TadantaChitra.Com | logo

২৬শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ওয়াসা প্রকৌশলী ফকরুলের অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য

প্রকাশিত : আগস্ট ০৮, ২০২৪, ১০:৩১

ওয়াসা প্রকৌশলী ফকরুলের অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য

* অর্থ-পাচার
* টেন্ডার বাণিজ্য
* অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদের মালিক
* অধিকাংশ সম্পদ স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের নামে গড়া

রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ঢাকা ওয়াসা। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিদিনের কার্যক্রম থেকে শুরু করে চলমান ও বাস্তবায়িত সব প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। একটি-দুটি নয়, রাজধানীর বুকে তিনটি অভিজাত দৃষ্টিনন্দন ১০ তলা ভবন। লালমাটিয়াতে ১ টি ২ কোটি টাকা মূল্যের আলিশান ফ্ল্যাট, নবীনগর হাউজিং- সেখানেও কিনে রেখেছেন ৪ কাঠার প্লট।

‘তিনি প্রকৌশলী মো. ফকরুল ইসলাম। ঢাকা ওয়াসার উপ প্রকল্প পরিচালক । এই কর্তা মাস গেলে মাইনে পান সাকল্যে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। স্ত্রী নাদিরা ইয়াসমিন মুক্তা সংগীতশিল্পী। স্বামীর অবৈধ টাকায় গড়ে তুলেছেন অনিতা ইঞ্জিনিয়ারিং নামের রিয়েল এস্টেট কোম্পানী। আয়টা স্বল্প, তবে অনেক লম্বা তাদের বিত্তবৈভবের তালিকা। টাকা কামাইয়ের আর বৈধ কোনো পথ খোলা নেই। তার পরও দু’জনার যা সম্পত্তি, বর্তমান বাজারদর ধরে ক্যালকুলেটর চাপলেই টাকার অঙ্কটা অর্ধশত কোটি পার হবে!’

ঢাকা ওয়াসার উপ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. ফকরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ, প্রকল্পে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য সম্বলিত অভিযোগ উঠেছে। ফকরুলের আমলনামায় যেসব স্থাবর সম্পত্তির তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, তা এই কর্মকর্তার পদে থেকে পুরো চাকরি জীবনেও অর্জন করা সম্ভব নয়। রাজধানীর অভিজাত এলাকা নবীনগর হাউজিং এবং ঢাকা উদ্যান, মোহাম্মদপুরে মোট তিনটি ১০ তলা এপার্টমেন্ট মালিকানা তাঁর। সরেজমিন এপার্টমেন্টগুলোতে দেখা যায়, এগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য অর্ধশত কোটি টাকা।

ইঞ্জিঃ ফখরুল এখন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের নাম ভাঙ্গিয়ে ‘আলাদিনের চেরাগ হাতে নিয়ে বসে আছেন, শুধু ঘষতে দেরি, সম্পদ হতে দেরি নেই’। পানির মিটারের চাকার চেয়ে বুলেট গতিতে ফকরুলের ভাগ্য বদলে গেছে।

অর্ধ শতকোটি টাকার সম্পদ
অনুসন্ধান বলছে, ঘুষ-দুর্নীতি, টেন্ডার বাণিজ্যর মাধ্যমে শতকোটি টাকার মালিক হওয়া ইঞ্জিঃ ফকরুলের অনেক সম্পদ। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত এসব সম্পদ নিজের নাম ছাড়াও স্ত্রী- সন্তান, ভায়রা-ভাই, এমনকি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নামেও গড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে দৃশ্যমান সম্পদের মধ্যে রয়েছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নবীনগর হাউজিং প্রকল্পে ৫ নাম্বার সড়কের হোল্ডিং নং-১২, এফ ব্লকে ৬ কাঠার উপর নির্মিত ১০ তলা এপার্টমেন্ট, ঢাকা উদ্যানের ২ নাম্বার সড়কের প্লট নং-৩১, সি ব্লকে ৬ কাঠার উপর নির্মানাধীন ১০ তলা এপার্টমেন্ট এবং একই প্রজেক্টের ৩ নাম্বার সড়কের হাউজ নং-২৮, ডি ব্লকে ৪ কাঠা জমির উপর নির্মিত ১০ তলা অত্যাধুনিক আলিশান ভবন। মোহাম্মদপুর লালমাটিয়ার ‘সি’ ব্লকের ২/৮ নম্বর হোল্ডিংয়ের আটতলা ভবনের ৫তলায় স্ত্রী নাদিরা ইয়াসমিন মুক্তার’র নামে রয়েছে অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট।

