, যা সরকারী চাকুরীজীবী ধৃষ্টাতা দেখে সবাই হতবাক। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হওয়ার কারনে আলাদা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পরেছেন। চাকরিজীবনে বেশির ভাগ সময় পবিত্র কাটিয়েছেন ঢাকায়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর উন্নয়ন প্রকল্প, পুলিশ ও র্যাবের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন। বিলে নয়-ছয়, কমিশনের বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়ায় সিদ্ধহস্ত তিনি। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে দুইটি কাজে এহেন অপকর্মের প্রমাণ মিলেছে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংস্কার ও মেরামতে বরাদ্দকৃত ২২টি কাজের মধ্যে মাত্র একটি কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদার। বাকি ২১টি কার্যাদেশের বিপরীতে কোনো কাজই হয়নি। অথচ এর মধ্যেই সবগুলো কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে বরাদ্দের প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল সংস্কার ও মেরামতের মোট ২৭টি কাজের মধ্যে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর অধিভুক্ত ৫টি এবং গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৬ এর আওতাধীন রয়েছে ২২টি কাজ।
জানা যায়, গণপূর্ত ই/এম-৬ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান রনির তত্ত্বাবধানেই এসব কাজ ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ সম্পন্ন না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ সম্পন্নের প্রত্যয়নপত্রের জন্য কাগজপত্র দাখিল করেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস ও প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান রনি ২২টি কাজে বরাদ্দ থাকা প্রায় ১০ কোটি টাকার ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে সেই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
মুগদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ২২টি সংস্কার কাজের জন্য আলাদা আলাদা কার্যাদেশ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র একটি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সবগুলো কাজ সমাপ্ত হওয়ার প্রত্যয়নপত্র চেয়ে কাগজপত্র দাখিল করে। তবে অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানে কাজের প্রকৃত চিত্র উঠে আসায় প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে অভিযোগ ও গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৬ এর ২২টি কাজসহ ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর আওতাধীন ৫টি কাজের সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক তদন্তের অনুরোধও জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে দেওয়া মুগদা হাসপাতালের পরিচালকের চিঠিতে বলা হয়, ‘২০২২-২৩ অর্থবছরে গণপূর্ত ই/এম বিভাগ কর্তৃক নির্মাণ/সংস্কার কাজের বিপরীতে ২২টি কাজের প্রত্যয়নপত্রের জন্য কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছে। ওই ২২টি কাজের মধ্যে ২১টির দাখিলকৃত কার্যাদেশ অনুযায়ী কোনো কাজই সম্পাদন করা হয়নি। গণপূর্ত সিভিল (ই/এম) বিভাগকে বারংবার বলার পরও তারা নির্মাণ ও সংস্কার কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করছে না।’
প্রসঙ্গত, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নানা ধরনের সংস্কারের জন্য মোট ২২টি কার্যাদেশ দিয়েছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। মুগদা হাসপাতালের ওই কাজগুলোর মধ্যে বিভিন্ন অকেজো সরঞ্জাম মেরামত এবং সংস্কার। মেরামত কাজের মধ্যে ছিল- হাসপাতাল কম্পাউন্ডে নিরাপত্তার জন্য অকেজো/নষ্ট সিকিউরিটি লাইট, গার্ডেন লাইট, ভবনের চতুর্থতলায় অবস্থিত ফ্লাডলাইট মেরামত বা পরিবর্তনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ।