ঢাকা উদ্যানের পাশে নবীনগর হাউজিংয়ের ১ নম্বর রোডে ৪ কাঠা প্লটের মালিকও বনে গেছেন ফখরুল। তবে সেই প্লট’ও স্ত্রী নাদিরার নামে। সেখানে টিনশেডের ঘর ভাড়া দেওয়া হয়েছে। নবীনগর হাউজিংয়ের প্লট ও লালমাটিয়ার ফ্ল্যাটটি স্ত্রী নাদিরা ইয়াসমিন মুক্তার’র নামে। একাধিক ব্যক্তিগত দামি গাড়িও রয়েছে এই কর্মকর্তা। সরকারি গাড়িও নিজ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

কে এই ফকরুল?
ফকরুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে। ফকরুলসহ তিন ভাই, এক বোন। বড় ভাই ফিরোজ আহমেদ সিটি গ্রুপের এল.পি.জি সেলস এন্ড মার্কেটিং এর পরিচালক। ঢাকার শ্যামলী এলাকায় বাস করেন। ছোট ভাই কম্বোডিয়া তে খামারের ব্যবসা এবং কেমিস্ট। ফকরুলের ছাত্রজীবন; পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক, তারপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সে স্নাতকোত্তর করে। ডজনখানেক ডিগ্রির চাইতে চুরি বিদ্যায়ও কোনো কমতি নেই তার। চোখে সোনালি রঙের চশমা আর সম্পদের বিবরন জানতে চাইলেই যেনো হাত- পা কেঁপে নড়ে বসে। ওয়াসার কর্মজীবনে সাম্রাজ্যের আমলনামার পুরো পাপ’কে কিছুটা শুদ্ধ করে এ বছর স্বপরিবারে হজ্ব পালন করে এসেছেন। হজ্ব শেষে ছেলের সাথে দেখা করতে অস্ট্রেলিয়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও দেশে ফিরেছে ৯ জুলাই।

বড় ছেলে অরিত্র ২০২৩ সালের জুন মাসের ১৮ তারিখ অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছেন ইউ.টি.এস ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করতে। তবে উল্লেখিত সম্পদগুলোর বর্তমান মূল্য শত কোটি টাকা। এছাড়াও নিজ সন্তানদের বিদেশে লেখাপড়া, বিদেশ ভ্রমন, বিলাসবহুল জীবনযাপন, নামে বেনামে বহির্বিশ্বে অর্থ পাচারের অভিযোগও উঠেছে।

জানা যায়, ঢাকা উদ্যান বহুমুখী সমবায় সমিতি ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ সালে। উক্ত নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হয় আবু সায়েম শাহিন, সম্পাদক মোঃ ফজলুল করিম বাদল। শাহিনের প্যানেলে হাতপাখা মার্কায় পরিচালক/সদস্য পদে নির্বাচন করেন ফকরুল ইসলাম। এ পদে তিনি ২৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার সদস্য নং ৮১২। ইঞ্জিঃ ফকরুলের বিষয়ে সমিতিতে অন্যান্য সদস্যরা কেউই তথ্য দিতে রাজি হয়নি।

ঢাকা উদ্যানের ‘ডি’ ব্লকের ৩ নম্বর সড়কের ২৮ নম্বর হোল্ডিং
৪ কাঠার উপর নির্মিত ১০ তলা আলিশান বাড়ির স্থানীয়রা জানান, বাড়িটি ১ বছর যাবত নতুন নির্মাণ করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া, কিছু ফ্ল্যাট বিক্রি করেছে এবং করছে। বাড়িটির তত্ত্বাবধায়ক বলেন, প্রতি তলায় দুটি করে ফ্ল্যাট, ১০ তলার একটি ইউনিটে মালিক ফকরুল ইসলাম থাকেন। এই ভবনটি ফকরুল ইসলামের নিজ মালিকানাধীন। ফ্ল্যাটের সাইজ ১২০০ স্কয়ার ফিট। প্রতি স্কয়ার ফিট ৫ হাজার টাকা (৬ষ্ঠ, ৮ম, ৯ম তলার এক ইউনিট করে বিক্রি হবে)।

ফকরুল বলেন, ’লালমাটিয়ার ফ্ল্যাট আমার চাকরির পূর্বেই শ্বশুরবাড়ী থেকে প্রাপ্ত। তাহলে তো শ্বশুরবাড়ীর লোকজনের আমলনামা পর্যালোচনা করা দরকার করেন’। ‘সরকারী চাকুরীজীবীদের শ্বশুরবাড়ীর লোকজন সবসময় ধনাঢ্য থাকে আর সরকারী চাকুরীজীবী ছেলে দেখে যৌতুক স্বরূপ ফ্ল্যাট, বাড়ী, গাড়ী দিয়ে মেয়ে বিয়ে দেয়।‘সরকারী চাকুরী পেলে রাজ্য ও রাজকন্যা দুটিই একসাথে পাওয়া যায়। ফকরুলের ক্ষেত্রেও হয়েছে।
স্ত্রী নাদিয়া ইয়াসমিন মুক্তা একজন সংগীত শিল্পী। তার আয়ের উৎস কি? এত টাকা কোথা থেকে আসলো। ফকরুল সাহেবের কোন সম্পদই নেই…………!

তার নিজের নামে কোথায়ও কোনো অবৈধ সম্পদ নাই?
ফকরুল জানান, ‘’এই বাড়ি আমরা ৪ ভাই-বোন মিলে করা, ৪ ভাই বোনদের অংশিদার আছে। এই ভবন রাজউক এর অনুমোদন নাই, ফ্ল্যাট ক্রয় করলে সে নিজে রেজিস্ট্রি দিতে পারবে, ফ্ল্যাটের দরদামকালে সে প্রতি স্কয়ার ফিট ৪,৯০০ টাকায় দিতে রাজি হয় এবং একাউন্টে টাকা নিতে নারাজ- ক্যাশ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়, তবে রেজিস্ট্রি খরচ ৩৫০০ দেখাতে বলে। এই ভবনের ২য় তলায় অনিতা ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি অফিস করেছে’’।

সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার
ছুটির দিনেও সরকারি গাড়ি প্রকৌশলীর বাড়ির গ্যারেজে পার্কিং করা থাকে। এই সরকারী গাড়ি দিয়ে ঢাকা উদ্যানের বাড়ি থেকে লালমাটিয়ায় বাসায় চলাচল করতেও দেখা যায় এই কর্মকর্তা’কে। ঢাকা উদ্যানের ৩ নং সড়কের বাড়ির গ্যারেজে দেখা মেলে পার্কিং করা একটি সরকারি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঠ ১৩-৫২২৭)। কিছুক্ষন পর সরকারি গাড়িতেই চলে যায় লালমাটিয়ার বাড়িতে।