এছাড়া হাসপাতালের পাম্প মটরের অকেজো নষ্ট যন্ত্রাংশ মেরামত বা পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক কাজও এর আওতাধীন ছিল। আরেকটি কাজ ছিল হাসপাতালের রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানের জন্য হাসপাতালে স্থাপিত ২০০ কেভিএ একটি, ২২৫ কেভিএ দুটি এবং ২৫০ কেভিএ একটি অকেজো বা নষ্ট ডিজেল জেনারেটর সেট মেরামত কিংবা সার্ভিসিংসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ।
ভিন্ন ভিন্ন কার্যাদেশে কনফারেন্স রুমে অকেজো বা নষ্ট বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং ফিটিংস ফিকচার মেরামত কিংবা পরিবর্তন; হাসপাতালের পঞ্চমতলার পশ্চিম পাশে স্থাপিত ওয়ার্ডগুলোর অকেজো বা নষ্ট বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং ফিটিংস ফিকচার মেরামত কিংবা পরিবর্তন; মেডিকেল কলেজের নবমতলার পূর্ব পাশে স্থাপিত ওয়ার্ডগুলোর অকেজো বা নষ্ট বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং ফিটিংস ফিকচার মেরামত কিংবা পরিবর্তন; নিয়ন সাইন বোর্ডে অকেজো বা নষ্ট লাইট পাওয়ার সাপ্লাই মেরামত এবং ৫০০ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি জেনারেটর সেটের মেরামত কিংবা সার্ভিসিংসহ বিভিন্ন সংস্কার এবং উন্নয়ন কাজ।
পবিত্র কুমারের বিরুদ্ধে গুরুতর মানিলন্ডারিং অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ নামে বেনামে বিনিয়োগের পাশাপাশি হুন্ডির মাধ্যমে পাশের দেশ ভারতেও বিশাল অংকে পাচার করেছেন। এ দেশে রয়েছে তার প্রচুর অবৈধ সম্পদ। রাজধানীর মালিবাগের চৌধুরীপাড়ার আলিশান ফ্ল্যাট তার সারা জীবনের অর্জিত আয়ের চেয়েও বেশি মূল্যের। সপ্তক আবাসন কোম্পানির ফ্ল্যাটটির মূল্য নূন্যতম ৩ কোটি টাকা।
অভিযোগের বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র কুমার দাস ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, তার বিরুদ্ধে একটি শ্রেণী কাজ না পাওয়ার ক্ষোভে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করেছে। এসব অভিযোগের বিন্দু পরিমান সত্যতা নাই। গল্প-কাহিনী লিখে অভিযোগ করে পরে কানে কানে এসে সেই শ্রেণী বলে আমাদেরকে কাজ দেন, আমরা এই অভিযোগ নিষ্পত্তি করে দিবো। অভিযোগ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। মূলত তারা পরবর্তীতে যেনো কাজ পান এ জন্য আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান পবিত্র কুমার দাস। মদের আড্ডা ও নারীবাজির বিষয়ে তিনি বলেন, এটাও কি সম্ভব বলেন?। এদের যা আসছে তা-ই লিখেছে অভিযোগে। উপ-সহকারী প্রকৌশলী অন্তজা শময়িতা পালের সঙ্গে কোন অবৈধ সম্পর্ক নাই বলে জানান পবিত্র কুমার দাস।
তবে জানা গেছে, একাধিকবার অধিনস্থ নারী সহকর্মীদের সাথে পবিত্র কুমার দাসের অনৈতিক সম্পর্কের বিচার করতে হয়েছে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আকতারের। যা অধিদপ্তরের সবাই জানে। উপ-সহকারী প্রকৌশলী অন্তজার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে পারিবারিক ভাবে বিভিন্ন সময় ঝামেলা হয়েছে। এরআগে বরিশালে অফিস সহকারী সেজুতি বিশ্বাসের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে ভয়বাহ এক কাণ্ড ঘটে। পরে এ ঘটনা মিমাংসা করে দেন প্রধান প্রকৌশলী। সে সময় সেজুতি বিশ্বাস আত্মহত্যা করতে যান। তার সাবেক এক স্টাফ জানান, গুলশান-বনানী স্যারকে বডিবিল্ডার হিসেবে অনেকেই চিনেন। তিনি সেখানে প্রতি রাতে মদ খেয়ে নারীদের সাথে আড্ডা দেন।
‘নেত্রকোনায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বসুন্ধরা শুভ সংঘের সবজির বীজ প্রদান’
এ বছর এক একর জমিতে ব্যাংক লোন করে সবজি চাষ......বিস্তারিত