নবীনগর হাউজিং প্রকল্পে ৫ নাম্বার সড়কের হোল্ডিং নং: ১২, এফ ব্লক
এবার কেঁচো খুঁড়তে আরেকটি সাপ বেড়িয়ে এলো। নবীনগর হাউজিং এর স্থানীয় সূত্রমতে এবারের গন্তব্য ৫ নাম্বার রোডের ১২ নং কমলা রঙের বাড়ী। সেখানে নিরাপত্তাকর্মী জানায়, ‘ফকরুল স্যার এ বাড়ি অনেক আগেই বিক্রি করে চলে গেছে। এ বাড়ি যৌথ মালিকানায়। অনুসন্ধান আরও গভীরে যেতে ৫ নাম্বার সড়কের একাধিক স্থানীয়দের সূত্র নিশ্চিত করে, ‘এই ভবনটি ফকরুল ইসলামের, তার (ভায়রা- ভাই) শাহরিয়ার পারভেজ লিমন এই বাড়িতে থাকেন। মুলত লিমনের এগ্রোকেয়ারের ব্যবসা। ভবনের মেইন ফটকে ফ্ল্যাট বিক্রির সাইনবোর্ড দেখা মেলে ফ্ল্যাট বিক্রির এবং চাঞ্চল্যকর বিষয় হচ্ছে সকলের চোখ ফাঁকি দিতে বাড়ির মেইন ফটকে সাইনবোর্ডে লেখা ‘এই ভবনটি যৌথ মালিকানায়’। কিন্তু সূত্র আর অনুসন্ধান বলছে, এই ভবনটির নেপথ্যে মূল বিনিয়োগে ইঞ্জি: ফকরুল ইসলাম। দৃশমান অনিতা ইঞ্জিনিয়ারিং কাগজপত্রে (ভায়রা-ভাই) শাহরিয়ার পারভেজ লিমন। অনিতা ইঞ্জিনিয়ারিং এর দ্বিতীয় প্রকল্প নবীনগর হাউজিং এর এই ভবনটি। তবে আমাদের অনুসন্ধান শুধু নবীনগর হাউজিং এর ৫ নাম্বার সড়কের সীমানা পর্যন্তই নয়। যেখানে একটি ভবন তৈরি করতে গেলে (গ্যাস সংযোগকারী মিস্ত্রী-ওয়াসা লাইনের মিস্ত্রী বৈদ্যুতিক কানেকশনের মিস্ত্রীদের) মিস্ত্রী প্রয়োজন হয়। এদের মধ্যেই একাধিক মিস্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘এই ভবন তৈরীর সময় আমরা কাজ করেছি, এটা ফকরুলের বাড়ি’।

ঢাকা উদ্যানের ‘সি’ ব্লকের ২ নম্বর সড়কের ৩১ নম্বর হোল্ডিং
৬ কাঠা উপর ১০ তলা ভবনে নির্মানাধীন অবস্থায় আছে গত ৩ বছর যাবত। স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, এ ভবনটি ফকরুল ইসলামের নিজের। তবে ফকরুল ইসলাম বলছে, এ ভবন বড় ভাই ফিরোজ আহমেদের। ফিরোজ আহমেদ সিটি গ্রুপের এলপিজি লিমিটেডের পরিচালক এবং পেট্রোম্যাক্স এলপিজির সি.ও.ও। এই কর্তা মাস গেলে কতই বা বেতন পান? তারমধ্যে ফিরোজের শ্যামলীতে ফ্ল্যাট কেনা, সন্তানরা বিদেশে পড়াশুনা করছে, বিলাসবহুল জীবনযাপন লীড করছে। পাশাপাশি প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে একটি ১০ তলা বাড়িও নির্মান করছে। তবে এখানেও কি ফকরুলের মোটা অংকের বিনিয়োগ রয়েছে? সূত্র এবং অনুসন্ধান তাই বলছে।

নবীনগর হাউজিংয়ের ১ নম্বর রোডে স্ত্রী’র নামে প্লট
ঢাকা উদ্যানের পাশে নবীনগর হাউজিংয়ের ১ নম্বর রোডে একটি প্লট রয়েছে। সেখানে টিনশেডের ঘর ভাড়া দেওয়া। স্ত্রী নাদিরা ইয়াসমিন মুক্তার নামে ৪ কাঠার এই প্লট’টি।

লালমাটিয়ায় অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট
মোহাম্মদপুর লালমাটিয়ার ‘সি’ ব্লকের ২/৮ নম্বর হোল্ডিংয়ের আটতলা ভবনে বাস করেন ফখরুল। নিরাপত্তাকর্মীর জানায়, নিজের ৫/এ নম্বর ফ্ল্যাটে ফখরুল স্যার পরিবার নিয়ে থাকেন। এই ভবনের নিচে তার একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি সহ সরকারি গাড়িও পার্কিং করা থাকে।

দৃশ্যমান নবীনগর হাউজিং এর ১ টি এপার্টমেন্ট ৬ কাঠার উপর, ঢাকা উদ্যানের ২ টি এপার্টমেন্ট- ১ টি ভবনই ৬ কাঠার উপর নির্মিত। আরেকটি ৪ কাঠা উপর, পাশাপাশি নবীনগর হাউজিং এর ১ নাম্বার রোডের ৪ কাঠা প্লট। এই এলাকাগুলোর প্রতি কাঠা বর্তমান বাজারদর কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই। ইঞ্জি: ফকরুলের যেসব স্থাবর সম্পত্তির তথ্য আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, তা এই কর্মকর্তার পুরো চাকরি জীবনেও অর্জন করা সম্ভব নয়। এই কর্মকর্তার চাকরিতে যোগদানের স্বল্প সময়ের ব্যবধানে অবিশ্বাস্য সম্পদের মালিক বনে গেছেন।

মূলত ফকরুল ইসলাম গনমাধ্যম’কে এড়িয়ে চলেন। তার আমলনামা এতই ভয়ংকর যে নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখেন। তার সাথে যোগাযোগের জন্য নেই কোনো ভিত্তি। ঢাকা ওয়াসা ভবনের উচ্চ মহল থেকে শুরু করে সব টেবিলে টেবিলে নোটিশ করানো ফকরুলের বিষয়ে কেউ কিছু জানতে চাইলে কাউকে কোনো তথ্য দেওয়া নিষেধ।

ব্যবসায়ও সমান পটু :
‘গণকর্মচারী আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯ (সংশোধিত ২০১১) অনুযায়ী সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মকর্তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। ’

এই বিধিমালাকে অনুসরন করেই স্ত্রী’র নামে খুলে বসেছেন রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নাম ‘অনিতা ইঞ্জিনিয়ারিং’। ইঞ্জিঃ ফকরুলের ৩টি ১০ তলা বহুতল ভবন নির্মানে কাজ করেছে ‘’অঁহরঃঃধ ঊহমরহববৎরহম‘’। অনিতা ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রোপ্রাইটর নাদিয়া ইয়াসমিন মুক্তা ফকরুলের স্ত্রী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে বা দুদক তার বিরুদ্ধে তদন্ত করলেও হয়ত লাভ হবে না। কারন ফকরুল ইসলামের মাথার ওপর রয়েছে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের আশির্বাদ। এমডির দাপট দেখিয়ে ওয়াসা ভবনে ধরাকে সরাজ্ঞান করে চলেন ফকরুল। এমডির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হওয়ায় উর্ধবতন কর্মকর্তারাও ফকরুলের বিষয়ে হিসেব করে কথা বলেন।

ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ডালাপালা একধরনের প্রতিষ্ঠানিকভাবে রুপ নিলেও সবাই এখানে কথিত ‘সৎ’ এবং ‘নিষ্ঠাবান’ কর্মকর্তা। অথচ খোঁজ নিলে দেখা যায়, প্রত্যেকেরই রয়েছে বিপুল বিত্ত বৈভব। কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ, বাড়ী, গাড়ী ও বিপুল পরিমান ব্যাংক ব্যালেন্স। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী যেখানে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন, সেখানে প্রকাশ্যে টেন্ডার বাণিজ্য হয়। সেখানে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের দুষ্টচক্র মিলে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন হলেও কেউ কারও বিরুদ্ধে মুখ খোলেন না।


যোগাযোগ

বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যলয়

কাব্যকস সুপার মার্কেট, ৩ ডি কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

মোবাইলঃ ০১৬২২৬৪৯৬১২, ০১৬০০০১৪০৪০

মেইলঃ tadantachitra93@gmail.com, tchitranews@gmail.com

সামাজিক যোগাযোগ

Web Design & Developed By
A

তদন্ত চিত্র কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েব সাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।